আন্দোলন: স্কুলে-স্কুলে চুক্তির ভিত্তিতে নিযুক্ত কম্পিউটার শিক্ষকদের যজ্ঞ। বুধবার পুরুলিয়া শহরের রাঁচী রোডে। ছবি: সুজিত মাহাতো
চাকরি ফিরে পেতে টানা পাঁচ দিন ধর্নায় বসেছিলেন। প্রশাসনের সাড়া মেলেনি। অনশনেও কাজ হয়নি। এ বার প্রশাসনের টনক নড়াতে অনশন মঞ্চের পাশেই আগুন জ্বেলে যজ্ঞ করলেন রাজ্যের বিভিন্ন স্কুলের চুক্তির ভিত্তিতে নিযুক্ত কম্পিউটার শিক্ষকেরা। পুরুলিয়া শহরের রাঁচী রোডের পুরনো তথ্য সংস্কৃতি দফতরের মাঠ বুধবার এমনই আন্দোলনের সাক্ষী থাকল।
রাজ্য শিক্ষা দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে। রাষ্ট্রীয় মাধ্যমিক শিক্ষা অভিযান কর্মসূচিতে স্কুলে স্কুলে কম্পিউটার শিক্ষা চালুর জন্য দফতর বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থাকে দায়িত্ব দেয়। ২০১৩ সাল থেকে পরপর চার বছরে ধাপে ধাপে বিভিন্ন সংস্থা রাজ্যে চুক্তিতে মোট সাড়ে ছয় হাজার কম্পিউটার শিক্ষক নিয়োগ করে। আন্দোলনকারীদের ক্ষোভ, পাঁচ বছরের মেয়াদে নেওয়া হলেও কোনও নিয়োগপত্র তাঁরা পাননি। বেতন দেওয়া হয় ছ’হাজার টাকার কম। অথচ পঞ্চম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের কম্পিউটারের পাঠ দেওয়া থেকে কন্যাশ্রী, সবুজ সাথী প্রকল্প-সহ স্কুলের বিভিন্ন কাজ তাঁদের দিয়েই করানো হয়।
ওয়েস্ট বেঙ্গল স্কুল কম্পিউটার টিচার ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের রাজ্য কমিটির সদস্য বিট্টু নন্দী বলেন, ‘‘প্রথম পর্যায়ে নিযুক্ত শিক্ষকদের চুক্তির মেয়াদ ফেব্রুয়ারিতে শেষ হয়েছে। কিন্তু স্থায়ীকরণ ও বেতন বৃদ্ধির জন্য আমরা আগে থেকেই আন্দোলনে নামায় চুক্তি করা সংস্থাটি কাজের মেয়াদ এক মাস বাড়ায়। কিন্তু তার পরে আমাদের ভবিষ্যৎ কী?’’ বাঁকুড়ার শম্পা মণ্ডলের প্রশ্ন, ‘‘পাঁচ বছর খেটখুটে কাজ করার পরে এ বার আমরা কী করব!’’
রানাঘাটের সঞ্জয় বিশ্বাস, গাইঘাটার দীপঙ্কর ঘোষ, চন্দ্রকোনার চিরঞ্জিত ঘোষদের দাবি, মেয়াদ শেষ হওয়ার পরেও ওডিশা, বিহার, মহারাষ্ট্র, অসম, গুজরাতের সরকার প্রকল্পটি চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এখানে দরবার করেও সাড়া মেলেনি। তাঁদের অভিযোগ, এর আগে ধর্না কর্মসূচির পরেও সরকার তাঁদের বিষয়টি উপেক্ষা করেছে। নিরুপায় হয়ে তাঁরা অনশন আন্দোলনের পথে যেতে বাধ্য হয়েছেন। মঙ্গলবার থেকে একশোরও বেশি শিক্ষক অনশনে বসেন। বুধবার এক শিক্ষিকা-সহ তিন জন অসুস্থ হয়ে পড়েন। চাকরি বাঁচানোর প্রার্থনায় এ বার যজ্ঞও করলেন তাঁরা। এ দিন দুপুরে অনশন মঞ্চের সামনে মঙ্গলঘট রেখে নিয়ম মেনে ঘি আহুতি দিয়ে তাঁরা যজ্ঞ করেন।
প্রথম পর্যায়ে নিয়োগ করে থাকা সংস্থার তরফে প্রণত ধর বলেন, ‘‘আটশো স্কুলের জন্য আমাদের পাঁচ বছরের চুক্তি হয়েছিল। চুক্তির মেয়াদও শেষ হয়ে যাচ্ছে। আমরা কী করব?’’ শিক্ষা দফতরের এক কর্তার দাবি, ‘‘তাঁদের নিয়োগের সঙ্গে শিক্ষা দফতরের সম্পর্ক নেই। তাই তাঁদের চাকরির ব্যাপারে শিক্ষা দফতর দায়বদ্ধ নয়।’’
পুরুলিয়ার বাসিন্দা রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদ মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো বলেন, ‘‘বিষয়টি শুনলাম। দেখছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy