সুন্দরবনে বেআইনি নির্মাণকাজ নিয়ে এত দিন দফায় দফায় হুঁশিয়ারি দেওয়া হচ্ছিল। তলব করা হচ্ছিল রাজ্য সরকারের হলফনামা। মাঝেমধ্যে কিছু কিছু অবৈধ নির্মাণ ভাঙার নির্দেশও দিচ্ছিল জাতীয় পরিবেশ আদালত।
এ বার গদখালির পর্যটন নিবাস ভাঙার নির্দেশ না-মানার জন্য রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যসচিব সঞ্জয় মিত্রের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল জারি করল কলকাতায় জাতীয় পরিবেশ আদালতের ডিভিশন বেঞ্চ। শুধু রুল জারি করাই নয়। বিচারপতি প্রতাপ রায় এবং বিশেষ সদস্য পি সি মিশ্রের ডিভিশন বেঞ্চ সোমবার নির্দেশ দিয়েছে, আদালত অবমাননার জন্য কেন সঞ্জয় মিত্রের জরিমানা করা হবে না, আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে তা জানাতে হবে। সেই সঙ্গেই রাজ্যের বর্তমান মুখ্যসচিব বাসুদেব মুখোপাধ্যায়কে আদালতের নির্দেশ, এক মাসের মধ্যে গদখালির পর্যটন নিবাস ভেঙে রিপোর্ট দিতে হবে।
সুন্দরবনের দূষণ নিয়ে নিজে থেকেই মামলা রুজু করেছিল কলকাতার পরিবেশ আদালত। চলতি মাসে ডিভিশন বেঞ্চ মন্তব্য করেছিল, এ রাজ্যে আইন না-মানাটাই দস্তুর হয়ে দাঁড়িয়েছে। আইনশৃঙ্খলা নিয়ে বেশ কয়েকটি মামলায় কিছু দিন ধরেই রাজ্য সরকারকে তুলোধোনা করে আসছে কলকাতা হাইকোর্ট। পরিবেশ সংক্রান্ত মামলার ক্ষেত্রে সেই ভূমিকা পালন করছে পরিবেশ আদালত। পরিবেশ বিধি মেনে চলার ব্যাপারে তারা মাঝেমধ্যেই নানা নির্দেশ দিয়েছে। কিন্তু সরকার তাতে বিশেষ কান দেয়নি বলে অভিযোগ। আদালতের এ দিনের কড়া মনোভাবে তাদের ধূমায়িত ক্ষোভেরই প্রকাশ দেখছে আইনজীবী শিবির।
জাতীয় পরিবেশ আদালতের স্বতঃপ্রণোদিত মামলায় সুন্দরবনের দূষণের সঙ্গে সঙ্গে খোদ রাজ্য সরকারই যে উপকূল বিধি ভেঙে নির্মাণকাজ চালিয়ে যাচ্ছে, সেই তথ্য উঠে এসেছিল। নিয়মবিধির তোয়াক্কা না-করে সুন্দরবনে সরকারের তরফে যে-সব নির্মাণকাজ করা হয়েছে, গদখালিতে নদীর পাড়ে তৈরি পর্যটন নিবাস তার অন্যতম। গত ৬ অগস্ট আদালত ওই পর্যটন নিবাস ভাঙার নির্দেশ দিয়েছিল। কিন্তু সরকারের তরফে কোনও হেলদোল দেখা যায়নি। এই অবস্থায় ৯ সেপ্টেম্বর ফের একই নির্দেশ দেওয়া হয়।
এই মামলার আদালত-বান্ধব সুভাষ দত্ত এ দিন বলেন, ‘‘আদালত বারবার বলা সত্ত্বেও সরকার সেই নির্দেশ মেনে ওই পর্যটন নিবাস ভেঙে ফেলার উদ্যোগ দেখায়নি। বারবার নিজেদের কথাই বলে চলেছে।’’ সুভাষবাবু জানান, গত ডিসেম্বরে সরকার একটি হলফনামা দায়ের করে জানিয়েছিল, গদখালির পর্যটন নিবাসের বদলে ওই বাড়িতে একটি ‘স্যালিনেশন প্ল্যান্ট’ বা লবণাক্ত জল পরিশোধন কেন্দ্র গড়ে তোলা হবে। পর্যটন নিবাসটিই তো বিধি ভেঙে গড়ে তোলা হয়েছে। তা হলে সেখানে কী ভাবে জল পরিশোধন কেন্দ্র গড়া হবে, তা জানতে চেয়েছিল আদালত। সরকার এখনও সেটা জানায়নি।
আদালতের প্রশ্ন, ভাঙার নির্দেশ না-মেনে সরকার বারবার নিজেদের কথাই বলছে কেন? এ দিন ডিভিশন বেঞ্চের মন্তব্য, সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে তখনকার মুখ্যসচিব নির্দেশ পালন করেননি। এমনকী নির্দেশ বদলানোর সুযোগ আছে কি না, সেটা খতিয়ে দেখার আর্জিও জানাননি। উল্টে বারবার সরকারের নিজেদের কথাই বলে গিয়েছেন। আইনজীবী শিবিরের বক্তব্য, সরকারের এই অবস্থান আর বরদাস্ত করা হবে না বলেই আদালত এ দিন কঠোর নির্দেশ দিয়েছে প্রাক্তন মুখ্যসচিবকে।
সরকারের একটি সূত্রের খবর, সুন্দরবন ‘বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ’। তাই এর ১৯টি ব্লকই প্রথম শ্রেণির নিয়ন্ত্রিত উপকূল অঞ্চলের মধ্যে পড়ে। সেই জন্য সেখানে নির্মাণকাজ চালানোর ক্ষেত্রে বহু আইনি বাধা রয়েছে। গদখালিতে নদীর পাড়ে পর্যটন নিবাস তৈরির সময় প্রশাসন সে-দিকে নজর দেয়নি। সুন্দরবনের লোকালয়গুলিকে নিয়ন্ত্রিত উপকূল অঞ্চলের আওতার বাইরে রাখার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকে চিঠিও পাঠিয়েছে রাজ্য। কিন্তু তার কোনও নির্দিষ্ট উত্তর আসেনি বলে সরকারি সূত্রের খবর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy