ছবি: সংগৃহীত।
টানা বন্ধে ধুঁকছে পাহাড়ের অর্থনীতি। খাদ্যসঙ্কট ঘরেঘরে। এই অবস্থায় বৃহস্পতিবারই রাজ্যের কাছ থেকে ডাকের আশা করে বার্তা দিয়েছিল মোর্চা। ২৪ ঘণ্টা পরে তারা আবার বুঝিয়ে দিল, এই প্রস্তাব পেতে কতটা মরিয়া। মোর্চার সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরি জানান, ‘‘এ বার সর্বদল বৈঠকে ডাক পেলে একক ভাবে কোনও সিদ্ধান্ত নেবে না দল। বরং, কোনও আলোচনার ডাক সরকারি ভাবে পেলে সমন্বয় কমিটি ও মোর্চা নেতৃত্ব একসঙ্গে বসে সিদ্ধান্ত নেবেন।’’
পাহাড়ে বন্ধ ৫৮ দিনে পড়ল। নানা সমস্যায় জেরবার পাহাড়বাসী ক্রমশ স্বাভাবিক জনজীবনে ফেরার জন্য নেতাদের উপরে উত্তরোত্তর চাপ বাড়াচ্ছেন। কারণ, দীর্ঘ বন্ধে পাহাড়বাসীদের অনেকেই চরম সঙ্কটে। একান্তে কথা বলতে গিয়ে পাহাড়ের অনেকেই ভেঙে পড়ছেন। সম্প্রতি শিলিগুড়ি কলেজে এক অনুষ্ঠানে পাহাড়বাসী এক শিক্ষিকা তাঁর বাড়ির লোকজন পাহাড়ে কতটা অসহায় অবস্থায় দিন কাটাতে বাধ্য হচ্ছেন, সেই বিবরণ দিতে গিয়ে প্রায় কেঁদে ফেলেন। দ্রুত পাহাড়ে জনজীবন যাতে স্বাভাবিক হয় সে জন্য ‘কিছু করতে’ পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেবকে অনুরোধও করেন তিনি।
গৌতমবাবু বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী পাহাড়ে শান্তি-উন্নয়ন চান বলেই আলোচনার ডাক দিয়েছেন। বিধানসভাতেও তা বলেছেন। ওঁরা অশান্তি ছেড়ে জনজীবন স্বাভাবিক করুন। বাকিটা সময়ই বলবে।’’ তবে একই সঙ্গে রাজ্য প্রশাসন নানা মামলায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কড়া মনোভাব জারি রেখেছে। শুক্রবারও শিলিগুড়ি লাগোয়া এলাকা থেকে চার জন মোর্চা নেতাকে পুরানো মামলায় গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এই অবস্থায় পাহাড়বাসী বুঝিয়েছেন, তাঁরা ভাঙচুর, আগুনের আন্দোলন এবং তার জেরে পুলিশি হানা, গ্রেফতার, তল্লাশি আর চান না।
আরও পড়ুন: পৃথক পথের সারথি কারা, প্রশ্ন সিপিএমে
এই পরিস্থিতিতে কোনও একটা রফাসূত্র চাইছে মোর্চা। তাদের ৩ বিধায়ক-সহ ১২ সদস্যের প্রতিনিধিদল দিল্লিতে দরবার শুরু করলেও জট খোলার কোনও আশা দেখতে পাননি এখনও। তাই ঘরে-বাইরের চাপ সামলাতে আলোচনা শুরু করতে মোর্চা নেতারা মরিয়া। ২২ জুন রাজ্যের ডাকা সর্বদল বৈঠকের প্রস্তাব নাকচ করেছিল যে বিমল গুরুঙ্গের দল, তারা এখন ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে যাওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে। শিলিগুড়ির বৈঠকে হাজির ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও মুখ্যসচিব। বৈঠক কার্যত খালি যাওয়ার পরেও কিন্তু রাজ্য তাদের অবস্থানে অনড়। তাই মুখ্যমন্ত্রী বারবার আলোচনার ডাক দিয়েছেন। আন্দোলনকারী একাধিক নেতার আশা, দ্বিতীয় দফার সর্বদল বৈঠক ডাকলে তাতে তুলনামূলক বেশি সাড়া মিলতে পারে। তাই পাহাড়বাসীদের অনেকেই আশা করছেন, পাহাড় নিয়ে রাজ্য ফের সর্বদল বৈঠক ডাকলে সমাধানসূত্র মিলতেও পারে।
সূত্রের খবর, অশান্তি বন্ধ করলে রাজ্য যে আলোচনায় বসতে দেরি করবে না, সেই বার্তা আন্দোলনকারীদের আগেও দেওয়া হয়েছে। মোর্চা নেতারা বন্ধ তোলার কথা ঘোষণা করলেই প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে বলে প্রশাসনের এক শীর্ষকর্তার দাবি। রোশন গিরির কথায় স্পষ্ট, মোর্চাও আর একক দায়িত্বে আলোচনায় যেতে চাইছে না। ডাক পেলে তারা সমন্বয় কমিটির সঙ্গে কথা বলে এগোতে চাইছে। যাতে পরে আর তাদের অপ্রীতিকর প্রশ্নের মুখে পড়তে না হয়।
জট খোলার অপেক্ষায় পাহাড়বাসীও। কারণ, পুজোর মরসুমের আর দেরি নেই। এ যাবৎ হওয়া লোকসান না পোষালেও কিছুটা সামলে নেওয়ার চেষ্টা করতে চান পাহাড়-সমতলের অনেকেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy