Advertisement
০৮ মে ২০২৪

রাজ্যের উপর চাপ বাড়াচ্ছেন গুরুঙ্গও

সারদা-কাণ্ড নিয়ে জেরবার রাজ্য সরকারের উপরে চাপ বাড়াতে আসরে নেমে পড়লেন গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার প্রধান বিমল গুরুঙ্গও। সোমবার জিটিএ প্রধান গুরুঙ্গ দার্জিলিংয়ে গোর্খা রঙ্গমঞ্চে রাজ্যের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়ে সরাসরি জিটিএ চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছেন। কর্মসংস্থান বাড়াতে ভবিষ্যতে সমতল থেকে মিনারেল ওয়াটার ও পোলট্রিজাত পণ্য পাহাড়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জারি করতে পারেন বলেও এ দিন ফতোয়া দিয়েছেন গুরুঙ্গ।

গোর্খা রঙ্গমঞ্চের অনুষ্ঠানে বিমল গুরুঙ্গ। ছবি: রবিন রাই

গোর্খা রঙ্গমঞ্চের অনুষ্ঠানে বিমল গুরুঙ্গ। ছবি: রবিন রাই

নিজস্ব সংবাদাদাতা
দার্জিলিং ও শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:২২
Share: Save:

সারদা-কাণ্ড নিয়ে জেরবার রাজ্য সরকারের উপরে চাপ বাড়াতে আসরে নেমে পড়লেন গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার প্রধান বিমল গুরুঙ্গও। সোমবার জিটিএ প্রধান গুরুঙ্গ দার্জিলিংয়ে গোর্খা রঙ্গমঞ্চে রাজ্যের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়ে সরাসরি জিটিএ চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছেন। কর্মসংস্থান বাড়াতে ভবিষ্যতে সমতল থেকে মিনারেল ওয়াটার ও পোলট্রিজাত পণ্য পাহাড়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জারি করতে পারেন বলেও এ দিন ফতোয়া দিয়েছেন গুরুঙ্গ।

গুরুঙ্গের দাবি, জিটিএ-র অধিকারে হস্তক্ষেপ করছে রাজ্য সরকার। যেমন, যে সব রাস্তা দেখভাল করা জিটিএ-র দায়িত্ব, তার কয়েকটি ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারই টেন্ডার ডেকেছে। পাহাড়ের শিক্ষার্থীদেরও সাইকেল ও অর্থ বিলি করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু পাহাড়ে শিক্ষা দফতরটি জিটিএ-র আওতাভুক্ত। মুখ্যমন্ত্রী কন্যাশ্রীর চেকও পাহাড়ে গিয়ে বিলি করেছেন। গুরুঙ্গের দাবি, জিটিএ-র মাধ্যমেই এই সব কাজ করানো উচিত।

রাজ্যের বিরুদ্ধে জিটিএ-র অধিকারে হস্তক্ষেপের অভিযোগ এনে ইতিমধ্যেই কলকাতা হাইকোর্টে একটি মামলা হয়েছে। জিটিএ সদস্য পেম্বা শেরিং ওলা ওই মামলা দায়ের করেন। তাঁর অভিযোগ, পাহাড়ে জিটিএ-র আওতায় থাকা ৩টি রাস্তা সারানোর জন্য টেন্ডার করে কাজ শুরুর নির্দেশ দিয়েছে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতর। কিন্তু সোমবার উচ্চ আদালতে সরকারি আইনজীবী জানান, তিনটি রাস্তা তৈরির ব্যাপারে শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি ডেভেলপমেন্ট অথরিটি ইতিমধ্যেই ‘ওয়ার্ক ওর্ডার’ ইস্যু করেছে। সেই কাজ করা হয়েছে নিয়ম মেনেই। তাঁর দাবি, ওই রাস্তাগুলি কেন্দ্রীয় প্রকল্পের। রাস্তা তৈরির টাকা সরাসরি জেলাশাসকের কাছে পৌঁছবে। কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি নাদিরা পাথেরিয়া সোমবার নির্দেশ দেন, রাস্তা তৈরির ব্যাপারে হলফনামা দেবে রাজ্য সরকার। সেই হলফনামা পাওয়ার পরে জিটিএ পাল্টা হলফনামা দেবে। মামলাটির পরবর্তী শুনানি হবে পুজোর ছুটি শেষ হওয়ার এক সপ্তাহ বাদে। সেই হিসেবে এখন ওই রাস্তাগুলির কাজ করাতে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের কোনও অসুবিধে নেই। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, “আমরা শীঘ্রই ওই তিনটি রাস্তার কাজ করব। পাহাড়ের বেশির ভাগ মানুষ এটাই চান।”

মোর্চার সভাপতির বক্তব্য, পাহাড়ে সবই রাজ্য সরকার করবে। তা হলে জিটিএ গড়ার অর্থ কী? গুরুঙ্গ বলেন, “জিটিএ স্বশাসিত সংস্থা। অথচ মুখ্যমন্ত্রী এমন নানা কাজ করছেন যাতে মনে হচ্ছে জিটিএ অপ্রাসঙ্গিক। এ তো স্পষ্ট চুক্তি ভঙ্গ।” তিনি জানান, জিটিএ ঠিকঠাক চালাতে না দিলে তাঁরা আইনি লড়াই চালিয়ে যাবেন। সেই সঙ্গে ফের রাজ্যের বিরুদ্ধে লাগাতার আন্দোলনেও নামবেন তাঁরা।

সেই সঙ্গেই পাহাড়ে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করতে সমতলের উপরে নির্ভরশীলতা কমানোর উপরে জোর দিয়েছেন গুরুঙ্গ। এদিন তিনি দার্জিলিং, কালিম্পং, কার্শিয়াং ও মিরিকে মিনারেল ওয়াটার ও পোলট্রি তৈরির প্রকল্পের সূচনা করেছেন। সব মিলিয়ে জিটিএ এ বাবদ প্রায় ৪ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। গুরুঙ্গ বলেছেন, “পাহাড়ে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করতে হবে। মিনারেল ওয়াটার ও পোলট্রিজাত পণ্য পাহাড়েই উৎপাদিত হলে সমতলের উপরে নির্ভর করতে হবে না।” এর পরেই তিনি বলেন, “তেমন হলে পাহাড়ে সমতল থেকে মিনারেল ওয়াটার ও পোলট্রিজাত পণ্য আনতে দেওয়া হবে না।”

জিটিএ প্রধানের এই ‘ফতোয়া’ প্রসঙ্গে তৃণমূলের পাহাড় শাখার মুখপাত্র বিন্নি শর্মা বলেন, “গুরুঙ্গের এই মন্তব্য ঠিক নয়। এতে ব্যবসায়ীদের সাংবিধানিক অধিকার লঙ্ঘিত হবে। এতে পাহাড়-সমতলের মধ্যে ভেদাভেদ, বিদ্বেষ তৈরির আশঙ্কাও থাকবে।” তৃণমূলের পাহাড় শাখার সভাপতি এন বি খাওয়াসও জানান, রাজ্য জিটিএ-এর অধিকারে হস্তক্ষেপ করে না। বরং সহযোগিতা করে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

gta bimal gurung
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE