Advertisement
০৪ মে ২০২৪

আসছেন ২১ পুলিশ পর্যবেক্ষক

ভোটের আগে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তর অভিযোগ ওঠায় কড়া পদক্ষেপ করার আশ্বাস দিয়েছিলেন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার নসীম জৈদী। সেই অনুযায়ী প্রতিটি জেলার জন্য এ বার এক জন করে পুলিশ পর্যবেক্ষক পাঠাচ্ছে কমিশন, যা এক কথায় নজিরবিহীন।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ মার্চ ২০১৬ ০৩:২৯
Share: Save:

ভোটের আগে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তর অভিযোগ ওঠায় কড়া পদক্ষেপ করার আশ্বাস দিয়েছিলেন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার নসীম জৈদী। সেই অনুযায়ী প্রতিটি জেলার জন্য এ বার এক জন করে পুলিশ পর্যবেক্ষক পাঠাচ্ছে কমিশন, যা এক কথায় নজিরবিহীন।

রাজ্যের অতিরিক্ত মুখ্য নির্বাচনী অফিসার দিব্যেন্দু সরকার বুধবার জানান, ভোটের আগে রাজ্যে মোট ২১ জন পুলিশ পর্যবেক্ষক আসছেন। এর মধ্যে কলকাতার ভোটের জন্য থাকবেন দু’জন (উত্তর ও দক্ষিণ)। এ ছাড়া দ্বিতীয় দিনের ভোটে তিন জেলা বাঁকুড়া, বর্ধমান ও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার কিছু কিছু এলাকায় দু’জন থাকছেন বিশেষ নজরদারি চালাতে। নির্বাচন কমিশনের এক কর্তা জানান, ২০১১ সালের বিধানসভা ভোটে রাজ্যে ৪ জন পুলিশ পর্যবেক্ষক পাঠানো হয়েছিল। পরিস্থিতি বিচার করে এ বার আসছেন ২১ জন।

কমিশন সূত্রের খবর, মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন থেকে ভোটের দিন পর্যন্ত পুলিশ পর্যবেক্ষকরা সংশ্লিষ্ট জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উপর নজরদারি করবেন। প্রয়োজনে হস্তক্ষেপও করবেন। এ ছাড়াও প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে এলাকার গুরুত্ব অনুযায়ী পুলিশ মোতায়েনে ভূমিকা নেবেন তাঁরা।

দিব্যেন্দুবাবু জানিয়েছেন, রাজ্যের ২৯৪টি বিধানসভা কেন্দ্রের জন্যে মোট ১৯৩ জন সাধারণ পর্যবেক্ষক এবং ৬৬ জন হিসেব পর্যবেক্ষক নিযুক্ত করেছে কমিশন। নিয়ম অনুযায়ী, নির্বাচনের বিজ্ঞপ্তি জারির দিন থেকে ভোট শেষ হওয়া পর্যন্ত হিসাব পর্যবেক্ষক থাকবেন। সাধারণ পর্যবেক্ষকরা আসবেন সংশ্লিষ্ট বিধানসভা কেন্দ্রে মনোনয়ন জমা দেওয়ার শেষ দিনে। তাঁরা ফিরে যাবেন ভোটের পরদিন। আবার তাঁরা আসবেন ভোট গণনার আগে।

কমিশনের এক কর্তা জানান, প্রার্থীরা নিয়ম মেনে টাকা খরচ করছেন কি না, কোনও বেআইনি আর্থিক লেনদেন হচ্ছে কি না— তা দেখবেন হিসেব পর্যবেক্ষকরা। আর অবাধ ও সুষ্ঠু ভোট নিশ্চিত করার দায়িত্ব থাকবে সাধারণ পর্যবেক্ষকদের উপর। এ ছাড়াও বিশেষ পর্যবেক্ষক পাঠাবে কমিশন।

রাজনৈতিক দল, রাজ্য প্রশাসন এবং ডিএম-এসপিদের সঙ্গে দু’দিন ধরে বৈঠক করে মঙ্গলবার ফুল বেঞ্চ ফিরে গিয়েছে দিল্লি। যাওয়ার আগে কয়েক জন ডিএম-এসপি কে বদলি করার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার নসীম জৈদী। তার পর রাত পোহাতেই বুধবার নবান্ন থেকে বিভিন্ন জেলা সদরে বদলি নিয়ে জল্পনা তুঙ্গে ওঠে। শেষ পর্যন্ত কাদের ঘাড়ে বদলির খাঁড়া নামবে, তা নিয়ে গোটা প্রশাসনে থরহরিকম্প চলতে থাকে। কিন্তু যে সব আইএএস-আইপিএসের বিরুদ্ধে বিরোধীরা অভিযোগ তুলেছেন, কমিশনও যাঁদের কাজে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে, এ দিন রাত পর্যন্ত তাঁদের কাউকেই বদলি করার নির্দেশ দিল্লি থেকে আসেনি।

তবে স্বরাষ্ট্র দফতর ও রাজ্য পুলিশের শীর্ষ মহল থেকে দাবি করা হয়েছে, অভিযুক্তেরা কেউই পক্ষপাতমূলক আচরণ করছেন না। ওই আইপিএস অফিসারেরা নিজেরা অবশ্য কেউ কোনও মন্তব্য করতে চাননি। রাজ্য পুলিশের এক শীর্ষ কর্তা যেমন বলেছেন, বিধাননগর পুলিশের কমিশনার-সহ কয়েক জন কর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ অমূলক। নির্বাচন কমিশনের বৈঠকে বিধাননগর কমিশনারেটের ভূমিকা নিয়েও কোনও প্রশ্ন ওঠেনি।

পুলিশ সূত্রের খবর, বিধাননগরের গোয়েন্দা প্রধান কঙ্করপ্রসাদ বারুই ঘনিষ্ঠ মহলে জানিয়েছেন, পুরভোটে গণ্ডগোলের সময়ে তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে শাসক দলের নেতাদের বলেন— তাঁরা যেন কর্মীদের সংযত করেন। না হলে পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে হবে। ঘটনাস্থল থেকে ১৮ জন গ্রেফতারও হয়।

আবার উত্তর ২৪ পরগনার পুলিশ সুপার তন্ময় রায়চৌধুরী সম্পর্কে রাজ্য পুলিশের এক শীর্ষ কর্তা বলছেন, ‘‘মধ্যমগ্রামের জোড়া খুন-সহ বেশ কয়েকটি অপরাধের ঘটনায় অভিযুক্তেরা শাসক দলের হলেও এসপি-র নেতৃত্বেই তাঁদের ধরা হয়। তাই পক্ষপাতের প্রশ্ন অমূলক!’’

কলকাতার পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমার সম্পর্কে স্বরাষ্ট্র দফতরের এক কর্তার মন্তব্য— ‘‘এমন দক্ষ এক জন অফিসারকে নিয়ে পক্ষপাতের প্রশ্ন তোলা অনুচিত। কেউ দেখাতে পারবেন, নির্বাচনে রাজীব শাসক দলের সুবিধে করে দিতে কাজ করেছেন?’’

কমিশন সূত্রের অবশ্য খবর, ঠিক সময়েই বদলির নির্দেশ পৌঁছবে। এবং সেই তালিকায় প্রথম দিকে রয়েছেন মুর্শিদাবাদের জেলাশাসক ওয়াই রত্নাকর রাও। মুর্শিদাবাদে তিনি জেলা তৃণমূলের ‘সেকেন্ড ইন কম্যান্ড’ হিসেবে বিরোধীদের কাছে পরিচিত। জেলা কংগ্রেসের এক তাবড় নেতার কথায়, ‘‘রত্নাকর আছে জেলায়, তাই তৃণমূলকে রোখে কে!’’

জেলা কংগ্রেসের অভিযোগ, আগে তৃণমূলের এক প্রভাবশালী রাজ্যসভার সদস্যের অনুগত ছিলেন জেলাশাসক রত্নাকর। কিন্তু সেই সাংসদ মাঝে দলনেত্রীর আস্থা হারানোর পরে জেলাশাসক এখন তৃণমূলের এক সাংসদের দিকে ঝুঁকেছেন। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এই দুই নেতা ছাড়াও তাঁর পছন্দের তালিকায় জেলা তৃণমূলের আরও কিছু নেতা-নেত্রীও রয়েছেন। তাঁদের যে ঘনঘন ফোনও করেন তিনি, সে অভিযোগও বিরোধীদের অনেক দিনের। রত্নাকরকে কমিশনের সতর্ক করার কারণ এগুলোই।

এ ছাড়াও তৃণমূলের বেশ কয়েক জন বিধায়কের ‘এমএলএ-ল্যাড’-এর টাকা দ্রুত ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ করেছেন জেলার এক নির্দল প্রার্থী। তিনি বলেন, ‘‘সরকারি অনুষ্ঠানে শাসক দলের মেজ-সেজ নেতাদের নিমন্ত্রণও রত্নাকর রাওয়ের সুপারিশেই হয়।’’

তবে জেলা প্রশাসনের একটি সূত্র জানাচ্ছে, অন্য দলের নেতাদের সঙ্গেও নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন রত্নাকর। জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, ‘‘ডিএম বরাবরই নেতাদের ছুঁয়ে চলেন। কংগ্রেসের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গেও তাঁর যোগ আছে।’’

জেলাশাসকের কথাতেও সেই ইঙ্গিত মিলেছে। তিনি বলেন, ‘‘প্রশাসনিক কাজকর্ম সামলাতে আমি সব দলের নেতাদের সঙ্গেই কথা বলি। শুধু যে শাসক দলের নেতাদের সঙ্গেই আমার ফোনালাপ হয়েছে— এমন কথা কিন্তু কমিশনও বলেনি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Assembly Election 2016
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE