দীর্ঘ দু’দশকের অপেক্ষার অবসান হতে বাকি আর দু’সপ্তাহ। আগামী ২৯ মার্চ থেকে বাগডোগরা বিমানবন্দরে চালু হতে চলেছে ইনস্ট্রুমেন্টাল ল্যান্ডিং সিস্টেম বা আইএলএস পরিষেবা। তার জেরেই দু’বেলা সাত সকালে কলকাতা থেকে বিমান চালানোর সময়সূচির জোরকদমে খোঁজখবর শুরু করে দিয়েছে বিমান সংস্থাগুলি।
এখন বেলা সাড়ে ১১টার পর কলকাতা থেকে প্রথম বিমানটি বাগডোগরায় আসে। বিমানবন্দর সূত্রের খবর, আইএলএস চালু হলেই ১৬ ঘণ্টার বিমানবন্দর হিসেবে কাজ করবে বাগডোগরা। এতেই উৎসাহিত হয়ে খোঁজখবর শুরু করেছে বিমান সংস্থাগুলি। তিনটি সংস্থার কথাবার্তা এখনও চূড়ান্ত কিছু না হলেও এয়ারপোর্ট অথরিটি অব ইন্ডিয়ার (এআইআই) অফিসারদের আশা, একবার আইএলএস চালু হলে নতুন বিমানের সূচি চূড়ান্ত হয়ে যাবে।
বিমানবন্দর অধিকর্তা রাকেশ সহায় বলেন, ‘‘প্রযুক্তি থেকে পরিকাঠামো, কাজ সব শেষ। ২৯ মার্চ বাগডোগরা বিমানবন্দরে নতুন পালক জুড়ে যাবে।’’ তিনি জানান, আইএলএসের জন্য আলাদা কোনও অনুষ্ঠান রাখা হয়নি। ওই দিন সকাল থেকেই আইএলএস পরিষেবা চালু করে দেওয়া হবে। সে দিন প্রতিটি বিমান নামা-ওঠার সময়েই এই প্রযুক্তির ব্যবহার করা হবে।
আইএলএস কী
• পাইলটদের সঠিক দৃশ্যমানতা বজায় রাখার অত্যাধুনিক প্রযুক্তি।
• রানওয়ের দু’পাশে অ্যাপ্রোচ লাইট ধরেই বিমান নামবে।
• কুয়াশা বা অন্ধকারে বিমান নামার উপযোগী প্রযুক্তি।
• খুব ভোরে বা রাতের যে কোনও সময়ে অনায়াসে নামবে বিমান।
• আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের অন্যতম নির্ধারক।
বাম আমলে বিমানবন্দরে রাতের বিমান ওঠানামার ব্যবস্থা করার চেষ্টা শুরু হয়। কিন্তু জমি জটে আটকে যায় বাম সরকার। মন্ত্রী থেকে আমল— সকলেই চেষ্টা করেন। কিন্তু জট কাটাতে পারেননি। ২০১১ সালে তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় এলে তৎকালীন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবকে বিষয়টি দেখার দায়িত্ব দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আইএলএসের জন্য প্রয়োজনীয় ২৪.১ একরের জমি খোঁজ শুরু হয়। বায়ুসেনা ৯.৯৭ একর জমি দেয়। বাকি ১৪.১৯ একরের মধ্যে ক্ষতিপূরণ দিয়েই প্রথম দফায় ১২.৯১ একর মেলে। বাকি জমির জন্য প্রায় ২ বছর অপেক্ষা করতে হয় সরকার। গত বছর সেই জট কাটে।
এর জন্য অফিসার-কর্মীদের সংখ্যা ধাপে ধাপে বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে এএআই। বর্তমানে ১৪৮ জন সিআইএসএফ অফিসার ও জওয়ান বিমানবন্দরের নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছেন। সংখ্যাটা বাড়িয়ে ২১৮ জন করা হচ্ছে। অফিসারেরা জানান, বাগডোগরায় সবচেয়ে আধুনিক ক্যাট-২ আইএলএস পরিষেবা বসানো হয়েছে। এখন বিমান ওঠানামার জন্য চালকদের ১২০০ মিটার থেকে ২১০০ মিটার দৃশ্যমানতার প্রয়োজন হয়। শীতের সময়, বর্ষায় আবহাওয়া বাধ সাধলে বিমান বাতিল বা ঘুরিয়ে দেওয়ার ঘটনা বিরল নয়। আইএলএস চালু হলে এই ক্ষেত্রে দৃশ্যমানতা ৩৫০ মিটারে নেমে আসবে।
বর্তমানে প্রতিদিন বিমানবন্দর থেকে ২২ জোড়া বিমান ওঠানামা করে। সপ্তাহে দু’দিন ব্যাঙ্কক-পারো’র মধ্যে যাতায়াতকারী আন্তর্জাতিক বিমানটিও বাগডোগরা হয়ে যায়। যাত্রী সংখ্যা মার্চের শেষে ২০ লক্ষ ছাড়াচ্ছে। এখন বিমানবন্দর সকাল ১১টা থেকে ৭টা অবধি চালু থাকে। তা পরিবর্তন হয়ে ভোর ৬টা থেকে ১০টা অবধি বিমানবন্দর চালু থাকবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy