আগামী রবিবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্মানে আয়োজিত রাইসিনা পাহাড়ের নৈশভোজে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তো থাকবেনই, দীর্ঘদিন পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে মমতার মুখোমুখি বৈঠকের সম্ভাবনাও এ বার দানা বাঁধতে শুরু করেছে।
কেন্দ্রের নোট বাতিলের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানাতে এর আগে শেষ বার দিল্লি গিয়েছিলেন মমতা। বুধবার মুখ্যমন্ত্রী নিজেই জানিয়েছেন, শুক্রবার সন্ধ্যায় দিল্লি যাবেন তিনি। সেই সঙ্গে বাঁকুড়ার প্রশাসনিক সভা থেকে বলেছেন, ‘‘অনেক সময়ে উন্নয়নের স্বার্থে রাজ্যকে কেন্দ্রের সঙ্গে মিলে কাজ করতে হয়।’’
শেখ হাসিনার সম্মানে আয়োজিত নৈশভোজে নিমন্ত্রণ জানাতে গত সপ্তাহে মমতাকে ফোন করেছিলেন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়। কিন্তু তখনই সম্মতি না-দিয়ে সিদ্ধান্ত ঝুলিয়ে রেখেছিলেন মমতা। সম্মতি দেওয়ার পর এ দিন নবান্ন সূত্রে বলা হয়েছে, শুধু নৈশভোজেই হয়তো সীমাবদ্ধ থাকবে না মুখ্যমন্ত্রীর সফর। ৮ এপ্রিল হায়দরাবাদ হাউসে মোদী-হাসিনার উপস্থিতিতে দ্বিপাক্ষিক শীর্ষ বৈঠকেও ভারতীয় প্রতিনিধি হিসেবে থাকতে পারেন মমতা। এমনকী মোদী-মমতা একান্ত বৈঠকের জন্যও প্রশাসনিক স্তরে একটা তৎপরতা শুরু হয়েছে বলে ওই সূত্রের দাবি।
একই ধরনের ইঙ্গিত মিলেছে নয়াদিল্লির কূটনৈতিক সূত্রেও। তাঁরা জানাচ্ছেন, গত কাল বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের সঙ্গে কথা হয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ৮ তারিখ খুলনা-কলকাতা দ্বিতীয় মৈত্রী এক্সপ্রেস এবং খুলনা–কলকাতা বাস পরিষেবা উদ্বোধনের সময়ে উপস্থিত থাকার জন্য মমতাকে অনুরোধ করেছেন সুষমা। তাতে সাড়া দিয়েছেন মমতা।
আরও পড়ুন: রামনবমী বিজেপির নাকি, পাল্টা আক্রমণে মুখ্যমন্ত্রী
সরকারি ভাবে অবশ্য বলা হচ্ছে, মুখ্যমন্ত্রী শুক্রবার দিল্লি গেলেও রাষ্ট্রপতির দেওয়া নৈশভোজে যাওয়া ছাড়া ‘এখনও পর্যন্ত’ তাঁর অন্য কর্মসূচি নেই। বড় জোর সোমবার সংসদ ভবনে যেতে পারেন। একই ভাবে দ্বিপাক্ষিক শীর্ষ বৈঠকে মমতা থাকবেন কি না, এখনই তা ঘোষণা করতে রাজি নয় বিদেশ মন্ত্রক।
তবে রাজনীতিকদের মতে, রাইসিনার নৈশভোজে মমতার থাকাটাই তাৎপর্যপূর্ণ। এটা ঠিক, কেন্দ্রের সঙ্গে তৃণমূলের এই মুহূর্তে যা সম্পর্ক, তাতে দিল্লি যাওয়াটা মমতার পক্ষে কিছুটা হয়তো অস্বস্তির। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী বুঝতে পারছেন তিনি দিল্লি না-গেলেও সমালোচনা হবে। বলা হবে, যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাকে মর্যাদা দিচ্ছেন না তিনি। দ্বিতীয়ত, হাসিনার সঙ্গে মমতার ব্যক্তিগত সম্পর্ক বেশ ভাল। রাজ্যের স্বার্থে বাংলাদেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখার পক্ষেই তিনি। সে দিক থেকেও নৈশভোজে উপস্থিত থাকাটা জরুরি ছিল। তা ছাড়া তিস্তা নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত কেন্দ্র যখন চাপিয়ে দিচ্ছে না, তখন ঝুঁকিও নেই। বুধবারও বাঁকুড়ার সভায় তিনি মন্তব্য করেন— তিস্তায় তো জলই নেই!
মমতার থেকে ইতিবাচক সাড়া পেয়ে উৎসাহিত সাউথ ব্লকও। বিদেশ মন্ত্রকের কূটনীতিকরা জানাচ্ছেন, ৯ তারিখ নৈশভোজের আগেই হাসিনার সঙ্গে দেখা হবে মমতার। দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের ফাঁকে দু’জনে তাঁদের পুরনো সম্পর্ক ঝালিয়ে নিতে পারবেন। সেখানে থাকবেন নরেন্দ্র মোদীও। এই আলাপ আলোচনার জেরে তিস্তা জলবণ্টন চুক্তি নিয়ে তৈরি হওয়া বরফ গলতে পারে বলেও আশা করছে সাউথ ব্লক। এ দিকে হাসিনার আসন্ন সফরের আগে দ্বিপাক্ষিক ৫টি চুক্তির খসড়া এ দিন কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত হয়েছে। এর মধ্যে দু’দেশের বিচার ক্ষেত্রে সহযোগিতার একটি সমঝোতা চুক্তিও রয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy