Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

রাজ্যে ছড়াচ্ছে জঙ্গিদের জাল, দুশ্চিন্তায় দিল্লি

কলকাতা তথা পশ্চিমবঙ্গে পাকিস্তানি গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই যে ভাবে জাল ছড়াচ্ছে, তাতে উদ্বিগ্ন নরেন্দ্র মোদী সরকার। জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল ইতিমধ্যেই কলকাতা থেকে ধৃত ইরশাদ আনসারি, আসফাক ও মহম্মদ জাহাঙ্গির সম্পর্কে বিস্তারিত রিপোর্ট তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাকে। আইএসআই পশ্চিমবঙ্গ, অসম ও উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলিতে কী ভাবে অস্থিরতা তৈরি করতে চাইছে, তার তথ্যপ্রমাণ-সহ একটি ‘ডসিয়ার’ তৈরি করছেন ডোভাল।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৪:০১
Share: Save:

কলকাতা তথা পশ্চিমবঙ্গে পাকিস্তানি গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই যে ভাবে জাল ছড়াচ্ছে, তাতে উদ্বিগ্ন নরেন্দ্র মোদী সরকার।

জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল ইতিমধ্যেই কলকাতা থেকে ধৃত ইরশাদ আনসারি, আসফাক ও মহম্মদ জাহাঙ্গির সম্পর্কে বিস্তারিত রিপোর্ট তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাকে। আইএসআই পশ্চিমবঙ্গ, অসম ও উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলিতে কী ভাবে অস্থিরতা তৈরি করতে চাইছে, তার তথ্যপ্রমাণ-সহ একটি ‘ডসিয়ার’ তৈরি করছেন ডোভাল। ওই ‘ডসিয়ার’টি আন্তর্জাতিক মঞ্চে পাকিস্তানের সন্ত্রাসে মদত প্রমাণে কাজে লাগাতে চায় নয়াদিল্লি।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রের খবর, পূর্ব ভারতে আইএসআই-এর কার্যকলাপ সম্পর্কে ইতিমধ্যেই একটি নথি তৈরি করিয়েছেন ডোভাল। গত অগস্টে পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা সরতাজ আজিজের সঙ্গে নির্ধারিত বৈঠকের আগে ওই নথি তৈরি করা হয়েছিল। তাতে পূর্ব ভারতে আইএসআই-এর কার্যকলাপ সম্পর্কে সবথেকে বড় প্রমাণ ছিল, গত বছর অক্টোবরে বর্ধমানের খাগড়াগড়ে বিস্ফোরণের ঘটনা। গোয়েন্দা রিপোর্ট অনুযায়ী, ওই বিস্ফোরণে জড়িত জামাত-উল-মুজাহিদিন-বাংলাদেশ (জেএমবি) আসলে আইএসআই-এর নির্দেশেই পশ্চিমবঙ্গ, অসম ও বাংলাদেশে সক্রিয় হয়ে ওঠে। ডোভালের পরিকল্পনা ছিল, তথ্যপ্রমাণ সমেত এ বিষয়ে পাক নিরাপত্তা উপদেষ্টার ব্যাখ্যা চাইবেন তিনি।

শেষ পর্যন্ত জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা স্তরের ওই বৈঠক বাতিল হয়ে যায়। কিন্তু আইএসআই-এর তৎপরতা নিয়ে আন্তর্জাতিক মঞ্চে সরব হওয়ার রণকৌশল থেকে সরছে না কেন্দ্র। গোয়েন্দা সূত্রের বক্তব্য, আইএসআই এক দিকে পশ্চিমবঙ্গ ও অসমের মতো রাজ্যে অস্থিরতা তৈরি করতে চাইছে। অন্য দিকে এই রাজ্যগুলিকে ভিত্তি করে বাংলাদেশে নাশকতা তৈরির চেষ্টাও চালাচ্ছে তারা। শেখ হাসিনার জমানায় সন্ত্রাস দমনে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে বোঝাপড়া মজবুত হওয়ার পর থেকেই এই অঞ্চলে আইএসআই আরও বেশি সক্রিয় হয়ে উঠেছে বলে দাবি গোয়েন্দাদের। এ বার কলকাতা থেকে ইরশাদ আনসারিদের চর-চক্র ধরা পড়ার পর পূর্ব ভারতে আইএসআই-এর তৎপরতা এবং জঙ্গি-জাল সম্পর্কে নতুন করে খোঁজখবর শুরু করেছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের বক্তব্য, বর্ধমানের আগে জেহাদি জঙ্গি-সংগঠনগুলি সে ভাবে নাশকতা না ঘটালেও কলকাতা তথা পশ্চিমবঙ্গ বরাবরই আইএসআই-এর আঁতুড়ঘর তথা নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে কাজ করে এসেছে। বামফ্রন্ট জমানায় মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য এ বিষয়ে উদ্বেগও প্রকাশ করেছিলেন। পশ্চিমবঙ্গের ভৌগোলিক অবস্থানই এর বড় কারণ। উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলি তো বটেই, বাংলাদেশের সঙ্গেও যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম হওয়ায় পশ্চিমবঙ্গ বহু দিন ধরেই আইএসআই-জঙ্গিদের নজরে। ২০০২-এর মার্কিন তথ্যকেন্দ্রে হামলায় মূল ষড়যন্ত্রী আফতাব আনসারির সঙ্গে কলকাতার আসিফ রেজা খানের যোগাযোগের বিষয়টি সামনে আসার পরে এটা আরও স্পষ্ট হয়।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কর্তারা বলছেন, গত বছর খাগড়াগড়ে বিস্ফোরণের আগে-পরে পশ্চিমবঙ্গে বড় কোনও নাশকতা না হলেও বেশ কিছু দিন ধরেই এই রাজ্য থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা তুলছে আইএসআই মদতপুষ্ট জঙ্গি সংগঠনের স্লিপার সেলগুলি। বড়বাজার থেকে বন্দর এলাকা— বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে ছড়িয়ে থাকা স্লিপার সেলের সদস্যরা কখনও বিভিন্ন উৎসবের নাম করে, কখনও তোলাবাজির মাধ্যমে টাকা তুলছে। সেই টাকাই পরে গোটা দেশে জেহাদি কার্যকলাপে ব্যবহৃত হয়। এমনকী হাত ঘুরে বিদেশেও আল কায়দার মতো জঙ্গি সংগঠনগুলির তহবিলে জমা হয়।

আফতাব আনসারিকে দুবাইয়ে গ্রেফতার করে ভারতে ফেরানোর ক্ষেত্রে যিনি প্রধান ভূমিকা নিয়েছিলেন, সেই অবসরপ্রাপ্ত আইপিএস অফিসার নীরজ কুমার তাঁর সদ্যপ্রকাশিত বইয়ে লিখেছেন, খাদিম-কর্তা পার্থ রায়বর্মন অপহরণ কাণ্ডে মুক্তিপণের ১ লক্ষ ডলারের একটা বড় অংশ নানা হাত ঘুরে প্রথমে পৌঁছয় ওমর শেখ-এর কাছে। সেখান থেকে মহম্মদ আট্টার কাছে। আমেরিকায় ৯/১১-র বিমান হামলায় প্রধান ভূমিকা ছিল এই আট্টারই। আর ওমর শেখ হল সেই জঙ্গি, যাকে ১৯৯৯ সালে কন্দহর-কাণ্ডের সময় বিমান ছিনতাই করে ছাড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। আসিফ রেজা খানকে জেরা করে নীরজ জানতে পেরেছিলেন, সে এক দিকে আফতাব আনসারির দলে থেকে ভাস্কর পারেখ, পার্থ রায়বর্মনের মতো ব্যবসায়ীদের অপহরণ করে জেহাদি কার্যকলাপের জন্য টাকা তুলেছে। আবার পাকিস্তানে লস্করের সদর দফতরে গিয়ে জেহাদের প্রশিক্ষণও নিয়ে এসেছে।

গোয়েন্দারা বলছেন, আগে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে অনেক ফাঁকফোকর থাকায় আইএসআই-এর পক্ষে সন্ত্রাস পাচার করা তুলনায় সহজ ছিল। তা সে অস্ত্র, বিস্ফোরকই হোক বা কালো টাকা। এখন সীমান্ত বরাবর অনেকটা অংশে কাঁটাতার বসে যাওয়ায় তাদের কিছুটা সমস্যা হলেও এখনও সীমান্তে যেটুকু ফাঁকফোকর রয়েছে, সেগুলিকে কাজে লাগাতেই সীমান্তের ওপারে বাংলাদেশ এবং সীমান্তের এ দিকে পশ্চিমবঙ্গে জাল ছড়াচ্ছে আইএসআই।

নজরে ২ সেনা

জম্মুর আইএসআই চরচক্রে এ বার দুই সেনা জওয়ানের ভূমিকা নিয়েও তদন্ত শুরু করল পুলিশ। রবিবার ধৃত পাক চর কাইফাতুল্লা খানের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ আছে বলে ধারণা গোয়েন্দাদের। আইএসআইকে গোপন তথ্য পাচারের অভিযোগে জম্মুর রাজৌরি এলাকার বাসিন্দা কাইফাতুল্লা খানের সঙ্গে গ্রেফতার হয়েছে তার আত্মীয় আব্দুল রশিদ। সে বিএসএফের গোয়েন্দা শাখার কর্মী। দিল্লি পুলিশ জানিয়েছে, কাইফাতুল্লাকে জেরা করার পরে জম্মুতে মোতায়েন দুই সেনা জওয়ানের ভূমিকা নিয়েও সন্দেহ দেখা দিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করতে জম্মু-কাশ্মীরে যাচ্ছে দিল্লি পুলিশের একটি দল। পুলিশের সন্দেহ, ওই দুই জওয়ানের এক জনও কাইফাতুল্লার আত্মীয়। দিল্লির পাক হাইকমিশনের এক কর্মীর কাইফাতুল্লাকে সাহায্য করার কথা ছিল বলে জানতে পেরেছিল পুলিশ। কিন্তু তার পরিচয় জানা যায়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE