Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪

পাহাড়ে আধাসেনা সরলে যাবে রাজ্যের দক্ষ পুলিশ

কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনী সরে গেলেও সেই জায়গা ফাঁকা রাখা হবে না। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে পাহাড়় থেকে সাত কোম্পানি আধাসেনা সরে গেলে সেই জায়গা নেবে রাজ্য সশস্ত্র পুলিশের বিশেষ দক্ষ বাহিনী।

ছবি: সংগৃহীত।

ছবি: সংগৃহীত।

সুরবেক বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ অক্টোবর ২০১৭ ০৩:৪০
Share: Save:

দার্জিলিং ছন্দে ফিরছে, তবে সুরক্ষায় ঢিলে দিতে রাজি নয় রাজ্য সরকার।

তাই কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনী সরে গেলেও সেই জায়গা ফাঁকা রাখা হবে না। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে পাহাড়় থেকে সাত কোম্পানি আধাসেনা সরে গেলে সেই জায়গা নেবে রাজ্য সশস্ত্র পুলিশের বিশেষ দক্ষ বাহিনী। যাদের অধিকাংশই রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চলে মাওবাদী দমনের জন্য প্রশিক্ষিত। তবে মাওবাদীদের মোকাবিলায় গড়া বাহিনীর কর্মীদের দিয়ে পাহাড়ি এলাকায় কাজ কতটা কী হবে, সেই বিষয়ে সংশয়ের সুর বাজছে পুলিশের অন্দরেই।

শীর্ষ আদালতের নির্দেশে পাহাড়ে থাকা ১৫ কোম্পানি আধাসেনার মধ্যে সাত কোম্পানি ফিরে যেতে শুরু করেছে। রাজ্য পুলিশের এক শীর্ষ কর্তা রবিবার বলেন, ‘‘ওই কেন্দ্রীয় বাহিনীর জায়গায় সিআইএফ, স্ট্র্যাকো, ইএফআরের মতো রাজ্য পুলিশের বিশেষ ভাবে প্রশিক্ষিত কিছু বাহিনীকে দার্জিলিঙে পাঠানো হবে।’’ ওই অফিসারের বক্তব্য, দার্জিলিং এখন কিছুটা শান্ত হলেও পরিস্থিতিকে হাল্কা ভাবে নেওয়ার কোনও প্রশ্নই নেই। তাই আধাসেনা সরে গেলে সেই জায়গায় বিশেষ ভাবে দক্ষ বাহিনীকে পাঠাতেই হবে।

পুলিশি সূত্রের খবর, পাহাড় ছাড়ার কথা সাত কোম্পানি অর্থাৎ কমবেশি ৭০০ আধাসেনার। সেই শূন্যস্থানের পুরোটা না-হলেও রাজ্যের তিনটি বিশেষ বাহিনী মিলিয়ে ওই সংখ্যার কাছাকাছি পুলিশকে আধাসেনার জায়গা নিতে পাহাড়ে পাঠানো হবে। এডিজি পদমর্যাদার এক অফিসারের কথায়, ‘‘পাহাড় এবং কিছুটা জঙ্গল নিয়েই দার্জিলিং। তাই এলাকা ছোট হলেও বড় বাহিনীর প্রয়োজন। তার উপরে যাদের গতিবিধি আটকানো আমাদের লক্ষ্য, পাহাড়ি তল্লাট তারা হাতের তেলোর মতো চেনে। তাদের মোকাবিলার জন্য দক্ষতা চাই। দরকার যথেষ্ট রক্ষীরও।’’

তবে পুলিশেরই একটি অংশের প্রশ্ন, মাওবাদী দমনের জন্য তৈরি রাজ্য পুলিশের কাউন্টার ইনসারজেন্সি ফোর্স বা সিআইএফ এবং স্ট্র্যাকো বা স্পেশ্যালি ট্রেনড আর্মড কোম্পানিজ-এর সদস্যদের পাহাড়ে পাঠিয়ে আদৌ কোনও লাভ হবে কি? পাহাড়ে ঠান্ডা পড়তে শুরু করেছে। এই ধরনের আবহাওয়া এবং ভৌগোলিক অবস্থায় যুঝতে যে-প্রশিক্ষণ দরকার, স্ট্র্যাকো বা সিআইএফের তা নেই। তারা মূলত রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চলে লাল মাটি ও জঙ্গলের সঙ্গেই পরিচিত। এই দু’টি বাহিনী ‘অপারেশন’ বা লড়াই করতে দক্ষ বলে ধরা হয়। আইনশৃঙ্খলার সমস্যা মোকাবিলার প্রশিক্ষণ তাদের নেই। তবে ইএফআরের সেটা আছে।

রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, পাহাড়ে এ বার অশান্তি শুরু হওয়া ইস্তক সিআইএফের প্রায় ২০০ জনকে সেখানে পাঠানো হয়েছে। এই ক’মাসে তাঁরা পরিস্থিতির সঙ্গে কিছুটা সড়গড় হয়ে উঠেছেন। কিন্তু এ বার সিআইএফের আরও সাত-আটটি ইউনিট অর্থাৎ দুই শতাধিক সদস্যকে পশ্চিম মেদিনীপুর, পুরুলিয়া ও দুর্গাপুর থেকে পাঠানো হবে। পাহাড়ি অঞ্চলে কাজ করার প্রশিক্ষণ তাঁদের নেই। তার উপরে ঠান্ডা জাঁকিয়ে পড়বে শীঘ্রই। তাই আধাসেনার শূন্যস্থান রাজ্যের এই বিশেষ বাহিনীর কর্মীরা কতটা কার্যকর ও দক্ষ ভাবে পূরণ করতে পারবেন, সেই সংশয়ে ভুগছে পুলিশেরই একটি অংশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE