Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
ছাত্রদের আহ্বান ‘মুখপোড়াদের রুখতে/ আসুন হাঁটি এক সাথে’

এ বার ছাত্র মিছিলেও জোট-বার্তা

কংগ্রেস-সিপিএম জোটের আবহ তৈরি হয়েছে ক’দিন ধরেই। সেই আবহেই এ বার মেদিনীপুরে একসঙ্গে মিছিল করল দুই দলের ছাত্র সংগঠন ছাত্র পরিষদ (সিপি) এবং এসএফআই। উচ্চ মাধ্যমিক চলায় রবিবাসরীয় বিকেলের মিছিলে কোনও স্লোগান ছিল না।

মেদিনীপুরের পথে এগোল মিছিল। মিলেমিশে গেল দুই সংগঠনের পতাকা। সৌমেশ্বর মণ্ডলের তোলা ছবি।

মেদিনীপুরের পথে এগোল মিছিল। মিলেমিশে গেল দুই সংগঠনের পতাকা। সৌমেশ্বর মণ্ডলের তোলা ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০১:৪৪
Share: Save:

কংগ্রেস-সিপিএম জোটের আবহ তৈরি হয়েছে ক’দিন ধরেই। সেই আবহেই এ বার মেদিনীপুরে একসঙ্গে মিছিল করল দুই দলের ছাত্র সংগঠন ছাত্র পরিষদ (সিপি) এবং এসএফআই। উচ্চ মাধ্যমিক চলায় রবিবাসরীয় বিকেলের মিছিলে কোনও স্লোগান ছিল না। মুখে কালো কাপড় বেঁধে মিছিল করেন পড়ুয়ারা। তবে পোস্টার-ব্যানারে ছিল আহ্বান— ‘মুখ পোড়াদের রুখতে/আসুন হাঁটি এক সাথে’, ‘কানহাইয়ার স্বার্থে/লড়তে হবে এক সাথে’।

বিদ্যাসাগর হলের সামনে থেকে এ দিন মিছিল শুরু হয়ে বটতলাচক, কেরানিতলা, কালেক্টরেট মোড়-সহ শহরের বিভিন্ন এলাকা পরিক্রমা করে। মূলত জেএনইউ-কাণ্ডের প্রতিবাদ ও ছাত্র নেতা কানহাইয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে এই কর্মসূচি হলেও রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা কিন্তু বলছেন, এই মিছিল জেলাতেও জোটের বীজ পুঁতে দিল। তবে কি জোট বার্তা দিতেই পায়ে পা মেলানো? এসএফআইয়ের রাজ্য সহ-সম্পাদক সৌগত পণ্ডার জবাব, ‘‘গেরুয়া সন্ত্রাসের হাত থেকে ক্যাম্পাস বাঁচাতে, দেশ বাঁচাতে এই মিছিল। গণতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ সব অংশের ছাত্র মিছিলে ছিলেন।” আর সিপি-র রাজ্য সহ- সভাপতি মহম্মদ সইফুলের বক্তব্য, “শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিজেপির হামলার প্রতিবাদেই এই মিছিল।’’

মুখে এ কথা বললেও কংগ্রেস-সিপিএম, দু’দলের ছাত্র সংগঠনের নেতারাই এ দিন বুঝিয়ে দিয়েছেন, শুধু বিজেপি নয়, তৃণমূলকে রুখতেও মতপার্থক্য ভুলে গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ সব শক্তি জেলায় একজোট হবে। এসএফআইয়ের এক নেতার কথায়, “আমাদের লড়াই সাম্প্রদায়িকতা ও বিচ্ছিন্নতাবাদের বিরুদ্ধে। যেখানে গণতন্ত্র আক্রান্ত হবে, সেখানে প্রতিবাদ হবে।” এক নেতাও বলছেন, “সন্ত্রাস হলে প্রতিবাদ হবেই। তা সে ক্যাম্পাস হোক বা অন্য কোথাও।”

শাসক তৃণমূলের বিরুদ্ধে সিপি এবং এসএফআইয়ের পরস্পরের পাশে দাঁড়ানো একেবারে নতুন নয়। সবং কলেজে সিপি কর্মী কৃষ্ণপ্রসাদ জানা খুনের পরে দোষীদের গ্রেফতারের দাবিতে সরব হয়েছিল এসএফআই-ও। সে সময় কলকাতায় মানস ভুঁইয়ার অবস্থান মঞ্চে গিয়েছিলেন সিপিএম নেতারা। আবার যখন এসএফআই কর্মীরা আক্রান্ত হয়েছেন, তখন তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের গ্রেফতারের দাবিতে সরব হয়েছে সিপি। সম্প্রতি জেএনইউ-কাণ্ডের প্রতিবাদে কলকাতার রাজপথে পাশাপাশি হেঁটেছেন কংগ্রেস-সিপিএম নেতারা। তবে জঙ্গলমহলের জেলায় এমন যৌথ মিছিল এই প্রথম।

কী ভাবে ঠিক হল কর্মসূচি? সূত্রের খবর, শনিবার বিকেলে এসএফআইয়ের রাজ্য সহ-সম্পাদক সৌগতকে ফোন করেন সিপি-র রাজ্য সহ-সভাপতি সইফুল। জানান, ক্যাম্পাসে গণতন্ত্র রক্ষার দাবিতে তাঁরা মেদিনীপুরে মিছিল করতে চান। এসএফআইয়ের ছেলেরা এলে ভাল হয়। প্রয়োজনে ঝান্ডা ছাড়া মিছিলের প্রস্তাব দেন তিনি। সৌগত অবশ্য সংগঠনের পতাকা নিয়ে মিছিলেই সায় দেন। এসএফআই ছাড়াও কয়েকটি বাম ছাত্র সংগঠন এ দিনের মিছিলে সামিল হয়।

হাতে সময় কম ছিল। তাই সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে প্রচার শুরু করেন দুই সংগঠনের কর্মী-সমর্থকেরা। এসএফআইয়ের জেলা সম্পাদক প্রসেনজিত্‌ মুদি যেন রাতেই পোস্ট করেন— ‘লড়াই থামবে না। আরও আরও এগিয়ে যাবে।’ সবংয়ের সঙ্গে জেএনইউকে মিলিয়ে সইফুল আবার লেখেন, ‘যাঁর নাম কৃষ্ণ (কৃষ্ণপ্রসাদ জানা), তিনিই তো কানহাইয়া।’ এই সিপি নেতার মতে, কৃষ্ণ-কানহাইয়ার লড়াই আজ মমতা-মোদীর সঙ্গে। সইফুলের পোস্ট, ‘ভারত মাঙ্গে আজাদি, মমতা-মোদী সে আজাদি।’

এ দিনের মিছিলে ছিলেন না সিপি-র জেলা সভাপতি অমিত সিংহ। তাঁর যুক্তি, “সিপিএমের সঙ্গে মিছিল করতে পারবো না!” আর তৃণমূল ছাত্র পরিষদের জেলা সাধারণ সম্পাদক বুদ্ধ মণ্ডল, শিবরাম বেরাদের কটাক্ষ, “এ সব সুবিধাবাদী জোট!”

জেএনইউ কাণ্ডের প্রতিবাদে রবিবার খড়্গপুরেও মিছিল করে বাম ছাত্র-যুব সংগঠন। বাসস্ট্যান্ড থেকে গোলবাজার হয়ে মসজিদ সংলগ্ন সমবায় পর্যন্ত মিছিল হয়। পা মেলান ডিওয়াইএফ, এসএফআই, এআইএসএফ, এআইওয়াইএফ, এআইওয়াইএলের সদস্যরা। নেতৃত্বে ছিলেন ডিওয়াইএফের জোনাল সম্পাদক সুরজিত সমাদ্দার, সভাপতি সপ্তক ভট্টাচার্য, এআইওয়াইএফ জোনাল সম্পাদক মনোজ দে প্রমুখ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE