Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
ফাঁকফোকর নিয়ে বিতর্ক
Education

কোন সাহসে নির্দেশে কান দিচ্ছে না স্কুল

মূল যে-প্রশ্নটিকে ঘিরে বিতর্ক, সেটি হল, প্রধান শিক্ষক সাময়িক ভাবে না-থাকলে বা অবসর নিলে নতুন নিয়োগের আগে পর্যন্ত স্কুলের দায়িত্ব কার?

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

সুপ্রিয় তরফদার
শেষ আপডেট: ২১ মে ২০১৮ ০৩:৪৩
Share: Save:

মাস দুয়েক আগে স্কুলশিক্ষা দফতরের জারি করা একটি নির্দেশ কেন সব স্কুলে বলবৎ হচ্ছে না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। তার থেকেও এই প্রশ্ন এবং এই বিতর্ক জোরদার হয়েছে যে, নিয়ন্ত্রক দফতরের নির্দেশে কর্ণপাত না-করার মতো সাহস অনেক স্কুল দেখাচ্ছে কী করে? তা হলে কি নির্দেশ এবং তা রূপায়ণের মধ্যে কোনও ফাঁক ও ফাঁকির সুযোগ থাকছে?

মূল যে-প্রশ্নটিকে ঘিরে বিতর্ক, সেটি হল, প্রধান শিক্ষক সাময়িক ভাবে না-থাকলে বা অবসর নিলে নতুন নিয়োগের আগে পর্যন্ত স্কুলের দায়িত্ব কার? প্রথা বলা হোক বা রেওয়াজ, সহকারী প্রধান শিক্ষকেরই সেই দায়িত্ব পালন করার কথা। কিন্তু সব ক্ষেত্রে সেটা হচ্ছিল না। তাই গত মার্চে এক গেজেট বিজ্ঞপ্তি জারি করে রাজ্যের স্কুলশিক্ষা দফতর স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছিল, প্রধান শিক্ষকের অনুপস্থিতিতে সেই দায়িত্ব পালন করবেন সহ-প্রধান শিক্ষক।

কিন্তু সেই নিয়ম সব স্কুলে মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ শিক্ষকদের। এই অবস্থায় প্রশ্ন ও বিতর্কের পাশাপাশি ডিআই বা জেলা স্কুল পরিদর্শকেরা সব স্কুলেই বাধ্যতামূলক ভাবে নিয়মটি চালু করতে উদ্যোগী হয়েছেন। প্রতিটি স্কুলে সেই নির্দেশ পাঠাতে শুরু করেছেন তাঁরা।

হাওড়া ডোমজুড়ের ঝাপড়দহ ডিউক ইনস্টিটিউশনের প্রধান শিক্ষক শ্যামসুন্দর দত্ত অবসর নেন গত ৩১ জানুয়ারি। অভিযোগ, সেই সময় ২৬ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন সহ-প্রধান শিক্ষক পার্থসারথি পণ্ডিতকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক করা হয়নি। তাঁর জায়গায় ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা করা হয় তুলনামূলক ভাবে শিক্ষকতায় কম অভিজ্ঞতাসম্পন্ন এক শিক্ষিকাকে। এবং তা নিয়েই অচিরেই শুরু হয় বিতর্ক। মার্চে স্কুলশিক্ষা দফতর গেজেট বিজ্ঞপ্তি জারি করার পরে বিতর্ক আরও বেড়ে যায়। সেই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রধান শিক্ষকের অনুপস্থিতিতে সেই দায়িত্ব পালন করবেন সহ-প্রধান শিক্ষক। প্রশ্ন ওঠে, বিজ্ঞপ্তি সত্ত্বেও ডিউক ইনস্টিটিউশনে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে অন্য ব্যবস্থা হল কেন?

হাওড়ার ডিআই (মাধ্যমিক) শান্তনু সেন প্রথমে বলেন, ‘‘মার্চে স্কুলশিক্ষা দফতরের সচিবালয় নতুন নিয়ম প্রকাশ করে। কিন্তু দফতরের কমিশনারের কাছ থেকে নির্দেশ আসার আগে সেটি চালু করা সম্ভব নয়।’’ এই মন্তব্যে অন্য ডিআই-রা বিস্মিত। সম্প্রতি মুর্শিদাবাদ-সহ বেশ কিছু জেলায় ডিআই-রা স্কুলগুলিতে নতুন নিয়ম চালু করার নির্দেশ দিয়েছেন। মুর্শিদাবাদের ডিআই পূরবী দে বিশ্বাস বলেন, ‘‘গেজেট বিজ্ঞপ্তি জারি হলে সেই নিয়ম চালু করতে কোনও বাধা থাকে না। কমিশনারের নির্দেশ এ ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক নয়।’’ তার পরেই শান্তনুবাবু বলেন, ‘‘সোমবার সব স্কুলের কাছে এই নতুন নিয়ম চালু করার নির্দেশ পাঠানো হবে।’’ স্কুলশিক্ষা দফতরের এক কর্তার মন্তব্য, প্রায় দু’মাস আগে জারি করা বিজ্ঞপ্তি কেন সব স্কুল মানেনি, সেটা বিস্ময়কর। ডিআই-দের আরও আগে সক্রিয় হওয়া উচিত ছিল।

গেজেট বিজ্ঞপ্তি সত্ত্বেও যে অনেক ক্ষেত্রে সেই নির্দেশ অনুযায়ী কাজ হচ্ছে না, তার মূলে স্কুলের পরিচালন সমিতির অবাঞ্ছিত হস্তক্ষেপ আছে বলে শিক্ষকদের একাংশের অভিযোগ। সিপিআই-সমর্থক শিক্ষক-নেতা স্বপন মণ্ডল বলেন, ‘‘স্কুলশিক্ষা দফতরের নির্দেশ স্কুল মানছে না, এটা বিস্ময়কর। সেই নির্দেশ মানাতে ডিআই-দের উদ্যোগী হতে হয়েছে, তা-ও অনেক দেরিতে। এতেই পরিষ্কার, স্কুলগুলিকে নির্দেশ দেওয়া এবং তার প্রয়োগের ক্ষেত্রে কোথাও একটা সমস্যা থেকে যাচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE