বাগডোগরায় গুরুঙ্গ। নিজস্ব চিত্র।
দিল্লি সফর সেরে দার্জিলিং ফেরার মুখে ফের নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করলেন বিমল গুরুঙ্গ। গোর্খা লিগ নেতা মদন তামাঙ্গের খুনের মামলায় সিবিআই-র চার্জশিটে নাম ওঠার পরে কিছুদিন প্রকাশ্যে কোনও কথা বলেননি গুরুঙ্গ। তবে মুখ্যমন্ত্রীর পাহাড় সফরে তাঁর সঙ্গে দেখা করে ফেরার সময়ে নিজেদের নির্দোষ বলে দাবি করেন মোর্চা সভাপতি। এবার ফের সে কথার পুনরাবৃত্তি করলেন। মঙ্গলবার বিকালে দিল্লি থেকে বাগডোগরা আসার শেষ বিমানে গুরুঙ্গ সপার্ষদ জেলায় ফেরেন। সন্ধ্যায় তিনি দার্জিলিং রওনাও হয়ে যান।
আজ, বুধবার কলকাতায় আদালতে খুনের মামলা, গ্রেফতারি পরোয়ানা নিয়ে ফের শুনানি হবে। তার ২৪ ঘণ্টা আগে গুরুঙ্গের এই মন্তব্য যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলে পাহাড়ের রাজনৈতিক মহল মনে করছে। এদিকে এ দিন দুপুরে দার্জিলিঙের বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে গিয়ে মামলার ন্যায় বিচার চেয়ে প্রার্থনা করেছেন গোর্খা লিগ সভানেত্রী ভারতী তামাঙ্গ।
বিমানবন্দরে খুনের মামলা প্রসঙ্গে মোর্চা সভাপতি গুরুঙ্গ বলেন, ‘‘গোটাটাই আদালতের বিষয়। শুধু এতটুকু বলব, আমরা পুরোপুরি নির্দোষ। আমাদের শাস্তি দিয়ে কী হবে? আমরা আইন শৃঙ্খলার কোনও বিষয়ের মধ্যে নেই।’’ গত ২৫ জুন তিন সঙ্গীকে নিয়ে দিল্লি যান মোর্চা সভাপতি। কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে পাহাড়ের উন্নয়ন নিয়ে আলোচনা করতেই দিল্লি গিয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন। তবে কাদের সঙ্গে দেখা করেছেন, তা নিয়ে কিছু বলতে চাননি।
গত ২৯ মে সিবিআই কলকাতার প্রিন্সিপাল ডিস্ট্রিক্ট অ্যান্ড সেশন জজের আদালতে মদন তামাঙ্গ মামলার চূড়ান্ত চার্জশিট দাখিল করে। তাতে ২৩ জন মোর্চা নেতা-নেত্রীর নাম রয়েছে। ওই ২৩ জনের মধ্যে মোর্চা সভাপতি তথা জিটিএ চিফ গুরুঙ্গ ছাড়াও মোর্চার শীর্ষ নেতা রোশন গিরি, বিনয় তামাঙ্গ, প্রদীপ প্রধান, রমেশ আলে, হরকা বাহাদুর ছেত্রী, আশা গুরুঙ্গের নামও রয়েছে। আদালত অভিযুক্তদের নামে গ্রেফতারি পরোয়ানাও জারি করে। এর বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আবেদন জানান মোর্চা নেতারা। আদালত সিবিআইকে নতুন করে তদন্ত রির্পোট জমা দিতে বলায় আপাতত কিছুটা স্বস্তিতে মোর্চা নেতৃত্ব।
ইতিমধ্যে গোর্খা লিগের তরফে অভিযুক্তদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়। গোর্খা লিগ ছাড়া, জিএনএলএফের মত মোর্চা বিরোধী দলগুলি মিলে ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টও গড়ে তোলে। এমনকি, সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রীর পাহাড় সফরের আগে চৌরাস্তার হাওয়া মহলে অনশনে বসেন গোর্খা লিগের সভানেত্রী তথা মদন তামাঙ্গের স্ত্রী ভারতী দেবীও। তবে গত একমাসে মামলা, চার্জশিট নিয়ে একবারও মুখ খোলেননি গুরুঙ্গ। দলের তরফে অন্য নেতারাও বিষয়টি বিচারাধীন বিষয়, আইন আইনের পথে চলবে বলে এড়িয়ে গিয়েছেন।
গুরুঙ্গের এ দিনের মন্তব্যকে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি গোর্খা লিগ নেতারা। দলের সাধারণ সম্পাদক প্রতাপ খাতি’র বক্তব্য, ‘‘বিমল গুরুঙ্গ ফিরে এসেছেন। এটাও বড় ব্যাপার। আমরা আশঙ্কা করছিলাম, উনি পাহাড়ে আর আসবেন না। কেউ কোনও মামলায় নিজেকে নির্দোষ বলতেই পারেন। আসলটা কী তা তো আদালতে প্রমাণ হবে। সিবিআই খুনের মামলার তদন্তে কিছু পেয়েছে বলেই তো চার্জশিটে ২৩ জনের নাম দিয়েছে।’’
উল্লেখ্য, ২০১০ সালের ২১ মে সকালবেলায় ক্লাব সাইড রোডে সভার প্রস্তুতির সময় খুন হন মদন তামাঙ্গ। ওইদিন রাতে গোর্খালিগের তরফে অভিযোগ দায়ের করা হয়। প্রথম পুলিশ এবং পরে সিআইডি তদন্তে নামে। একদফায় ৩১ জনের নামে চার্জশিট, ধরপাকড়ও হয়। পরবর্তীতে গোর্খা লিগের আবেদনের ভিত্তিতে ২০১১ নভেম্বর মাসে আদালত মামলা সিবিআই-র হাতে তুলে দেয়।
গত সোমবারই কার্শিয়াঙের গিদ্দাপাহাড়ের সার্কিট হাউসে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের শাখা অফিসের উদ্বোধন করেছেন মন্ত্রী গৌতম দেব। রাতেই জিটিএ এলাকায় হস্তক্ষেপের অভিযোগ তুলে মামলার হুমকি দেন মোর্চা নেতারা। মোর্চা সভাপতি এদিন বলেন, ‘‘আমরা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে এদিন চিঠি দিয়ে সমস্ত কিছু জানিয়েছি। জিটিএ এলাকায় এভাবে দফতর খোলাটা ঠিক নয়। নইলে তো আবার আমাদের আইনের পথে যেতে হবে।’’
গুরঙ্গের সঙ্গে দিল্লি যান জিটিএ সভাসদ বিনয় তামাঙ্গ, অনিত থাপা, পিটি ওলা। সেখানে আগে থেকেই ছিলেন দার্জিলিং পুরসভার চেয়ারম্যান অমর সিংহ রাইও। ফেরার পর জিটিএ সদস্য তথা মোর্চার সহকারি সম্পাদক বিনয় তামাঙ্গ বলেন, ‘‘দিল্লির বিষয় নিয়ে এখনই কিছু বলছি না। সময় মত সব আমরা জানাব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy