Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

সহজ দাওয়াই, সুফল পেল এসবিএসটিসি

এক দাওয়াইয়ে ৭০ লক্ষ টাকা আয় বাড়ল দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থার। এত দিন নিজেদের কন্ডাক্টর দিয়ে বাস চালিয়ে এসবিএসটিসি-র আয় হতো কিলোমিটার পিছু ১২-১৩ টাকা। দাওয়াই হিসাবে মাস ছ’য়েক আগে নিজেদের কন্ডাক্টরদের অন্য কাজে সরিয়ে দিয়েছে নিগম। পরিবর্তে ‘আউটসোর্সিং’ করা হয়েছে। শর্ত দেওয়া হয়েছে, কিলোমিটার পিছু নিগমকে অন্তত ২৩ টাকা আয় দিতে হবে। এতে ম্যাজিকের মতো কাজ হয়েছে। নিগম সূত্রের খবর, নতুন ব্যবস্থায় গত ছ’মাসে তাদের আয় বেড়েছে ৭০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত।

অত্রি মিত্র
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ জুলাই ২০১৪ ০২:৩৩
Share: Save:

এক দাওয়াইয়ে ৭০ লক্ষ টাকা আয় বাড়ল দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থার।

এত দিন নিজেদের কন্ডাক্টর দিয়ে বাস চালিয়ে এসবিএসটিসি-র আয় হতো কিলোমিটার পিছু ১২-১৩ টাকা। দাওয়াই হিসাবে মাস ছ’য়েক আগে নিজেদের কন্ডাক্টরদের অন্য কাজে সরিয়ে দিয়েছে নিগম। পরিবর্তে ‘আউটসোর্সিং’ করা হয়েছে। শর্ত দেওয়া হয়েছে, কিলোমিটার পিছু নিগমকে অন্তত ২৩ টাকা আয় দিতে হবে। এতে ম্যাজিকের মতো কাজ হয়েছে। নিগম সূত্রের খবর, নতুন ব্যবস্থায় গত ছ’মাসে তাদের আয় বেড়েছে ৭০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত।

কী করে সম্ভব হল? নিগমের দাবি, একটি বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে কন্ডাক্টর আউটসোর্সিং করে বাসের যাত্রাপথে চুরি আটকানো গিয়েছে। পাশাপাশি, পরিষেবা নিশ্চিত করায় যাত্রীও বেড়েছে। আর এই দুইয়ের হাত ধরেই এসেছে সাফল্য।

রাজ্যের পরিবহণ নিগমগুলিকে ছ’মাসের মধ্যে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর জন্য ২০১৩ সালে রোডম্যাপ তৈরির নির্দেশ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার পর দু’বছর কেটে গেলেও তিনটি নিগম এখনও লোকসানের ধাক্কায় আকণ্ঠ ডুবে রয়েছে। ব্যতিক্রম এসবিএসটিসি, যার সাফল্য রীতিমতো নজরকাড়া বলেই মনে করছেন পরিবহণ কর্তারা।

কলকাতা থেকে আসানসোল, দুর্গাপুর, বর্ধমান, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া এবং আরামবাগ রুটে নিয়মিত বাস চালায় দক্ষিণবঙ্গ পরিবহণ সংস্থা। নিগমের এক কর্তার কথায়, “আগে বাস যাতায়াতের নির্দিষ্ট কোনও সময় ছিল না। কখনও ১৫ মিনিট দাঁড়ালেই বাস মিলত। কখনও আধ ঘণ্টা দাঁড়িয়েও বাসের দেখা পাওয়া যেত না। বাধ্য হয়ে যাত্রীরা অন্য ভাবে গন্তব্যে পৌঁছনোর চেষ্টা করতেন।”

যাত্রী পরিষেবা নিশ্চিত করতে এখানেই বদল এনেছিল নিগম। বেসরকারি সংস্থাকে দিয়ে বাস চালানোর আগে শর্ত দেওয়া হয়েছিল, সব রুটে প্রতি পনেরো মিনিট অন্তর এবং ব্যস্ত সময়ে পাঁচ মিনিট অন্তর বাস পাওয়া নিশ্চিত করতে হবে। এতেই কাজ হয়েছে। বাস না পেয়ে অন্য কোনও ভাবে যাওয়ার চেষ্টাও করেন না তাঁরা। ওই কর্তার কথায়, “সময়ে বাস চালিয়ে গত ছ’মাসে যাত্রী সংখ্যা কয়েক গুণ বেড়ে গিয়েছে। আয় বাড়ার এটাও একটা কারণ।”

নিগম সূত্রে খবর, সব চেয়ে জোর দেওয়া হয়েছিল চলতি-পথে চুরি আটকাতে। আগে কন্ডাক্টরের হাতে পুরো ভাড়া না দিয়ে সামান্য কিছু গুঁজে দিয়ে অনেক যাত্রী গন্তব্যে পৌঁছে যেতেন। তাঁদের টিকিট দেওয়া হতো না। তাই ওই টাকা নিগমের ভাঁড়ার পর্যন্ত পৌঁছত না। চুরি আটকাতে বেশ কয়েক বার টিকিট পরীক্ষক নিয়োগ করেও অবস্থা বদলানো যায়নি। অগত্যা আয়ের পথ নিশ্চিত করতে এখন ব্যবস্থাটাই বদলে দিয়েছে নিগম। এ জন্য বেসরকারি সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। নিগমের ওই কর্তা বলেন, “শর্ত ছিল, কিলোমিটার পিছু অগ্রিম ২৩ টাকা করে দিয়ে ওই সংস্থা টিকিট নেবে। সেটাই করছে তারা।”

এসবিএসটিসি-র নিয়মিত বাস চলে গড়ে সাড়ে ৩০০ থেকে ৩৭৫টি। কর্মীর সংখ্যা ২১০০-র কাছাকাছি। বাস-পিছু কর্মীর সংখ্যা প্রায় ছ’জন। এই পরিসংখ্যান আগে যা ছিল, এখনও তাই আছে। আগে নিগমের রোজগার হতো মাসে প্রায় সাড়ে ছ’কোটি টাকা। ব্যবস্থার পরিবর্তন করে তা সাত কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। অতিরিক্ত আয় মাসে ৬০-৭০ লক্ষ টাকা। আয় বাড়লেও এসবিএসটিসি-র জন্য ভর্তুকি গুনতে হচ্ছে সরকারকে। কেন?

নিগমের হিসেব বলছে, এসবিএসটিসি-তে কর্মীদের বেতন দিতে মাসে সাড়ে ছ’কোটি টাকা এবং জ্বালানি খরচ লাগে সাড়ে চার কোটি টাকা। এর মধ্যে পাঁচ কোটি ভর্তুকি দেয় সরকার। নিগমের নিজস্ব আয় গড়ে সাত কোটি। সব মিলিয়ে আয় এক কোটি টাকার কাছাকাছি। ওই অর্থ বাস রক্ষণাবেক্ষণ এবং অন্য কাজে লাগে। পরিবহণ দফতরের এক কর্তা বলেন, “অন্য নিগমগুলি কর্মীদের বেতন দিতেই হিমশিম খাচ্ছে। বাসের রক্ষণাবেক্ষণে খরচ করা তাদের কাছে স্বপ্ন। কিন্তু আয় বাড়ায় এসবিএসটিসি তা সামলে উঠছে।” তাঁর কথায়, জ্বালানির দাম বৃদ্ধির সঙ্গে সরকার বাসের ভাড়া বাড়ালে এসবিএসটিসি-কে হয়তো ভর্তুকিও দিতে হতো না। তারা স্বাবলম্বী হয়ে উঠত।

মাত্র ছ’মাসে এসবিএসটিসি এই সাফল্য দেখানোয় প্রশ্ন উঠেছে, সরকারের বাকি নিগমগুলি কেন তা পারছে না?

(চলবে)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

sbstc outsource profit
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE