শিশু পল্লবীর মৃত্যু কী ভাবে, চলছে বিতর্ক। ছবি: গৌতম প্রামাণিক।
আঁচলে জড়িয়ে হুড়মুড়িয়ে সিঁড়ি দিয়ে নামার সময়েই কান্না জুড়েছিল বাচ্চাটি, ‘‘ও মামি, কোথায় নিয়ে চললা আমায়...।’’
ধোঁয়ায় ঢাকা হাসপাতালে তখন আর রা কাড়ার সময় ছিল না তাঁর। আ়ড়াই বছরের মেয়েটাকে নিয়ে কোনওরকমে নীচে নামতে পারলেই হল, তা আর হয়ে ওঠেনি। মধ্য-কুড়ির লীলাবতী মণ্ডল ডুকরে উঠছেন ফের— ‘‘মেয়েটার শেষ কথাটার জবাবও দিতে পারলাম না গো!’’
হাজারো লোকের ভিড়ে, সিঁড়ি ভাঙার সময়েই আচমকা পা ফস্কে গিয়েছিল তাঁর। বলছেন— ‘‘পিছন থেকে চাপটা অনেকক্ষনই টের পাচ্ছিলাম। আর পারলাম না। হুড়মুডিয়ে মুখ থুবড়ে পড়তেই হাত থেকে ছিটকে গিয়েছিল পল্লবী।’’ তার পর ঘণ্টা পাঁচেক খোঁজ মেলেনি। ভিড়ের চাপে পা ভেঙে গিয়েছিল লীলাবতীরও। উঠতে পারেননি তিনি। পরে যখন খোঁজ পড়ল সেই এক রত্তি মেয়ের, তখন আর সে কোথায়?
পল্লবীর মামা গুণধর বলছেন, ‘‘আমরা যখন মরিয়া হয়ে বাচ্চাটার খোঁজ করছি, তখন এক নার্স এসে চুপি চুপি জানিয়ে দেন, ওই ঘরে রাখা আছে বডিটা!’’ সকাল থেকে দরবার করে সেই ‘বডি’র খোঁজ মিলেছিল বিকেলে। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ স্পষ্ট জানিয়ে দেন— পল্লবী মণ্ডল নামে শিশুটি মারা গিয়েছিল আগুন লাগার অনেক আগেই। হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত সুপার অজয় রায় বিকেলে একই সুরে বলছেন, ‘‘আমার কাছে তো খবর, বাচ্চাটি আগেই মারা গিয়েছিল। অগ্নিকাণ্ডের সঙ্গে তার সম্পর্ক নেই বলেই শুনেছি।’’
কিন্তু আগুন-আতঙ্কে সিঁড়ি দিয়ে নামার সময়ে মামির কোলে যে মেয়ে কেঁদে ককিয়ে ওঠে সে ‘আগেই’ মারা যায় কী করে? শ্বাসকষ্টে ভোগা পল্লবীকে এ দিন সকালেই জেলা সদরে রেফার করেছিল রঘুনাথগঞ্জের সরকারি হাসপাতাল। অ্যাম্বুল্যান্স ভাড়া করে তার মামা-মামি বেলা আটটা নাগাদ তাকে নিয়ে পৌঁছয় বহরমপুরের হাসপাতালে। ভর্তিও করে নেওয়া হয় তাকে। গুণধর জানান, চিকিৎসকেরা জানান, নিউমোনিয়া। বাঁচা মুস্কিল। তবে সে মেয়ে সারাটা সকাল ঘ্যান ঘ্যান করে গেলেও, লীলাবতীর কথায়, ‘‘কান্না ছাড়া আর কোনও অস্বাভাবিকতা চোখে পড়েনি।’’ শিশু বিভাগে, মেয়েটির পাশেই বসে ছিলেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘‘ সাড়ে এগারোটা নাগাদ দেখি জানলা দিয়ে গলগল করে ধোঁয়া। পল্লবীকে কোলে নিয়ে বেরিয়ে আসি।’’ তার পরেই ওই কাণ্ড।
পারিবারিক সূত্রে জানা গিয়েছে, সুতির বাসন্তীপুরের মেয়েটি দিন কয়েক ধরেই রয়েছে মামার বাড়ি লোকাইপুরে। সেখানে তার মা ন’মাসের আর এক শিশু কন্যাকে নিয়ে জেরবার। পল্লবীর শ্বাসকষ্ট শুরু হওয়ায় তাই মামা-মামি’ই তাকে নিয়ে এসেছিল হাসপাতালে।
লীলাবতী বলছেন, ‘‘মেডিক্যাল কলেজে আগুন লেগেছে শুনে লোকাইপুর থেকে গ্রামের লোকেরাও চলে এসেছিল। সবাই মিলে হইচই করায় বিকেলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পল্লবীর দেহ আমাদের হাতে তুলে দেয়। বলে ও তো আগেই মরে গিয়েছিল!’’ তাঁদের অভিযোগ, ইতিমধ্যে পল্লবীর বাবা অভয়কে দিয়ে জোর করে একটি সাদা কাগজে সইও করিয়ে নেন হাসপাতালের কর্তারা। সে কথা অবশ্য মানতে চাননি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। যা শুনে সুতি থেকে আসা সিপিএম নেতা মইনুল হাসান বলছেন, ‘‘কতটা অমানবিক হলে একটা শিশুর মৃত্যুকেও এ ভাবে আড়াল করতে চায় সরকার!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy