Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪

পারিবারিক বিবাদের জের, বন্ধ ঘরে পেট্রোল ঢেলে ভাইপো-ভাইঝিকে খুন

মায়ের পাশে ঘুমে কাদা ভাই-বোন। তীব্র উত্তাপে ঘুম ভাঙল তাদের। দরমার বেড়া আর মাটির ঘর দাউ দাউ করে জ্বলছে। ছুটে পালানোরও জো নেই। দরজা বাইরে থেকে তালাবন্ধ!

নির্মম: পুড়ে ছাই ফতেমা বিবি ও তাঁর দুই ছেলে-মেয়ের বিছানা। ছবি: কৌশিক সাঁতরা

নির্মম: পুড়ে ছাই ফতেমা বিবি ও তাঁর দুই ছেলে-মেয়ের বিছানা। ছবি: কৌশিক সাঁতরা

নিজস্ব সংবাদদাতা
ঘাটাল শেষ আপডেট: ১৭ জুন ২০১৭ ০২:২৭
Share: Save:

রাত তখন দু’টো। মায়ের পাশে ঘুমে কাদা ভাই-বোন। তীব্র উত্তাপে ঘুম ভাঙল তাদের। দরমার বেড়া আর মাটির ঘর দাউ দাউ করে জ্বলছে। ছুটে পালানোরও জো নেই। দরজা বাইরে থেকে তালাবন্ধ!

মা-ছেলেমেয়ের আর্ত চিৎকারে বাঁচাতে আসতে পারলেন না পড়শিরাও। দুষ্কৃতীরা আশপাশের বাড়ির দরজাও বাইরে থেকে বন্ধ করে দিয়েছিল। শেষে দরজা ভেঙে প্রতিবেশীরা যখন এলেন, ততক্ষণে স্কুল পড়ুয়া ভাই-বোন মৃতপ্রায়। হাসপাতালে নিয়ে গিয়েও তাদের বাঁচানো যায়নি। আশঙ্কাজনক অবস্থা মায়ের।

স্রেফ পারিবারিক বিবাদে বৃহস্পতিবার রাতে এমনই ঘটনার সাক্ষী রইল পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটাল থানার সুন্দরপুর। গ্রামের কাজি পাড়ায় ঘুমন্ত অবস্থায় ভাইপো কাজি রাজীব (১৫) ও ভাইঝি রেশমি খাতুন (১৭)-কে পেট্রল দিয়ে পুড়িয়ে খুনের অভিযোগ উঠেছে সৎ কাকা কাজি ইসমাইলের বিরুদ্ধে। রাজীব-রেশমির মা বছর আটচল্লিশের ফতেমা বিবির অবস্থাও সঙ্কটজনক। তাঁর চিকিৎসা চলছে এসএসকেএমে। শুক্রবার ক্ষুব্ধ গ্রামবাসী অভিযুক্ত ইসমাইলের বাড়িতে ভাঙচুর চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। পুলিশ পৌঁছলে তাদেরও ইট ছোড়া হয়। পরে বিশাল পুলিশ বাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ইসমাইল পলাতক। তবে ঘটনায় জড়িত অভিযোগে ফতেমার শ্বশুরবাড়ির দিকের আত্মীয় শেখ ফরিউদ্দিনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ বলেন, “পারিবারিক গণ্ডগোলের জেরেই এই ঘটনা। শেখ ফরিউদ্দিনকে গ্রেফতারের পাশাপাশি ইসমাইলের মা ও বোনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ইসমাইলেরও খোঁজ চলছে।”

আরও পড়ুন:ডিএনএ বলল, টুকটুকি আছে মায়ের কাছেই

ফতেমার স্বামী কাজি হাসেম আলি মুম্বইতে কাঠের মিস্ত্রির কাজ করেন। বড় ছেলে কাজি ফরিদ (২২) বাবার কাছেই থাকেন। দর্জির কাজ করেন। হাসেমের সৎ ভাই ইসমাইলও পেশায় দর্জি। সুন্দরপুরে দাদার বাড়ির পাশে তাঁর বাড়ি। সেখানে মা ও বোন থাকলেও ইসমাইল থাকতেন না। এমনকী স্ত্রীর সঙ্গেও তাঁর সম্পর্ক ভাল ছিল না। তিনি থাকেন বাপের বাড়িতে।

পারিবারিক গোলমাল ও জমিজমা নিয়ে হাসেম ও ইসমাইলের মধ্যে অশান্তি চলছিল। এ নিয়ে গ্রামে সালিশি সভাও হয়। ইসমাইল হাসেমকে ‘দেখে নেওয়া’র হুমকিও দিতেন অভিযোগ। গ্রামের এক বাসিন্দার কথায়, “হুমকি দিত। তাই বলে ইসমাইল এ ভাবে হাসেমের পরিবারকে পুড়িয়ে মারবে, ভাবিনি।’’ মুম্বইয়ে বসে খবরটা পেয়ে হতভম্ব হাসেমও। সৎ ভাই ইসমাইল যে এ ভাবে তাঁর সংসারটা ছারখার করে দেবে, বোঝেননি তিনিও। খবর পেয়েই বড় ছেলেকে নিয়ে ঘাটাল রওনা দিয়েছেন হাসেম।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE