মনিকা সরকার
নতুন বছরে নতুন লড়াই। তবে এ বার একা। সাহসে ভর করে নববর্ষে নিজেকে নতুন করে তৈরি করছেন সমাজকর্মী মনিকা সরকার।
উত্তর ২৪ পরগনার বাদুড়িয়া ব্লকে মনিকা-আমিরুলের নাম এবং লড়াই অজানা নয়। জেলায় শিশু-মহিলা পাচার আটকানো এবং সাম্প্রদায়িক আস্ফালনের বিরুদ্ধে অবস্থানের দরুন প্রশংসা ও আক্রোশ দুই-ই সঙ্গী তাঁদের। ভালবাসাই সব বাধা পেরিয়ে যেতে সাহায্য করেছিল তাঁদের। গত সেপ্টেম্বরে মারা গিয়েছেন আমিরুল। এখন তাঁর স্বপ্নকেই পাখির চোখ করে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার শপথ নিচ্ছেন মনিকা।
উত্তর ২৪ পরগনার প্রত্যন্ত এলাকায় বেড়ে ওঠা মনিকা নিজেই বাল্য বিবাহের শিকার। পারিবারিক অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে দুই শিশুকন্যাকে নিয়ে পরিবার ছেড়ে বেরিয়ে এসে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত হন মনিকা। ২০০৩ সাল নাগাদ আমিরুলের সঙ্গে পরিচয় হয় মনিকার। বিড়ি শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে কাজ করতে থাকেন তাঁরা। সেই সময়ে উত্তর ২৪ পরগনার নারী পাচার বিরোধী কাজকর্মের সঙ্গেও নিজেদের জড়িয়ে নেন মনিকা-আমিরুল।
ক্রমে পাচারের হাত থেকে মহিলা-শিশুদের উদ্ধার করে তাঁদের হাতের কাজ শেখানোই প্রধান কর্মকাণ্ড হয়ে ওঠে। এলাকার যুবক-যুবতীদের নিয়ে বাদুড়িয়া, স্বরূপনগর, বসিরহাট ১ এবং ২ ব্লকে ছোট ছোট ১৬টি দল তৈরি হয় সেই সময়। এখন ওই এলাকায় কাজ করছে মনিকা-আমিরুলের ৫৩টি দল। একেকটি দলে রয়েছেন ১৫-২০জন করে স্বেচ্ছাসেবক। চাইল্ডলাইন, স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় এখনও পর্যন্ত কমবেশি ১২০০ শিশু-মহিলাকে পাচারের হাত থেকে উদ্ধার করেছেন তাঁরা। এই কাজের কারণে মনিকাকে সম্মান জানিয়েছে মার্কিন প্রশাসনও। মনিকার কথায়, ‘‘একাধিকবার আমাদের প্রাণনাশের চেষ্টা হয়েছিল। এলাকার মানুষ এবং স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতা না পেলে এত কিছু করাই সম্ভব হতো না।’’ পরে আমিরুলের সঙ্গে বিয়েও হয় মনিকার। আমিরুলের পরিবারই প্রথমে সম্পর্কটি মেনে নেয়। পরে অবশ্য মনিকার পরিবারও ওই বিয়েকে স্বীকার করে।
বসিরহাটের এসডিও নীতেশ ঢালি বলেন, “বাল্য বিবাহ এবং পাচার আটকাতে দীর্ঘদিন ধরে ওঁরা কাজ করছেন। অনেক তথ্য দিয়ে ওঁরা সহযোগিতা করেন প্রশাসনকে। রাজ্য সরকারের সামাজিক প্রকল্পগুলির সফল রূপায়ণেও সাহায্য করেন। এমন কাজ আরও বেশি হলে সামাজিক ব্যাধি মোকাবিলা করা সহজ হয়।” একই বক্তব্য জেলা পুলিশেরও। বছরখানেক আগে বসিরহাট-বাদুড়িয়ায় গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের সময়ে আমিরুলেরা সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী প্রচার করেছিলেন এলাকায় এলাকায়। বাড়িতে হামলা হওয়ায় দিনকয়েক অন্যত্রও থাকতে হয়েছিল তাঁদের। পরে বাড়ি ফেরেন পুলিশের সহযোগিতায়।
এখন আমিরুলের মৃত্যু তাঁর জীবন পাল্টে দিলেও থামতে নারাজ মনিকা। বিভিন্ন দলের সঙ্গে যোগসূত্রকে চাঙ্গা করার কাজ এখন তাঁর একার কাঁধে। মনিকার কথায়, ‘‘আমিরুল বলতেন, আমাদের মধ্যে একজন চলে গেলেও লড়াই যেন না থামে। সংগঠনের প্রত্যেককে সেভাবেই তৈরি করেছি আমরা। যন্ত্রণা তো থাকবেই। তবু কাজ চলবে। এবার তো দু’জনের কাজ একজনকে করতে হবে। সেভাবেই নিজেকে প্রস্তুত করছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy