বিধির গেরো আর বামের দাবি। দুয়ের জেরে নজিরবিহীন পরিস্থিতি এ বারের রাজ্যসভা ভোটে।
সময়ের মধ্যে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন কি না, শুক্রবার বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত এই প্রশ্নে টানাপড়েন চলেছিল। একই বিতর্কে শনিবারও আটকে থাকল বামপ্রার্থী বিকাশ ভট্টাচার্যের মনোনয়ন। বিধানসভায় শনিবার স্ক্রুটিনি পর্বে তিনঘণ্টা ঘরে চুলচেরা বিতর্ক চলেছে এই নিয়ে। শেষ পর্যন্ত আগামী সোমবার সকালে আবার শুনানি হবে বলে জানানো হয়েছে বিধানসভার সচিব তথা রাজ্যসভার রিটার্নিং অফিসার জয়ন্ত কোলের দফতর থেকে।
শুক্রবার রাজ্যসভার মনোনয়ন জমা দেওয়ার সময়সীমা ছিল বিকেল তিনটে পর্যন্ত। কিন্তু বিকাশবাবুর অতিরিক্ত হলফনামা জমা হতে তিনটে বেজে গিয়েছিল বলে বিধানসভার সচিবালয়ের দাবি। নির্বাচন কমিশনের বিধি ও নির্দেশিকা দেখিয়ে এ দিন বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তী, রাজ্যনেতা রবীন দেব প্রমুখ যুক্তি দেন, তিনটে বাজার আগেই বিকাশবাবু বিধানসভার সচিবের ঘরে পৌঁছে কাগজপত্র সই করছিলেন। সেই কাজ শেষ করতে যদি সময়সীমা পেরিয়ে থাকে, তা হলে সেই প্রক্রিয়াকে বাতিল করা যায় না। তা ছাড়া অতিরিক্ত হলফনামার যে নথিকে ঘিরে এত বিতর্ক, তার একাধিক প্রতিলিপি দেওয়া আবশ্যিক এমন কথাও কমিশনের রূপরেখায় বলা নেই। তাই মনোনয়ন বাতিল করা যাবে না।
এ দিন শুনানি পর্বে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী অফিসার আরিজ আফতাব। কমিশনের প্রাক্তন কয়েক জন অফিসার মনে করেন, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে অতিরিক্ত হলফনামা জমা দিতে না পারাটা ত্রুটি (ডিফেক্ট)। নথি জমা দেওয়ার পর স্ক্রুটিনির আগে পর্যন্ত ভুল শুধরে নেওয়ার সংস্থান রয়েছে। কিন্তু যে নথি জমাই পড়েনি তা শোধরানোর প্রশ্ন ওঠে না।
শাসক দলের যুক্তি হল, আবাসন, বিদ্যুৎ বিল, জলের বিল ইত্যাদি নিয়ে সরকারের কাছে কোনও বকেয়া নেই এই মর্মে অতিরিক্ত হলফনামায় ‘নো ডিমান্ড সার্টিফিকেট’ জমা দিতে পারেননি বিকাশবাবু। ১৯৯৮ সালের দিল্লি হাইকোর্টের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনামা এবং নির্বাচনী হ্যান্ডবুকে বলা আছে, এই অতিরিক্ত হলফনামা জমা না দেওয়া ‘অমার্জনীয় ক্রটি’ হিসাবে দেখা হবে। জবাবদিহির জন্য ২৪ ঘণ্টা সময় চেয়েছেন বাম প্রার্থী। রবিবার ছুটি থাকায় শেষ পর্যন্ত সোমবার সকাল ন’টায় ফের শুনানি হবে। সে দিনই সিদ্ধান্ত জানাবে কমিশন।
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী এ দিন বলেন, ‘‘বাম প্রার্থী বিকাশ ভট্টাচার্যের মনোনয়ন যদি বাতিল হয়, তা হলে বলতে হবে প্রদীপদার (ভট্টাচার্য) কপালের নাম গোপাল!’’ নিজেদের পাঁচ প্রার্থীর জয় নিশ্চিত করার পরে ষষ্ঠ আসনে কংগ্রেসের প্রদীপ ভট্টাচার্যকে নিজেদের বাড়তি ভোট দিয়ে জেতানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মমতা। অধীরের মন্তব্য, ‘‘মহানুভবতা দেখাতে হলে উনি (মমতা) তো পাঁচটার মধ্যে একটা আসন ছেড়ে দিতে পারতেন। তা না করে সুবিধাবাদ ও ধান্দাবাজ রাজনীতির পরিচয় দিয়েছেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy