স্বাধীনতার সত্তর বছর পরেও ব্রিটিশ শাসকদের স্মৃতির বোঝা কাঁধে নিয়ে চলাটা তাঁর একেবারেই অপছন্দ। রাজভবনের অন্দরমহল থেকে তাই ইংরেজ আমলের নামফলক একে একে বিদায় দিতে চাইছেন রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী। প্রশাসন সূত্রে খবর, রাজভবনের ঐতিহ্যবাহী চারটি স্যুইটের নাম ছিল সাবেক ব্রিটিশ গভর্নর জেনারেলদের নামে। সে সব বদলে এগুলির দেশীয় নামকরণ করা হয়েছে।
রাজভবনের এক মুখপাত্রের কথায়, ‘‘১৮০৩ সালে রাজভবন নির্মাণের পর থেকে অনেক কিছুই বদলেছে। আবার বেশ কিছু অপরিবর্তিতও ছিল। ব্রিটিশ শাসকদের নামে রাজভবনের বিভিন্ন কক্ষের নাম বহাল থাকুক, বর্তমান রাজ্যপাল এটা চাননি। তাই নাম বদলানো হয়েছে। নতুন নামকরণ করেছেন রাজ্যপাল নিজেই।’’
রাজভবনে অতিথিদের জন্য চারটি স্যুইট রয়েছে। দোতলার উত্তর-পশ্চিমে সব চেয়ে বিলাসবহুল স্যুইটির নাম ছিল ‘প্রিন্স অব ওয়েলস’। ১৯২১ সালে ব্রিটেনের যুবরাজ এডওয়ার্ড কলকাতা এসেছিলেন। তাঁর নামেই হয়েছিল নামকরণ। এই স্যুইটে তিনটি শোয়ার ঘর, বসার ঘর এবং খাবার ঘর রয়েছে। নীল আর হলদে আভায় সাজানো এই স্যুইটে রাষ্ট্রপতি, উপরাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী বা অন্য দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা কলকাতায় এলে ওঠেন। রাজ্যপাল এই স্যুইটটির নাম দিয়েছেন ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কক্ষ’।
১৯৩২ থেকে ’৩৭ সাল পর্যন্ত ব্রিটিশ গভর্নর স্যার জন আন্ডারসনের নামে যে স্যুইটটি ছিল, রাজ্যপাল তার নাম বদলে করেছেন ‘স্বামী বিবেকানন্দ কক্ষ’। রাজভবনটি তৈরি করেছিলেন লর্ড ওয়েলেসলি। ১৯০৫ সাল পর্যন্ত তিনি এই রাজভবনে বসবাসও করেছিলেন। একটি স্যুইট ছিল তাঁর নামেও। রাজ্যপাল সেটির নতুন নাম দিয়েছেন ‘সাগর কক্ষ’। ‘কাঞ্চনজঙ্ঘা কক্ষ’-এ পরিণত হয়েছে ডাফরিন স্যুইট। ১৮৮৪ থেকে ’৮৮ সাল পর্যন্ত গভর্নর জেনারেল ছিলেন লর্ড ডাফরিন। রাজ্যপাল নিজে যে স্যুইটে থাকেন, তার অবশ্য কোনও ব্রিটিশ নাম কখনও ছিল না।
রাজভবনের খবর, একতলায় একটি স্যুইটে লাটসাহেবদের সহকারীদের থাকার ব্যবস্থা ছিল। ব্রিটিশ প্রশাসন সেটির নাম দিয়েছিল ‘সেকেন্ড ক্লাস স্যুইট’। এ কথা জেনে বিস্ময় প্রকাশ করে কেশরীনাথ জানিয়ে দিয়েছেন— ইংরেজ আমলের সেই মনোভাব থেকে বেরোতে হবে রাজভবনকে। সেটির নতুন নাম হয়েছে ‘ভূতল কক্ষ’।
রাজভবনে এই পাঁচটি স্যুইট ছাড়াও থ্রোন রুম, মার্বেল রুম, দ্য গভর্নরস স্টাডি, কাউন্সিল চেম্বার, ব্রাউন ডাইনিং অ্যান্ড ব্লু ড্রয়িং রুম রয়েছে। কিন্তু এগুলি সে ভাবে ব্রিটিশ স্মৃতিবাহী নয় বলেই মনে করছেন রাজ্যপাল। তাই নাম বদলও হয়নি।
তবে নাম বদলানোর পরে এখনও পুরনো নামেই অনেকে কক্ষগুলিকে ডাকায় মন খারাপ কর্তাদের। এক মুখপাত্র জানান, সম্প্রতি রাষ্ট্রপতির কলকাতা সফরের কর্মসূচিতে লেখা হয়েছে— রাষ্ট্রপতি ‘প্রিন্স অব ওয়েলস’ স্যুইটে থাকবেন। ওই ঘর অবশ্য এখন ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কক্ষ’ হয়ে গিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy