Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

রোদে হিট স্ট্রোক হতে পারে গরুর

গরমে গবাদি পশু-পাখিরা মহা বিপদে। মুখ ফুটে কিছু বলতে পারে না বলে ওদের সমস্যাটা বেশি। কখনও টানা রোদ, কখনও জলের অভাবে প্রাণ ওষ্ঠাগত।

সুকান্ত বিশ্বাস
শেষ আপডেট: ০৪ মে ২০১৬ ০২:৩৩
Share: Save:

গরমে গবাদি পশু-পাখিরা মহা বিপদে। মুখ ফুটে কিছু বলতে পারে না বলে ওদের সমস্যাটা বেশি। কখনও টানা রোদ, কখনও জলের অভাবে প্রাণ ওষ্ঠাগত। গরমে অধিকাংশ জলাশয়ের জল শুকিয়ে এসেছে। গা ডুবিয়ে স্নান তো দূর, জলপানের জন্য ঠোঁটও ডুবছে না কোথাও কোথাও। এছাড়া হিট স্ট্রোক, নাক দিয়ে রক্ত পড়া, পেট ফোলা উপসর্গ দেখা যায়।

হিট স্ট্রোক

এই সময় গ্রামাঞ্চলে গবাদি পশুকে মাঠে চরালে বা বলদকে হালচাষের জন্য ব্যবহার করলে টানা রোদে সান স্ট্রোক বা হিট স্ট্রোকের সম্ভাবনা থাকে। খুব গরম হাওয়া বইছে যখন, তখন গবাদি পশুকে বেঁধে রাখলেও হিট স্ট্রোক হতে পারে।

হিট স্ট্রোক হলে দেহের স্বাভাবিক তাপমাত্রা প্রচণ্ড বেড়ে যায়, মুখ দিয়ে লালা পড়ে, শ্বাস-প্রশ্বাস বেড়ে যায় এবং অনেক সময় প্রাণীটি মারা যায়।

বাঁচাতে চাইলে দ্রুত ওই প্রাণীকে ঠান্ডা জায়গায় নিয়ে গিয়ে ঠান্ডা জলে স্নান করাতে হবে। বিশেষ করে মাথায় ঠান্ডা জল ঢালতে হবে। মাথায় বরফ ঘষলেও ভাল ফল পাওয়া যায়। দেহের তাপমাত্রা কিছুক্ষণ অন্তর মেপে দেখতে হবে কমল কি না।

অ্যান্টিহিস্টামিন জাতীয় ওষুধ এবং লারগাকটিল জাতীয় ইনজেকশন দিলে তাপমাত্রা কিছুটা কমে যায়। অনেকক্ষণ ধরে প্রাণীটির প্রস্রাব না হলে নর্মাল স্যালাইন বা রিনগার ল্যাকটেট জাতীয় স্যালাইন নির্দিষ্ট মাত্রায় শিরাতে ইনজেকশন দিলে দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবে আক্রান্ত প্রাণী।

নাক দিয়ে রক্ত

প্রচণ্ড দাবদাহে অনেক সময় গরু-মোষের নাকের শিরা ছিঁড়ে গিয়ে বা নাকের গর্ত থেকে রক্ত ঝরতে পারে। কখনও অল্প কখনও বা বেশি। এটা বন্ধ করার জন্য প্রাণীর মাথায় ও নাকের উপরে প্রচুর পরিমাণে ঠান্ডা জল ঢালতে হবে এবং নাসারন্ধ্রে এপিনেফ্রিন সলিউশন (১:৫০,০০০) ফোঁটা ফোঁটা করে বা তুলোয় ভিজিয়ে লাগাতে হবে। ফিটকিরির জল স্প্রে বা অ্যাড্রিনালিন দ্রবণ গজে ভিজিয়ে নাকের মধ্যে ঢুকিয়ে রাখা যেতে পারে। রক্ত বন্ধ হওয়ার ওষুধ যেমন ক্রোমোস্ট্যাট ইনজেকশন (গরু, মহিষ ১৫-২০ মিলি/ ছাগল, ভেড়া ২-৫ মিলি) দিতে হবে। ভিটামিন কে ইনজেকশন ও ক্যালসিয়াম (বোরোগ্লুকোনেট) দেওয়া যেতে পারে রক্তপাত বেশি হলে।

ছায়ায় রাখুন

প্রতি দিন সকাল ১০-১১টা থেকে বিকেল ৪টে পর্যন্ত গবাদি পশু-পাখিকে বেঁধে রাখার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে। কোনও ভাবেই চড়া রোদে বেঁধে রাখা যাবে না। ছায়াযুক্ত জায়গা বাছতে হবে এবং সময়ের সঙ্গে ছায়া কোন দিকে সরছে, সেটাও মাথায় রাখতে হবে। প্রাণী রোদে থাকলে তাকে ছায়ায় আনার আধ ঘণ্টা পর জল খাওয়াতে হবে। সঙ্গে-সঙ্গে নয়।

পরিষ্কার জল

এই সময় গবাদি পশু-পাখিকে নালা-নর্দমা বা পুকুরের জল না দিয়ে পরিষ্কার জীবাণুমুক্ত জল খেতে দিতে হবে। সেটা একান্ত না পারলে নালা পুকুরের জলকে থিতিয়ে নিয়ে পরিমাণ মতো ফিটকিরি বা পটাশ দিয়ে শোধন করে নিতে হবে।

হাঁস-মুরগি

• মুক্তাঙ্গন প্রথায় পালিত হাঁস-মুরগির ক্ষেত্রেও জীবাণুমুক্ত অবস্থায় পরিষ্কার খাবার -জল সরবরাহ করতে হবে। দুপুর বেলা যতটা সম্ভব ছায়ায় রাখার চেষ্টা করতে হবে।

• ব্রয়লার,ডিম পাড়া মুরগি ডিপলিটার পদ্ধতিতে পালন করলে ঘরে ফ্যান লাগিয়ে দিন।

•স্যালাইন বা গুড়-লবণ মিশ্রিত জল দিনের বেলায় দেওয়া দরকার।

•খামারের চারপাশে পর্যাপ্ত গাছ লাগালে ভাল ছায়া মেলে।

•গবাদি পশু-পাখির ঘর স্বল্প খরচে টালি আর খড় দিয়ে বানালে বেশি ঠান্ডা থাকে।

এই রকম গরম প্রতি বছরই হবে। তাই প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিয়ে ক্ষতি এড়ানোই বুদ্ধিমানের কাজ।

লেখক: দক্ষিণ দিনাজপুর কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রের বিজ্ঞানী ও প্রধান।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE