বিমল গুরুঙ্গ। ফাইল চিত্র।
রাজ্যের সঙ্গে শান্তি আলোচনায় রাজি বলে দাবি করলেন বিমল গুরুঙ্গ। ৬ মাস পর ফের প্রকাশ্যে এসে দিল্লিতে এক সাক্ষাৎকারে বিমল জানান যে, পাহাড়ে স্থায়ী শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার লক্ষ্যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠক করতে রাজি তিনি|
তিনি আরও জানান যে, গোর্খাদের ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষার জন্য তাঁর আন্দোলন| তিনি সংবিধানের মধ্যে থেকেই এই আন্দোলন করছেন| তাঁকে ফাঁসানোর চেষ্টা করা হচ্ছে|
সকালে দিল্লিতে ‘আত্মপ্রকাশ’ ঘোষণা করে রাজ্যের সঙ্গে আলোচনার বার্তা দিলেন বিমল গুরুঙ্গ। তার পরে বেলা যত গড়িয়েছে পাহাড়-সমতলের রাজনৈতিক শিবিরগুলিতে জোর চর্চা চলছে। তবে প্রকাশ্যে নেতাদের কেউ দাবি করলেন, ‘‘সময় সব বলবে।’’ কারও মন্তব্য, ‘‘নজর রাখছি।’’ মোর্চার ঘরোয়া বিষয় বলে দাবি করে প্রসঙ্গ পাশ কাটালেন কয়েক জন। গুরুঙ্গের প্রকাশ্যে আসা নিয়ে আপাতত নির্দিষ্ট কোনও অবস্থান নিতে রাজি নয় কোন দলই। সকলেই পরিস্থিতি আঁচ করে নিজেদের লাভ-ক্ষতির অঙ্ক কষে উঠতেই আপাতত ব্যস্ত। এমনকী বিনয়-অনীতপন্থীরাও দিনভর আলোচনাতেও আগামী পদক্ষেপ নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি।
আরও পড়ুন:
ব্রাহ্মণ ট্রাস্টে আশ্বাস মমতার দূত রাজীবের
গুরুঙ্গ-বার্তা ছড়িয়ে পড়ার পরেই জরুরি বৈঠকে বসেছিলেন বিনয়-অনীত শিবিরের নেতারা। দার্জিলিং, কার্শিয়াং, কালিম্পং, মিরিকের গুরুঙ্গ অনুগামীদের এক এক করে নিজেদের দলে টেনেছেন এত দিন। বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত বিভ্রান্ত তাঁরাও। একপক্ষের দাবি, একসময়ে দিল্লি ফেরত সুবাস ঘিসিঙ্গকে যেমন শিলিগুড়ির পিনটেল ভিলেজেই অবরোধ করে আটকে দেওয়া হয়েছিল, গুরুঙ্গের পাহাড়ে ঢোকা আটকাতেও তাই করা হোক। অন্য পক্ষের প্রস্তাব, সুপ্রিম কোর্টের পরবর্তী শুনানি কোন পথে যায় তাতে নজর রাখা উচিত। কেননা ইউএপিএ মামলায় অভিযুক্ত গুরুঙ্গ সুপ্রিম কোর্ট থেকে রেহাই না পেয়ে পাহাড়ে পা রাখার চেষ্টা করবেন না বলেই তাঁদের ধারণা। জিটিএ-এর চেয়ারম্যান বিনয় তামাঙ্গ এ দিন কোনও মন্তব্য করতে চাননি। ভাইস চেয়ারম্যান তথা মোর্চার নতুন কমিটির সাধারণ সম্পাদক অনীত থাপা দাবি করেছেন, যথা সময়ে তিনি প্রতিক্রিয়া জানাবেন। গুরুঙ্গ আলোচনার কথা বললেও রাজ্য যে নরম মনোভাব দেখাবে না তার ইঙ্গিত মিলেছে রাজ্যের পর্যটন মন্ত্রী গৌতম দেবের মন্তব্যে। তিনি বলেন, ‘‘রাজ্য সরকার বারবার সকলকে আলোচনায় ডেকেছিল। কিন্তু গুরুঙ্গ মানুষের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন। তাঁর নামে ইউএপিএ ধারায় মামলা রয়েছে। দেশে আইন-বিচারব্যবস্থা রয়েছে, কেউই তার ঊর্ধ্বে নয়।’’
এই মুহূর্তে বিশদে কোনও মন্তব্য করতে চাননি পাহাড়ের অন্যান্য দলের নেতারাও। কয়েক মাস আগেই গুরুঙ্গের ডাকে সাড়া দিয়ে গোর্খাল্যান্ড দাবি আদায়ের যৌথ কমিটিতে সামিল হয়েছিল জিএনএলএফ। গুরুঙ্গের বাড়িতে পুলিশের তল্লাশি নিয়েও বিস্তর অভিযোগ তুলেছিলেন দলের নেতারা। এ দিন জিএনএলএফের মুখপাত্র নীরজ জিম্বার দাবি, ‘‘এটা তো একেবারেই মোর্চার ঘরোয়া বিষয়। আমাদের কী বলার থাকতে পারে! আমরা নিজেদের মতো কর্মসূচি চালাবো।’’ একই সঙ্গে নীরজের দাবি, আগামী ২৮ জানুয়ারি জিএনএলএফের বড়মাপের সভা রয়েছে। ২০০৭ সাল থেকে কী ভাবে পাহাড়ের বাসিন্দাদের সঙ্গে প্রতারণা হয়েছে তা ব্যাখ্যা করা হবে। গোর্খা লিগের গোবিন্দ ছেত্রীর মন্তব্য, ‘‘সময়ই সব বলবে। কারা পাহাড়ের মানুষের আবেগ নিয়ে খেলছে এবং কারা পাহাড়বাসীকে প্রকৃত ভালবাসেন সময়ই তা বলবে।’’
ধীরে চলো লাইনে এগোচ্ছে বামেরাও। বনধ-আন্দোলন চলার সময়ে পাহাড়ে রাজ্য সরকার প্রতিহিংসার রাজনীতি করছেন বলে বারবার অভিযোগ তুলেছিল বামেরা। শিলিগুড়ির মেয়র তথা সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য অশোক ভট্টাচার্য বললেন, ‘‘প্রথম থেকেই আলোচনার পক্ষে আমরা। এর বেশি এখনই আর কিছু বলার নেই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy