বিকেল পাঁচটা দশ। হঠাৎ নেপাল থেকে হায়দরাবাদ হয়ে খড়দহে ভেসে এল খবরটা। ‘‘একটু আগেই এক বার কেঁপে উঠল মাটি।’’
নেপালে তো বিপর্যয়ের পর টেলি যোগাযোগ ব্যবস্থা কার্যত বসে গিয়েছে। তা হলে এই খবরটা তড়িঘড়ি এল কী করে?
খবরটা এসেছিল হ্যাম রেডিও মারফত। কারণ, নেপালের প্রত্যন্ত এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন এ রাজ্যেরই চার বাসিন্দা। ওয়াকিটকি হাতে ভূকম্প বিধ্বস্ত এলাকায় ঘুরে ঘুরে খবর পৌঁছে দিচ্ছেন প্রশাসনের কাজে। যে খবরের উপরে অনেকটা ভিত্তি করে চলছে ত্রাণ ও উদ্ধারের কাজ।
এই চার বাঙালির ‘বায়োডে়টা’ কিন্তু আর পাঁচ জনের মতোই সাধারণ। কেউ রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার চাকুরে, কারও বা ডিটিপি-র ব্যবসা। কিন্তু কোথাও দুর্যোগের খবর শুনলেই বদলে যায় তাঁদের চেহারা। শুধু এই চার জনই নয়, কমবেশি এমন ভাবেই কাজ করেন এ রাজ্যের পশ্চিমবঙ্গ রেডিও ক্লাবের চার সদস্যরা। তাই নেপালের খবর শুনে বহু কাঠখড় পুড়িয়ে দিল্লি যান ওই সংগঠনের চার সদস্য অম্বরীশ নাগ বিশ্বাস, অসিত দাস, অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় এবং গৌরাঙ্গ বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখান থেকে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী (এনডিআরএফ) এবং বেসরকারি বিমানসংস্থা স্পাইসজেটের সাহায্যে নেপাল পাড়ি। সেখানে পৌঁছনো ইস্তকই লেগে পড়েছেন উদ্ধার-কাজে।
প্রসঙ্গত, ফি বছর গঙ্গাসাগর মেলাতেও এ ভাবেই কাজে লেগে পড়েন অম্বরীশেরা। গত বছর অন্ধ্র উপকূলে আছড়ে পড়া ঘূর্ণিঝড় হুদহুদের ক্ষেত্রেও উত্তর ২৪ পরগণায় কন্ট্রোল রুম খুলেছিলেন এ রাজ্যের হ্যাম অপারেটররা।
পশ্চিমবঙ্গ হ্যাম রেডিও অপারেটরদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, নেপালে ভূমিকম্পের খবর পাওয়ার পর থেকেই সে দেশে যাওয়ার জন্য উঠেপড়ে লেগেছিলেন তাঁরা। এ ব্যাপারে কলকাতার নেপাল দূতাবাস এবং রাজ্য প্রশাসনের কর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগও করেছিলেন সংগঠনের এক দল সদস্য। সংগঠনের সদস্য অমৃতা মুখোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘এখান থেকে দিল্লি পৌঁছে দেওয়ার জন্য আর্জি জানিয়েছিলাম। কিন্তু সেটাও মেলেনি।’’ শেষে সাধারণ ভাড়ার থেকে বেশি ভাড়া দিয়ে হাওড়া-দিল্লি প্রিমিয়াম এক্সপ্রেসের চারটি টিকিট কাটেন সদস্যরা। তা নিয়েই গত মঙ্গলবার দিল্লি রওনা দেন ওই চার জন। অমৃতা বলছেন, ‘‘এই কাজে আমরা কোনও টাকা পাই না। তাই নিজেরাই কষ্টেসৃষ্টে টাকা জোগাড় করে ওই টিকিট কেটেছি। এখনও টাকা জোগাড়ের কাজ চলছে।’’
তবে সঙ্কটের এই ছবিটা বদলে গিয়েছিল গত বুধবার দিল্লি পৌঁছতেই। জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী (এনডিআরএফ) বাহিনীর সহায়তায় অম্বরীশদের থাকার ব্যবস্থা হয়। গত বৃহস্পতিবার স্পাইসজেট নিখরচায় কাঠমান্ডু পৌঁছে দেয় অম্বরীশদের। তার পর থেকেই ভারতীয় দূতাবাস ও সেনার সঙ্গে যৌথ ভাবে সেখানে কাজ করছেন তাঁরা। দূতাবাসেই হ্যাম রেডিও স্টেশন খুলেছেন তাঁরা।
হ্যাম রেডিও অপারেটরেরা জানান, তেলঙ্গানার ৪ জন অপারেটর আগে থেকেই সেখানে ছিলেন। তাদের সঙ্গে মিলে কাজ আরও জোরালো করেছেন অম্বরীশেরা। কাঠমান্ডু পৌঁছে অম্বরীশ কন্ট্রোল রুমের দায়িত্ব নেন। বাকি তিন জন বাঙালি চলে যান গোর্খা এলাকায়। এক-একটি জায়গায় ঘুরে ঘুরে সেখানকার খবর পৌঁছে দিচ্ছেন তাঁরা। নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন হায়দরাবাদের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ অ্যামেচার রেডিও-র মূল কন্ট্রোল রুমের সঙ্গে। সেখান থেকেই খবর পাচ্ছেন অমৃতারা। তিনি জানান, রবিবার অম্বরীশ এবং এক তেলুগু অপারেটর ভূকম্প বিধ্বস্ত বরাপাকে গিয়েছেন। সেখানে কোনও যোগাযোগ ব্যবস্থা নেই। ওই এলাকার খবর এ দিন প্রশাসনের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন অম্বরীশেরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy