যখন প্রয়োজন তখন আলো জ্বলবে। প্রয়োজন না থাকলে হয় বাতির ঔজ্জ্বল্য কমে যাবে, অথবা নিভে যাবে। বিদ্যুতের অপচয় বন্ধ করতে কলকাতায় গড়ে ওঠা বড় বাণিজ্যিক ভবনে এমনই প্রযুক্তির প্রয়োগ করতে চায় সরকার। সম্প্রতি কলকাতা পুরসভায় বিষয়টি নিয়ে রাজ্য বিদ্যুৎ দফতরের উদ্যোগে এক বৈঠক হয়েছে। উপস্থিত ছিলেন পুরসভার বিল্ডিং দফতরের ইঞ্জিনিয়ার, স্থপতি এবং আমলারা। এনার্জি কনজারভেশন বিল্ডিং কোড (ইসিবিসি) মেনে কলকাতা, নিউ টাউন, হাওড়া, বিধাননগরের মতো জায়গায় এই নিয়ম চালু করায় উদ্যোগী হয়েছে বিদ্যুৎ দফতর। দফতরের এক আধিকারিক জানান, কলকাতায় বিদ্যুতের ব্যবহার সবচেয়ে বেশি। ফলে অপচয়ও হয় বেশি। সেখানে লাগাম টানতেই ইসিবিসি পদ্ধতির প্রয়োগ জরুরি।
ইসিবিসি কী?
মূলত বিদ্যুতের অপচয় বন্ধ করার প্রযুক্তি। তা মানতে কী করতে হবে? পুরসভার বিল্ডিং দফতরের এক ইঞ্জিনিয়ার জানান, আপাতত ১০০ কিলোওয়াট বিদ্যুতের ভার (লোড) নেয় এমন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানকে এর আওতায় আনা হবে। দ্বিতীয়ত, ওই ভবনের ছাদের এক-চতুর্থাংশে সৌর প্যানেল থাকতে হবে। তৃতীয়ত, ছাদে আনাজের চাষ (ভেজিটেটিভ রুফ) করতে হবে। চতুর্থত, টিভি, ফ্রিজ, এসি, জল তোলার পাম্প— সব ক্ষেত্রেই স্টার দেওয়া সরঞ্জাম ব্যবহার করতে হবে। এ সব থাকলে সেই বাড়িতে বিশেষ ধরনের যন্ত্র বসানো হবে, যা বিদ্যুতের অপচয় বন্ধে সাহায্য করবে। কী ভাবে?
রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার এক ইঞ্জিনিয়ার জানান, এখন অনেক বড় বড় হোটেল, হাসপাতাল, শপিং মলে সব সময়ে আলো জ্বলে। কিন্তু বিশেষ ওই যন্ত্র বসানোর আগে দেখে নিতে হবে বাড়ির সম্মুখ ভাগ কোন দিকে, ভিতরে কতটা সূর্যের আলো ঢুকছে, কতটা কাচের দরজা-জানলা ব্যবহার করা হচ্ছে। ওই যন্ত্র বসানোর পরে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে সূর্যের আলো বেশি ঢুকলে বৈদ্যুতিক আলো নিজের থেকেই বন্ধ হয়ে যাবে। সূর্যাস্তের পরে আবার আলো জ্বলে উঠবে। অন্য দিকে রাত ১২টার পরে যখন আলোর প্রয়োজন কম, তখন বৈদ্যুতিক আলো স্তিমিত হয়ে যাবে। ভবনের ভিতরে, বাইরে এ ভাবেই বিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রণ করা যাবে।
পুরসভার তরফে জানানো হয়েছে, শহরের বড় বড় হোটেল, হাসপাতাল, নার্সিং হোম, শপিং মলে ইসিবিসি চালু করলে বিল্ডিংয়ের মালিকের আর্থিক সাশ্রয় হবে। সুরক্ষিত থাকবে পরিবেশও।
এই প্রযুক্তি চালু করতে হলে কি বিল্ডিং নিয়মে কোনও বদল দরকার?
পুরসভার বিল্ডিং বিভাগের ডিজি অনিন্দ্য কারফর্মা বলেন, ‘‘বর্তমানে নতুন বাড়ি করতে হলে প্রথমে পুরসভা থেকে নকশা অনুমোদন করাতে হয়। নকশা মেনে বাড়ি তৈরির পরে তার গঠনগত স্থায়িত্ব (স্ট্রাকচারাল স্টেবিলিটি) দেখে পুরসভা কাজ সম্পূর্ণ হওয়ার শংসাপত্র (কমপ্লিশন সার্টিফিকেট) দেয়।’’ বিল্ডিং দফতর সূত্রের খবর, সেই শংসাপত্র দেওয়া মানেই যে বাড়িটি বাণিজ্যিক ভাবে চালু হয়ে গেল, এমন বলা যায় না। কারণ এর পরে দেওয়া হয় জল, নিকাশি এবং বিদ্যুতের সংযোগ।
ইসিবিসি পদ্ধতিতে ‘অকুপ্যান্সি সার্টিফিকেট’ বলে নতুন একটি ব্যবস্থার কথা ভাবা হয়েছে। বিদ্যুৎ দফতরের এক ইঞ্জিনিয়ার জানান, এই শংসাপত্র দেওয়ার ক্ষেত্রে এমন কাউকে দরকার যিনি বিল্ডিংয়ের সঙ্গে বিদ্যুতের বিষয়টিও ভাল জানেন। পরিভাষায় যাঁকে বলা হয় বিল্ডিং এনার্জি অডিটর। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, কলকাতা পুর এলাকায় বিল্ডিং তৈরির জন্য তালিকাভুক্ত এলবিএস (লাইসেন্সড বিল্ডিং সার্ভেয়ার)-রা ওই বিশেষ পদের জন্য পরীক্ষা দিতে পারবেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy