ছবি: সুব্রত কুমার মণ্ডল
আলো-আঁধারির মধ্যে হাত দু’টো শক্ত করে চেপে ধরলেন। দুষ্টু-মিষ্টি চোখ, এক গাল হাসি। তিন তলার বেডরুমে তখন লাল সোফা ছেড়ে আর চোখ ফেরানো যাচ্ছে না। ফুটবলার রজত ঘোষদস্তিদার ও অভিনেত্রী সোনালি চৌধুরী যুগলের এতটাই টান। এতটাই আবেগ!
ফুটবল আর টলিউডের বরাবরের সুসম্পর্ক। তবে ‘সাত পাকে বাঁধা’-র মতো ঘটনা বিরল। সেখানে রজতের জালে ‘সোনালি গোল’ হল কী করে?
দু’বছর আগে ক্রিসমাসের রাতে কেক মিক্সিং উৎসবে প্রথম দেখা। না, ‘লাভ অ্যাট ফার্স্ট সাইট’ হয়নি। বরং হয় উল্টোটাই। না চেনার ভান করে রজতের উপেক্ষা সোনালিকে। আর যায় কোথায়? সঙ্গে সঙ্গে অভিনেত্রীর অভিমান। স্মৃতির সরণিতে হাঁটতে হাঁটতে সোনালি বলছিলেন, ‘‘এমন ভাব করছিল যেন চেনেই না! বাংলা সিরিয়াল— ও সব আবার কেউ দেখে নাকি! ওই সময় খুব অভিমান হয়েছিল। কিন্তু আমিও মনে মনে একটা চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলাম। সুযোগ পেলে ছেলেটাকে দেখিয়ে দেব সোনালি কে?’’
সোফায় বসে তখন মুচকি হাসি রজতের। চোখ টিপে স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে প্রাক্তন জাতীয় গোলকিপার বলে উঠলেন, ‘‘ওটাই মেয়েদের মন জয় করার টোটকা। যত বেশি দূরে পালাব তত বেশি কাছে আসবে। প্রথমে পাত্তা দিলে ঘ্যাম বেড়ে যেত।’’ দূরে পালালেও প্রথম দেখাতেই সোনালির প্রতি ভেতরে ভেতরে যে কিছু একটা হয়েছিল, স্বীকার করে নেন রজত। এমনকী এক সপ্তাহের মধ্যে আরও একটা অনুষ্ঠানে সোনালির সঙ্গে দেখা হলে মোবাইল নম্বরও চেয়ে নেন। তখন থেকে নিয়মিত মেসেজ ও হোয়াটসঅ্যাপের এপিসোড শুরু।
ভাল লাগা তখনও ভালবাসায় পা দেয়নি। ‘জাস্ট ফ্রেন্ডস’-এর নিরামিষ লোগোই ঝোলানো দু’জনের সামনে। বিশ্বকাপের পরে হঠাৎ বদলে গেল সেই স্ট্যাটাস! নবদম্পতি অবশ্য তাঁদের ‘মোহব্বতে’ শুরুর জন্য একটা দেশ এবং একটা অ্যাপসের কাছে কৃতজ্ঞ।
স্পেন। এবং স্কাইপের প্রতিদ্বন্দ্বী ট্যাঙ্গো।
আইএসএল শুরুর আগে আটলেটিকো দে কলকাতার এক মাসের মাদ্রিদ-শিবির দু’জনের প্রেমকে আরও ঘনিষ্ঠ করে। রজত বলছিলেন, ‘‘সোনালি যে আমাকে কতটা ভালবাসে, প্রথম বার মাদ্রিদে যাওয়ার দিন অনুভব করেছিলাম। শ্যুটিং ছেড়ে এয়ারপোর্টে ছুটে এসেছিল সি-অফ করতে।’’ স্বামীর দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকেন স্ত্রী। সোনালি বললেন, ‘‘আসলে দূরত্ব অনেক কিছু শিখিয়ে দিয়েছিল। ওকে ছাড়া যে থাকতে পারব না সেটা তখনই বুঝে যাই। পরের দিন একটা অনুষ্ঠানে গিয়ে জানতে পারি স্কাইপ-এর থেকে ট্যাঙ্গো আরও ফাস্ট। সঙ্গে সঙ্গে আমরা দু’জনেই মোবাইলে সেটা ডাউনলোড করে নিই। স্পেনের সঙ্গে আমাদের সাড়ে চার ঘণ্টা সময়ের ফারাক। আমার মনে আছে, ওর জন্য আমি ভোররাত পর্যন্ত জেগে থাকতাম। তার পরে সকালে আবার শ্যুটিংয়ে যেতাম। রজত আমাকে পুরো স্পেন ঘোরাতো ট্যাঙ্গোতেই।’’ ট্যাঙ্গো যে সেখান থেকে বিয়ের রাত পর্যন্ত নবদম্পতির জীবনে নয়নের মণি হয়ে উঠেছিল, সেটা স্বীকার করে নিলেন দু’জনে। যদিও এখন সেই অ্যাপস-ব্যবহারের পাট চুকেছে।
স্পেন থেকে ফিরে ১৩ অক্টোবর সোনালিকে বিয়ের প্রস্তাব দেন রজত। অভিনেত্রীর জন্মদিনে। তবে হবু স্ত্রীর উত্তর শুনে চেয়ার থেকে নাকি পড়ে যাচ্ছিলেন তিনি। এমনকী এক বছর আগের সেই দিনটার কথা মনে পড়তে শুক্রবারও সোফা থেকে প্রায় হাসতে হাসতে মাটিতে পড়ে যাচ্ছিলেন দু’জনে। রজতের কথায়, ‘‘সোনালিকে সরাসরি বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলাম। যা শুনে ও বলে, ‘আমি সাজতে খুব ভালবাসি। আমার জামা-কাপড় রাখার জন্য সাতটা আলমারি আছে। সেগুলো তোমার বাড়িতে রাখার জায়গা হবে?’’’ সোনালির উত্তরে রজত অবাক হলেও, এক কথায় তিনি বলেন, ‘‘আমার হৃদয়ে তোমাকে যখন জায়গা দিতে পেরেছি, তখন তোমার সব জিনিসও ঠিক রাখতে পারব।’’
কথা রেখেওছেন রজত। বিয়ের আগে সোনালির জন্য বাড়িতে জায়গা বানিয়েছেন। যাতে সাতটা কেন সতেরোটা আলমারি রাখা যায়। রজত বলছিলেন, ‘‘আমার আরও একটা স্বপ্ন আছে। হনিমুনে যেটা হল না। সোনালিকে ট্যাঙ্গোতে স্পেন-ভ্রমণ করিয়েছিলাম। এক দিন ওর হাত ধরে মাদ্রিদের সমুদ্র সৈকতে হাঁটতে চাই।’’ যা শুনে সঙ্গে সঙ্গে সোনালির জবাব, ‘‘স্পেন ট্যুর-টা আমি স্পনসর করব। ওই দেশটায় এখনও পর্যন্ত যাওয়া না হলেও, অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে।’’
দু’জনের কেমিস্ট্রি দেখলে মনে হতেই পারে, ‘রব নে বনা দি জোড়ি।’ তবু একে ওপরের কি কিছুই বদলাতে চান না? সোনালি বললেন, ‘‘রজত মুডি। ওটা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।’’ আর রজত? ‘‘সোনালির যেটা বদলাতে চাই সেটা বদলানো যাবে না। আমি রেখাকে চাই। আর ও জয়া বচ্চনের মতো।’’ কিছুক্ষণের স্তব্ধতা। সোনালিও অবাক। ‘‘আসলে
রেখার মতো হাইট হলে তোমাকে হিল পরে আমার পাশে দাঁড়াতে হত না!’’
ব্যস। বলামাত্র দৌড়।
আগে রজত। পিছনে সোনালি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy