Advertisement
০৭ মে ২০২৪

মুখ্যমন্ত্রীর আতিথ্যে মুগ্ধ, মমতার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার বার্তা মার্কিন কর্তার

কলকাতা শহরের সঙ্গে তাঁদের সম্পর্ক বহু দিনের। ভৌগোলিক অবস্থানের বিচারে এ রাজ্যের গুরুত্ব তাঁদের কাছে অনেক। এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর আতিথেয়তায় তাঁরা মুগ্ধ। সুতরাং এ রাজ্য এবং রাজ্য প্রশাসনের সঙ্গে ধারাবাহিক ভাবে ঘনিষ্ঠতা গড়ে তোলার বার্তা দিয়ে গেলেন মার্কিন বিদেশ দফতরের রাজনীতি বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি থমাস এ শ্যানন।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে মার্কিন বিদেশ দফতরের আন্ডার সেক্রেটারি টমাস শ্যানন। বৃহস্পতিবার নবান্নে। — নিজস্ব চিত্র

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে মার্কিন বিদেশ দফতরের আন্ডার সেক্রেটারি টমাস শ্যানন। বৃহস্পতিবার নবান্নে। — নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ জুলাই ২০১৬ ০৪:২২
Share: Save:

কলকাতা শহরের সঙ্গে তাঁদের সম্পর্ক বহু দিনের। ভৌগোলিক অবস্থানের বিচারে এ রাজ্যের গুরুত্ব তাঁদের কাছে অনেক। এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর আতিথেয়তায় তাঁরা মুগ্ধ। সুতরাং এ রাজ্য এবং রাজ্য প্রশাসনের সঙ্গে ধারাবাহিক ভাবে ঘনিষ্ঠতা গড়ে তোলার বার্তা দিয়ে গেলেন মার্কিন বিদেশ দফতরের রাজনীতি বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি থমাস এ শ্যানন।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নবান্নে এক ঘণ্টার বৈঠক শেষে শ্যানন বলেন, ‘‘ভারত-মার্কিন সম্পর্ক এখন শক্ত ভিতের উপর দাঁড়িয়ে। কলকাতা নিয়েও মার্কিন প্রশাসনের দারুণ আগ্রহ রয়েছে। ১৭৯২ সালে এই শহরে প্রথম মার্কিন দূতাবাস তৈরি হয়েছিল।’’ তার পরেই শ্যানন যোগ করেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর আতিথ্যে আমরা মুগ্ধ। তাঁকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। যে আলোচনা শুরু হল, তা ভবিষ্যতেও চলতে থাকবে।’’ মার্কিন প্রশাসনের আরও দুই কূটনীতিকও শ্যাননের সঙ্গে এ দিন নবান্নে এসেছিলেন।

রাজ্য প্রশাসন সূত্রের খবর, মার্কিন সরকার কেন পশ্চিমবঙ্গ এবং এখানকার নেতৃত্বের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়াতে চায় তা এ দিনের বৈঠকেই পরিষ্কার জানিয়েছেন মার্কিন বিদেশ দফতরের এই চতুর্থ পদাধিকারী। সেখানে মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘‘এক দিকে বাংলাদেশ, অন্য দিকে মায়ানমার-নেপাল। তার মাঝখানে আপনি রয়েছেন। সুতরাং ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্বের বিচারে আপনার নেতৃত্ব ক্রমেই তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠবে।’’ অর্থাৎ মার্কিন কূটনীতির আতসকাচে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এখন পশ্চিমবঙ্গের ভূমিকাকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচার, নেপালে চিনের ক্রমবর্ধমান উপস্থিতি, মায়ানমারে নতুন সরকার আসার পর মার্কিন প্রশাসনের কূটনৈতিক প্রয়াস ইত্যাদি অনেক ক্ষেত্রেই দিল্লি এবং ওয়াশিংটন এখন একযোগে কৌশল রচনা করছে। কিন্তু বাংলাদেশ, মায়ানমার বা নেপালে যে কোনও নীতির বাস্তবায়ন করতে হলে পশ্চিমবঙ্গের সক্রিয় ভূমিকা ছাড়া সম্ভব নয়। এটা মার্কিন প্রশাসন বুঝেছে বলেই নবান্নের কর্তারা মনে করেন। এক কর্তার বক্তব্য, মার্কিন কর্তারা তিস্তা জলচুক্তি, খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নি নিয়ে মমতার অবস্থান সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। তাঁর কথায়, ‘‘অদূর ভবিষ্যতে মমতার রাজনৈতিক কর্তৃত্ব যে খর্ব হবে না, তা বুঝেছে আমেরিকা। তাই দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার মাস দেড়েকের মধ্যেই মার্কিন প্রশাসনের শীর্ষস্তর থেকে মমতার দরজায় কড়া নাড়া হল।’’

এ দিনের বৈঠকের শুরুতেই শ্যানন মমতার বিপুল জয়ের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তাঁর সহযোগী, প্রিন্সিপ্যাল ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি অব স্টেট, উইলিয়াম টড মমতাকে জানান, তাঁর স্ত্রী মুখ্যমন্ত্রীর ‘ফ্যান’। উইলিয়াম কলকাতায় যাবেন শুনেই তিনি উত্তেজিত। শ্যাননের আর এক সহযোগীও মুখ্যমন্ত্রীকে জানান, ২০ বছর পর তিনি কলকাতায় এসেছেন। এমন আলো ঝলমলে, পরিচ্ছন্ন শহর আগে ছিল না। কলকাতার এই মুখ বদল যে মুখ্যমন্ত্রীর হাত ধরেই হয়েছে, তার জন্য মমতাকে ধন্যবাদ জানান মার্কিন কর্তারা। মুখ্যমন্ত্রীও তাঁর পাঁচ বছরের মেয়াদে কী ভাবে রাজ্যে সামাজিক উন্নয়ন এবং পরিকাঠামো ক্ষেত্রে বিনিয়োগ ও বৃদ্ধি হয়েছে তা ওঁদের জানান।

এ দিনের বৈঠকে অর্থ়মন্ত্রী অমিত মিত্র এবং মুখ্যসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যের আর্থিক বৃদ্ধি, বিনিয়োগ, পরিকাঠামো ক্ষেত্রে ব্যয়, নিজস্ব আয়বৃদ্ধি ইত্যাদি নিয়ে নানা পরিসংখ্যান পেশ করেন। এ রাজ্যে যে সব মার্কিন সংস্থা কাজ করছে, মুখ্যসচিব তাদের কথা উল্লেখ করেন। বিশেষ করে তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে কলকাতার সঙ্গে মার্কিন মুলুকের সম্পর্কের কথাও মার্কিন প্রতিনিধিদের সামনে তুলে ধরা হয়। বৈঠক শেষে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমরা খুশি যে মার্কিন কর্তারা কলকাতা এসে আমার সঙ্গে দেখা করে গেলেন।’’

খুশি হওয়ারই কথা। ২০১১ সালে তৃণমূল প্রথম বার ক্ষমতায় আসার পর মার্কিন বিদেশসচিব হিলারি ক্লিন্টন মহাকরণে এসে মমতার সঙ্গে দেখা করেছিলেন। বামেদের হারানোর জন্য তাঁকে কুর্নিশ করে গিয়েছিলেন। কিন্তু তার পরেই তিস্তা জলচুক্তি এবং খুচরো ব্যবসায় বিদেশি বিনিয়োগ নিয়ে মার্কিন রাষ্ট্রদূত ন্যান্সি পাওয়েল মমতার সঙ্গে দেখা করতে চাওয়ায় সময় দেননি মমতা। সে সব বিবেচনায় রেখে এ বার সরাসরি তেমন কোনও স্পর্শকাতর বিষয় উত্থাপন করেননি শ্যানন। বরং আঞ্চলিক রাজনৈতিক এবং কৌশলগত অবস্থানের বিচারে পশ্চিমবঙ্গ এবং মমতার নেতৃত্বের প্রশংসা করেছেন তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Mamata Banerjee external affair Thomas Shannon
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE