উত্তর ও দক্ষিণ, দুই বঙ্গই এ বারের বন্যায় কাহিল হয়েছে খুব। উত্তরে প্লাবনের মোক্ষম ঘা খেয়েছে রেল। প্রায় কুড়ি দিন ধরে বিপর্যস্ত হয়ে রয়েছে ট্রেন চলাচল। আটকে যাওয়া যাত্রীদের গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়ার গুরুদায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছিল বাস। তাতে যাত্রীরা তো উপকৃত হয়েছেনই। লাভের কড়ি ঘরে তুলেছে সরকারের নিগম এবং বেসরকারি সংস্থাগুলিও।
অগস্টের বন্যায় উত্তরবঙ্গের সঙ্গে সড়ক ও রেল, দু’ধরনের যোগাযোগ ব্যবস্থাই ভেঙে প়ড়েছিল। কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল দক্ষিণবঙ্গের সঙ্গে উত্তরের যোগাযোগ। আটকে পড়েন বহু পর্যটক ও নিত্যযাত্রী। দিন কয়েকের মধ্যে সড়ক যোগাযোগ চালু করা গেলেও শনিবার পর্যন্ত বিচ্ছিন্ন ছিল রেল যোগাযোগ। ওই কুড়ি দিনে দুই বঙ্গের যোগাযোগ রক্ষার দায়িত্ব কার্যত বর্তেছিল বাসের উপরেই। সেই দায়িত্ব পালনের সূত্রেই খানিকটা আর্থিক সুরাহা হয়েছে বাসের।
রাজ্য প্রশাসন সূত্রের খবর, উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগম (এনবিএসটিসি) ১৭ অগস্ট থেকে রবিবার পর্যন্ত প্রতিদিন কলকাতা-শিলিগুড়ি রুটে গড়ে ৫৫টি বাস চালিয়েছে। অর্থাৎ শিলিগুড়ি থেকে গড়ে ৫৫টি বাস এসেছে কলকাতায়। এবং একই ভাবে ৫৫টি বাস কলকাতা থেকে শিলিগুড়ি গিয়েছে। তাতে এই ১৭ দিনে এনবিএসটিসি-র টিকিট বিক্রি বাবদ আয় হয়েছে তিন কোটি টাকারও বেশি— যা সাধারণ সময়ের চেয়ে প্রায় ৪০% বেশি।
এনবিএসটিসি সূত্রের খবর, রাস্তা ঠিক হয়ে যাওয়ায় এখন কলকাতা থেকে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে বহরমপুর, মালদহ, রায়গঞ্জ, কিষাণগঞ্জ, ইসলামপুর হয়ে বাস যাচ্ছে শিলিগুড়ি। সাধারণ সময়ে ওই রুটেই যায় দূরপাল্লার বাস। কিন্তু অগস্টে বন্যার দাপটে মালদহ থেকে সরাসরি রায়গঞ্জ যাওয়া যাচ্ছিল না। ইটাহারে পরিস্থিতি খারাপ থাকায় বাসগুলিকে গাজোল, বুনিয়াদপুর, কুশমুন্ডি হয়ে ঘুরে যেতে হচ্ছিল। একই ভাবে কিষাণগঞ্জের একটু আগে ডান দিকে ঘুরে গিয়ে গোশালা মোড় হয়ে শিলিগুড়ি যাচ্ছিল বাস। তাতে বেশি জ্বালানি খরচ হয়েছে। কিন্তু সব ক’টি বাসই যাত্রীতে ঠাসা থাকায় সেই বাড়তি খরচ পুষিয়ে গিয়েছে।
একই ভাবে লাভের মুখ দেখেছে পশ্চিমবঙ্গ পর্যটন উন্নয়ন নিগম। সাধারণ সময়ে শিলিগুড়ি-কলকাতা রুটে দৈনিক একটি বাস চালায় তারা। বন্যার সময়ে তারা প্রতিদিন ৫০ সিটের পাঁচটি করে ভলভো বাস চালিয়েছে। তাতে দু’সপ্তাহে পর্যটন নিগমের আয় হয়েছে প্রায় ১৩ লক্ষ টাকা। নিগমের ম্যানেজিং ডিরেক্টর তন্ময় চক্রবর্তী বলেন, ‘‘এই সময়ে ভলভো বাসগুলির যে-আয় বে়ড়েছে, তা অবশ্যই ইতিবাচক দিক। আমাদের লাভের পরিমাণও ক’দিনে বেড়েছে।’’
বেসরকারি সংস্থা যাতে বাড়তি বাস চালাতে পারে, সেই জন্য অস্থায়ী পারমিটও দিয়েছে রাজ্য।
কলকাতা-শিলিগুড়ি বাস চলাচলের সঙ্গে যুক্ত একটি বেসরকারি সংস্থার কর্ণধার ধনঞ্জয় সিংহ জানান, এই ক’দিন একটির জায়গায় তিনটি করে বাস চালিয়েছেন তাঁরা। তিনি বলেন, ‘‘অত মানুষ আটকে ছিলেন। তাঁদের নিয়ে আসা আমাদের দায়িত্ব ছিল। সরকারের সঙ্গে কথা বলে, বাড়তি ভাড়া না-নিয়ে যাত্রীদের পৌঁছে দেওয়ার কাজ করেছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy