Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

সাজো তুমি

আঙ্গরাখা কুর্তা। কনের শাড়ির পাড়-এ বরের পাঞ্জাবির ফেব্রিক। বিয়েবাড়ি জমজমাট। লিখছেন অদিতি ভাদুড়িআঙ্গরাখা কুর্তা। কনের শাড়ির পাড়-এ বরের পাঞ্জাবির ফেব্রিক। বিয়েবাড়ি জমজমাট।

শেষ আপডেট: ২১ ডিসেম্বর ২০১৫ ১৫:০৯
Share: Save:

উত্তুরে হাওয়া হিম ছড়াচ্ছে।

এ দিকে আবার প্রায় প্রত্যেক উইক এন্ডেই বিয়ের নেমন্তন্ন।

বন্ধু বা আত্মীয়স্বজনের বিয়ে। এড়ানোরও উপায় নেই।

সে কথা ভেবে বছর আঠাশের সোমকের প্ল্যানও একদম তৈরি।

উজ্জ্বল ব্রিক রেড শার্টটা পরেই অফিস যাবেন। সঙ্গে আঁটোসাটো ডেনিম। অফিস থেকে বেরনোর সময় শার্টটা প্যান্টের ওপর বের করে লেদারের ওয়েস্ট কোট-টা গলিয়ে নিলেই হল। ছোট ঝুলের ওয়েস্ট কোট স্টাইলটাও রাখল। আবার আঁটোসাঁটো হয়ে হাল্কা ঠান্ডায় গরম আমেজটাও দিল।

সফ্টওয়্যার ডেভেলপার পৃথু লাহিড়ির আবার নেমন্তন্ন বিশেষ বন্ধুর বিয়ের আগের ব্যাচেলর্স পার্টিতে। তবে পশ্চিমী নয়, একটু অন্য রকম দেখাতে তিনি পরবেন ডিজাইনার পঞ্জাবি। সঙ্গে স্কার্ফের ধরনে হাল্কা শাল। শিশির ভেজা পার্টি যে চলবে অনেক রাত পর্যন্ত।

মোনোক্রম নয় প্রিন্টেড

বেশির ভাগ হবু বরই আজকাল সনাতনী ধুতি-পঞ্জাবি পরে সাত পাক ঘুরতে নারাজ। তাই অনেক সময় কনের শাড়ির পাড়ের কাপড় আর ডিজাইনই হয়ে যাচ্ছে বরের পাঞ্জাবির ফেব্রিক। ডিজাইনার ইরানি মিত্র তাঁর ছেলেদের বিয়ের কালেকশনে রেখেছেন অন্য ধাঁচের সেই পাঞ্জাবি। বললেন, ‘‘ধরুন এক মিটার কাপড়ে পাঞ্জাবি। সুতির সঙ্গে শিফন, র-সিল্ক, জর্জেট কেটে কেটে জুড়েছি। সুতির আরামটাও থাকল। আবার র-সিল্কের ঝলমলে ব্যাপারটাও।’’ বেশির ভাগ এ ধরনের পাঞ্জাবির ফেব্রিক হয় বেনারসী, জামেবার নয়তো হ্যান্ডলুম। ইরানি তাই বেছে নিয়েছেন জর্জেট। বা তসরের ওপর হাল্কা প্রিন্ট। আর বিশেষত্ব থাকছে ভেতরের লাইনিং-এ। লাইনিং-এর কাপড় এ ক্ষেত্রে হয় চেকস-এ, নয়তো প্রিন্টে। আর এই পাঞ্জাবির সঙ্গে থাকছে প্রিন্টেড চুড়িদার। মোনোক্রম নয়। ইরানি আবার এই পাঞ্জাবির সাইডে পাইপিং-ও করে দিচ্ছেন। কর্পোরেট কালচার মেনে তাঁদের পোশাকেও থাকতে হবে ধারালো কর্পোরেট টাচ। জমকালো নয়, আভিজাত্য থাকতে হবে সেই পোশাকে।

আঙ্গরাখায় বেনজির

হবু বরেদের জন্য ডিজাইনার অভিষেক দত্ত তাঁর সংগ্রহে রেখেছেন বন্ধগলা আচকান। সাধারণ ধুতি-পাঞ্জাবিতে আজকালকার পাত্রদের মন ভরে না। অথচ শেরওয়ানির স্টাইলটাও বেশ পুরনোই হয়ে গেছে। এমন অবস্থায় ছেলেরা পরে নিতে পারেন আচকান বা বন্ধগলা। অভিষেক আরও জানালেন ড্রেপড কুর্তা পরলে বর অনায়াসেই টিম আপ করতে পারেন ধোতি প্যান্ট দিয়ে। উজ্জ্বলরঙা প্রিন্টেড শাল-ও স্কার্ফের স্টাইলে জড়িয়ে নেওয়া যেতে পারে আচকানের ওপর। শীতের সময়টুকু বাদ দিলে সারা বছরই তো কমবেশি গরম। অভিষেক সেটা মাথায় রেখেই বানিয়েছেন কোয়ার্কি প্রিন্টের ওয়েস্টার্ন সামার জ্যাকেট। সুতি বা লিনেন মেটিরিয়ালে তৈরি এই জ্যাকেটগুলোর স্টাইল সিগনেচারটাও অভিনব। তবে উৎসবের জাঁকজমক মাথায় রেখে টোন অন টোন টেক্সচারের এই ওয়েস্ট কোট-এ উজ্জ্বল রংটাই চলছে বেশি। ‘‘লেদারের ওয়েস্ট কোটের খুব ডিম্যান্ড। তা ছাড়া ইন্দো ওয়েস্টার্নে জহর কোট-এর ট্রেন্ডটাও ফিরে আসছে। যোধপুরি প্যান্টস, গ্রাফিক বা শেডেড টি শার্ট, অম্ব্রে ডায়েড টি শার্ট, কোয়ার্কি প্যান্টের চাহিদাও ভাল রকম,’’ বলেন অভিষেক। এগুলো অনায়াসেই পরে ফেলতে পারেন বরের ভাই বা বন্ধুরা। এমনকী সামনে ক্রিসমাস পার্টিতেও। আর একটু ট্র্যাডিশনাল দেখাতে চাইলে পরে নেওয়া যায় আঙ্গরাখা। সাইড-স্টাইল বোতাম দেওয়া। বন্ধগলা স্টাইলেও এই পোশাকের ভালই চাহিদা। সঙ্গে সেলাই করা পাতলা পশমিনার স্টোল। উত্তরীয়র বদলে।

ধোতি আর শর্ট কুর্তা

ডিজাইনার নীল যেমন তাঁদের কালেকশনে রেখেছেন বান্ডি জ্যাকেটস, কুর্তা, স্কিন ফিটিং ওয়েস্ট কোট, সঙ্গে প্রিন্টেড প্যান্টস। বললেন এগুলো বর-ও যেমন পরতে পারেন, পরতে পারেন বরের ভাই বা বন্ধুরাও। প্রিন্টে বেজ বা পিচ রঙে লিনেন বান্ডি জ্যাকেটের সঙ্গে শর্ট কুর্তা আর ধুতি টিম আপ করলেও অসাধারণ দেখাবে।

আঙ্গরাখা বা ওয়েস্ট কোট তো চড়ালেন। কিন্তু ভেবেছেন কি আপনার লুকস-টা ঠিক কী রকম হবে?

ফ্রেঞ্চ দাড়ি রেজর চুল

পার্ক স্ট্রিটের বিখ্যাত বিউটি সালোঁর ম্যানেজার মৌসুমী চক্রবর্তী যেমন বললেন আন্ডারকাট-এর স্টাইল স্টেটমেন্টটা দারুণ চলছে। চুলের দু’দিকটা ছোট রেখে পেছনের দিকটা লম্বা রাখা হচ্ছে এই কাট-এ। স্পাইক নিয়ে মোটেই মাথা ঘামাচ্ছেন না ছেলেরা। বরং চুল খানিক লম্বা রেখে পনিটেলের কদর ঢের বেশি। ফেঞ্চ বেয়ার্ডের পাশাপাশি চুলে অনেকে দিচ্ছেন রেজর কাট-ও। বিয়ের মেকওভারে পিছিয়ে নেই হেয়ার কালার-ও। নামজাদা হেয়ার ক্লিনিকগুলোতেও ভিড় হেয়ার উইভিং, ট্রান্সপ্ল্যান্টেশনের জন্য। হবু বর অধিরাজ গুপ্ত যদিও চুল নিয়ে ভাবতে নারাজ। ‘‘রাত জেগে কাজ করতে হয়। হেডফোন লাগিয়ে। স্ট্রেসের জন্যই চুল বেশি পড়েছে। কিন্তু ট্রান্সপ্ল্যান্টেশনের ঝামেলা কে নেবে! যেটুকু আছে তাই ভাল,’’ বলেন তিনি।

একটু ট্যাটু

শুধুই কি বিয়ে! হাল্কা ঠান্ডা গায়ে মেখে সামনেই ক্রিসমাস। সেই দৌড়ে পিছিয়ে নেই ট্যাটুর কদরও। শহরেরই নামজাদা ট্যাটু আর্টিস্ট রাজা পাইন যেমন দিনে ১৫-২০ মিনিট হোক বা ১৪-১৫ ঘণ্টা— পুরুষ শরীরের আনাচে কানাচে উৎসবের ট্যাটু ফুটিয়ে তুলছেন ক্লায়েন্টদের পছন্দমতো। তাঁর ট্যাটু পার্লারে ২০ থেকে ৩৫ বছরের পুরুষদের ভিড় বেশি হলেও ষাট-সত্তররাও আছেন। তো কোন ধরনের ট্যাটুর চাহিদা উৎসবের এই সময়টায়? ‘‘পোর্ট্রেট, ক্যানভাস, মডার্ন বা অ্যাবস্ট্রাক্ট আর্ট নিয়ে বেশি হয়। এমনও হয়েছে ক্লায়েন্ট এসে বলেছেন পার্টিতে একদিনের জন্য ট্যাটু ফ্লন্ট করতে চান। পরে উঠে গেলেও ক্ষতি নেই,’’ বলেন রাজা। কথায় কথায় আরও বলেন একটি ছেলে দিনকয়েক আগে এসে বলেছিল তার সদ্য কেনা স্মার্টফোনের ট্যাটু করে দিতে।

আর অ্যাক্সেসরি?

ইয়ার স্টাড, রিস্টচেন এমনকী ল্যাপেল পিনের নিজস্ব স্টাইল স্টেটমেন্ট তৈরিতে জুড়ি নেই। ডিজাইনার শর্বরী দত্ত যেমন মনে করেন শার্ট বা শেরওয়ানির বোতাম নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করাই যায়। তবে সে ক্ষেত্রে ডিজাইনারের সাহায্য নেওয়াই ভাল। আবার শহরের আর এক ডিজাইনার প্রণয় বৈদ্য বললেন বৌভাতের রিসেপশনে বর পরতেই পারেন কাশ্মীরি প্রিন্ট, ডিজিটাল প্রিন্ট বা নকশি কাঁথার প্রিন্টে নেহরুভিয়ান কোট। সঙ্গে চামড়ার বা কাপড়ের মোজরি পরলেই সাজ সম্পূর্ণ। আর টিম আপ করার জন্য নেওয়া যেতে পারে জোধপুরি আচকান বা আগে থাকতে স্টিচ করা জামেবার স্টোল।

বিয়ের আসরেই হোক বা বরযাত্রীর ভিড়ে। অপেক্ষার সেই সেরা পুরুষ তো এখন আপনিই!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE