তাঁর টেবিলের উপর কর্ণ জোহরের অটোবায়োগ্রাফি ‘অ্যান আনস্যুটেবল বয়’। জিৎ স্রেফ বই সাজিয়ে রাখেন না। পড়েনও। স্বামী বিবেকানন্দ থেকে কর্ণ জোহর বাদ যায় না কোনওটাই। বলেন, ‘‘যেখান থেকে যা শেখা যায়।’’ সেই শেখার রাস্তাতেই ১৫ বছর পার করে ফেলেছেন।
প্র: আজমের শরিফ গিয়ে কী চাইলেন?
উ: একটা মানত ছিল। সেই জন্যই গিয়েছিলাম।
প্র: ছবি রিলিজের আগে কি সাধারণত যান?
উ: হ্যাঁ, আগে কালীঘাট আর দক্ষিণেশ্বরে যেতাম। এখনও অবশ্য যাই। মানুষ যত পরিণত হয়, আধ্যাত্মিক শক্তিগুলো আরও বুঝতে পারে। আজমের শরিফ থেকে পুষ্কর গেলাম, জয়পুরে ঘুরলাম। স্ত্রী মোহনা আর মেয়ে নবন্যা সঙ্গে ছিল।
প্র: রিলিজের আগে এত ঘুরলেন কী করে?
উ: একটু চাপ হয়ে গিয়েছিল ঠিকই। কিন্তু পরিবারকে তো সময় দিতেই হয়। জয়পুর থেকে ফিরে বাংলাদেশ, তার পর মুম্বই গেলাম। সবটাই ‘বস টু’র প্রচারের জন্য।
প্র: বাংলাদেশে ‘বস টু’ নিয়ে তো একটা সমস্যা তৈরি হয়েছে...
উ: যাদের সঙ্গে যৌথ প্রযোজনা সেই ‘জ্যাজ মাল্টিমিডিয়া’ দেখছে বিষয়টা। ওখানে কিছু লোক চাইছে না ছবিটা রিলিজ হোক, সেটা ওদের অভ্যন্তরীণ ঝামেলা। আশা করছি, মিটে যাবে। আমার ব্যক্তিগত ভাবে মনে হয়, মার্কেট খুলে দেওয়া উচিত। তাতে জটিলতা কমবে। ওখানকার দর্শকও আগ্রহী। এক্সিবিটররাও চাইছে।
প্র: ‘বস টু’ নিয়ে কি অতিরিক্ত চাপ আছে? সাম্প্রতিক কালে বাণিজ্যিক ছবি সে ভাবে ব্যবসা করতে পারছে না।
উ: (একটু উত্তেজিত হয়ে) আমি বুঝি না, কেন লোকে বলছে বাণিজ্যিক ছবি চলছে না? তা হলে ছবি হচ্ছে কেন? একজন অভিনেতা পাঁচ বছরের জন্য চুক্তিবদ্ধ হচ্ছে। ছবি যদি না-ই চলত দর্শক আমাদের এত দিন ধরে টিকিয়ে রাখতেন না। পরপর সিনেমা আসছে তো। সারা পৃথিবীতে যত ছবি তৈরি হয় তার সাফল্যের রেট ৮-১০ শতাংশ। বাংলায় হয়তো সেটা আরও কম। তার অনেক কারণ আছে। পরিকাঠামোগত সমস্যা আছে। আমাদের নিজেদের মধ্যে ঐক্যবোধ নেই। কী করে ইন্ডাস্ট্রির ভাল করা যেতে পারে সেটা নিয়েও আলোচনায় বসে না কেউ। দেখা যাক, হয়তো ভবিষ্যতে কোনও রাস্তা বেরোবে।
প্র: আপনি নিজেও তো উদ্যোগ নিতে পারেন। ইন্ডাস্ট্রির অন্যতম সিনিয়র।
উ: আমার চেয়েও সিনিয়র আছেন। তবে আমিও চেষ্টা করছি। কোনও সমাধান নিশ্চয়ই বেরোবে।
প্র: কোনও গল্প পছন্দ হল না বলেই কি নিজে কলম ধরলেন?
উ: ‘বস’-এর সাফল্যের পর সিক্যুয়েল করার ইচ্ছে ছিল। ছবিটা সে ভাবেই শেষ করা হয়েছিল। অনেক লেখকের সঙ্গে আলোচনা করে আইডিয়া তৈরির চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু ঠিকঠাক কিছু হচ্ছিল না। শেষমেশ আমিই আইডিয়াটা ডেভেলপ করি। তবে আমার অফিসের সকলেরই অবদান আছে। সকলে মিলেই স্টোরি লাইন ঠিক করেছি। সূর্যর চরিত্রটা খুব ইন্সপায়ারিং। রবিনহু়ড ধাঁচের। শুভশ্রী এখানেও আমার নায়িকা। আগের গল্পের সঙ্গে মিল রয়েছে। ওই সব সিক্যুয়েলের মতো নয় যেখানে দুটো ছবির মধ্যে কোনও মিল নেই।
আরও পড়ুন: জিৎ আমার বন্ধু, দেব আমার ভাই
প্র: প্রযোজনা করছেন। আগে গানও গেয়েছেন, এ বার লেখক হলেন...
উ: মাল্টিটাস্কিং বলছেন তো! এ ভাবেই তো কাজ করতে করতে শিখেছি। কোনও দিন অ্যাক্টিং স্কুলেও যাইনি। নাচ-গানের ক্লাসও করিনি। অ্যাকশনের জন্যও ট্রেনিং নিইনি। বাকি সকলের কাজ দেখে দেখেই শিখেছি। এখনও শিখছি।
প্র: জিতের ‘বস’ কে?
উ: পেশাদার দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখলে দর্শকই সব। আর এমনিেত বিবাহিত পুরুষের কাছে তার স্ত্রী-ই বস। কিছু দিন পর হয়তো মেয়ে ওই জায়গাটা নিয়ে নেবে। এখনই হাফ-বস হয়ে গিয়েছে (হাসি)!
প্র: কাজের মাঝে পরিবারকে সময় দিতে পারেন?
উ: আমি কোথায় বেশি কাজ করি! পরিবারের জন্য অনেকটাই সময় থাকে। মোহনা আর মেয়েকে মুভি দেখতে নিয়ে যাই বা কোথাও ডিনারে গেলাম। কলকাতায় হয়তো খুব বেশি ঘুরতে পারি না। আমার স্ত্রী মেয়েকে নিয়ে এ-দিক ও-দিক যায়। আপনারা পরিবারের সঙ্গে ঠিক যে ভাবে সময় কাটান, আমিও তাই।
প্র: ‘সাথী’র ১৫ বছর হল, এই জার্নিটা কী রকম?
উ: খুবই ভাল। হিট-ফ্লপ তো থাকবেই। ধীরে ধীরে পরিণত হয়েছি। ইন্ডাস্ট্রি থেকে যা পেয়েছি, তার জন্য কৃতজ্ঞ। পাশাপাশি এও মনে হয়, এখনও অনেক কাজ বাকি রয়েছে। কয়েকটা ছবিই তো করলাম। আরও অন্য ধরনের চরিত্র করতে চাই। ভাল সিনেমার শরিক হতে চাই। আসলে কী পাইনি সেটা ভাবলে মন খারাপ থাকবে। তার চেয়ে যেগুলো পেয়েছি সেটা নিয়ে খুশি থাকাই ভাল।
প্র: ১৫ বছর আগের জিতের সঙ্গে দেখা হলে কী বলবেন?
উ: (জোর হাসি) চাইলে ওই সময়ে আবার ফিরে যেতে পারি। কিছু দিন আগে কোয়েলের সঙ্গে ‘বেশ করেছি প্রেম করেছি’ ছবিতে কাজ করেছিলাম। ও জিজ্ঞেস করছিল, কী প্রস্তুতি নিচ্ছি? বললাম, মনটাকে ১৫ বছর পিছিয়ে নিয়ে যা! পুরনো দিনে যখন খুশি চলে যাওয়া যায়। কিন্তু সামনে কী আছে, এটা মাঝে মধ্যে ভাবায়।
প্র: দেবের প্রথম প্রযোজনার ছবিও ‘বস টু’-র সঙ্গে মুক্তি পাচ্ছে। ওকে প্রযোজনা নিয়ে
টিপস দিয়েছেন?
উ: নাহ, ওর যথেষ্ট বুদ্ধি আছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy