Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
লাভজনক চাষে ঝোঁক বৃদ্ধির আশা

বেশি দামেই ডাল কিনবে নিগম

ডাল চাষে সেচ কম লাগে। লাভ বেশি, তুলনায় পরিশ্রমও কম। সঙ্গে বাড়তি পাওনা জমির গুণমান বৃদ্ধি। এত কিছুর পরেও এ রাজ্যে চাষিদের মধ্যে ডালচাষে তেমন উৎসাহ দেখা যায় না। ডালের ঘাটতি মেটানোর ক্ষেত্রে এই জেলার ছবিটাও আলাদা নয়। তাই এ বার সেই ডাল চাষকে বাড়তি গুরুত্ব দিতে বিশেষ উদ্যোগী হল কৃষি দফতর।

দয়াল সেনগুপ্ত
সিউড়ি শেষ আপডেট: ২৬ মে ২০১৬ ০১:৪২
Share: Save:

ডাল চাষে সেচ কম লাগে। লাভ বেশি, তুলনায় পরিশ্রমও কম। সঙ্গে বাড়তি পাওনা জমির গুণমান বৃদ্ধি।

এত কিছুর পরেও এ রাজ্যে চাষিদের মধ্যে ডালচাষে তেমন উৎসাহ দেখা যায় না। ডালের ঘাটতি মেটানোর ক্ষেত্রে এই জেলার ছবিটাও আলাদা নয়। তাই এ বার সেই ডাল চাষকে বাড়তি গুরুত্ব দিতে বিশেষ উদ্যোগী হল কৃষি দফতর।

ঠিক হয়েছে এ বার ব্লকগুলির প্রদর্শন ক্ষেত্রে উৎপাদিত ডালের একটা বড় অংশ বীজ হিসাবে কিনে নেবে রাজ্য বীজ নিগম। এবং সেটাও বাজারদরের থেকে বেশ খানিকটা চড়া দামেই। লক্ষ্য— জেলায় ডালবীজের ঘাটতি মেটানোর পাশাপাশি ভবিষ্যতে আরও বেশি করে ডাল চাষ করতে চাষিদের উৎসাহী করা। জেলা উপ কৃষি অধিকর্তা (প্রশাসন) সমীর ঘোষ বলছেন, ‘‘আপাতত মুসুর ডাল কেনার প্রস্তুতি চূড়ান্ত হয়েছে। মুগ এখনও জমিতে। মুগ উঠলে একই ভাবে মুগডালও কিনে নেওয়া হবে।’’

কৃষি দফতর সূত্রের খবর, এ রাজ্যে ডাল শষ্যের ঘাটতি মেটাতে নানা উদ্যোগ শুরু হয়েছে। মুসুর, খেসারী, ছোলার মতো ডাল চাষ জেলার নানা প্রান্তে বিক্ষিপ্ত ভাবে হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় কম। মুগ চাষের অবস্থা আরও সঙ্গীন। ডাল চাষকে আরও গুরুত্ব দিতে এ বার সেই মুসুর ডালের সময় থেকেই সার, অনুখাদ্য, বীজ, কীটনাশক দিয়ে জেলার ১০টি ব্লকে প্রদর্শন ক্ষেত্র গড়ে বেশ কিছু চাষিকে কীভাবে মুসুর চাষ করা উচিত, তা হাতেকলমে দেখিয়েছিল কৃষি দফতর। জেলা সহ কৃষি অধিকর্তা (তথ্য) অমর মণ্ডল জানান, এ বার বোলপুর, রামপুরহাট ১ ও ২, মহম্মদবাজার, ইলামবাজার, দুবরাজপুর, নলহাটি-সহ ১০টি ব্লকে ২৪৭ একর করে মুসুর ডালের প্রদর্শন ক্ষেত্র তৈরি করা হয়েছিল। ফসল আগেই ঘরে উঠেছে। অন্য দিকে, রামপুরহাট ২, সিউড়ি ২, বোলপুর, দুবরাজপুর, খয়রাশোল, মুরারই-সহ ৮টি জায়গায় মুগডালের প্রদর্শন ক্ষেত্র হয়েছে। প্রতি ২৪৭ একর করেই। যেহেতু মুসুর আগেই ঘরে তুলেছেন চাষি, তাই আগে সেটিই কেনা হবে। প্রতি কিলো মুসুরবীজ চাষিদের কাছ থেকে ৮৬ টাকা দরে কিনে নেবে বীজ নিগম।

কৃষি আধিকারিকদের দাবি, এ বার যথেষ্ট ভাল মুসুর উৎপাদিত হয়েছে। খরিফের ধান উঠে গেলেই নভেম্বর মাসে লাগানো হয় মুসুর। জমির আর্দ্রতা কাজে লাগিয়ে ওই জমিতেই মুসুর লাগান চাষি। এ বার সেটাই কীভাবে আরও বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে লাগাতে হয়, কৃষি আধিকারিকেরা তা হাতেকলমে দেখিয়েছিলেন বলে জানাচ্ছেন বোলপুরের সাত্তোর গ্রামের চাষি শেখ নৌশাদ, বড়ডিহা গ্রামের চাষি বিজয় বিশ্বাস এবং উত্তর চণ্ডীপুরের চাষি মঙ্গল মাহাতোরা। তার সাহায্যে বেশ ভাল ফলন হয়েছিল বলেই তাঁদের দাবি।

কৃষি দফতরের হিসাব অনুযায়ী, একর প্রতি মুসুর উৎপাদিত হয়েছে প্রায় সাড়ে চার কুইন্ট্যাল করে। আর্থাৎ ২৪৭ একরে ৯৮.৮ কুইন্ট্যাল মুসুর উৎপাদিত হয়েছে। যার মধ্যে ৫০ হাজার কিলোগ্রাম মুসুরবীজ কেনা হবে। এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানাচ্ছেন চাষিরাও। এতে ডাল চাষে উৎসাহ বাড়বে বলেই তাঁদের মত। যদিও মুসুর সফল ভাবে লাগানো হলেও মুগ চাষে এ বার ততটা যত্ন নেওয়া যায়নি বলে স্বীকার করছেন দফতরের কর্তাদের একাংশ। ফেব্রুয়ারি মাসে (যখন মুগ লাগানোর প্রকৃত সময়) বিধানসভা ভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষণা হওয়ায় জেলা কৃষি দফতরের আধিকারিকেরা প্রত্যেকেই নির্বাচনের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। তাই এমন গুরুত্বপূর্ণ সময়েই দেখভাল করা সম্ভব হয়নি মুসুর চাষে। সঙ্গে মে মাসের শুরু পর্যন্ত বৃষ্টি না হওয়ায় সমস্যা বেড়েছে। তবু উৎপাদিত মুগ কেনার পরিকল্পনা পাকা। যা শুনে দুবরাজপুরের মুগ চাষি সুবোধ ঘোষ, স্বপন বাগদি, প্রদ্যুৎ গড়াইরা বলছেন, ‘‘সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যেই ফসল উঠবে। তখন দফতর বাজারদর থেকে বেশি দামে তা কিনলে কিছুটা আশার।’’

জেলা উপ কৃষি অধিকর্তা (প্রশাসন) সমীর ঘোষ বলছেন, ‘‘নিগম এমনিতে সংশোধিত বীজ-ই কেনে। কিন্তু তা করা সময় সাপেক্ষ। তাই উন্নত গুণমান সম্পন্ন বীজই কিনবে দফতর। উদ্দেশ্য সেই একটাই, ডালচাষের ক্ষেত্র বাড়ানো।’’ নিগম বীজ হিসাবে মুগ, মুসুর কেনা শুরু করলে গোটা ছবিটাই বদলে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখছে কৃষি দফতর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

pulse
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE