‘আজ শ্রাবণের বাতাস বুকে এ কোন সুরে গায়
আজ বরষা নামল সারা আকাশ আমার পায়’
সুর ভাঁজছেন রূপঙ্কর। বর্ষা মানেই তাঁর কাছে ছুটি, খোলা মাঠ, ভেজা ঘাস, বৃষ্টিপ্রেম।
বৃষ্টি যেন পিছু ছাড়ে না।
রূপঙ্করের বৃষ্টিপ্রেমটা কেমন?
বর্ষাতেই যত প্রেম ঘিরে থাকে আমায়। বৃষ্টিতেই বান্ধবী অফিস কেটে দেখা করতে আসত। তার পর বিয়েটাও হল বর্ষায়। এই তো! ব্যস আর কি!
প্রেমিক রূপঙ্করের ‘প্রিয়তমা’র রোম্যান্সের কথা জানতে চাইছি...
আরে! আচ্ছা ঝামেলায় পড়া গেল তো! (একটু ভেবে) একটা পুরনো বাড়ির আলোআঁধারি ঘর। ঘরে কড়িকাঠ দেখা যায়। মাথার ওপর একটা পাখা ঘুরছে ক্যাঁচক্যাঁচ শব্দ করে। দেওয়ালের গায়ে ঝুল। এই রকম একটা ঘরে খড়খড়ি দিয়ে চেয়ে থাকব। টিপ টিপ বৃষ্টি। পায়ে ঘাস জড়িয়ে, বৃষ্টির গন্ধ নিয়ে, বৃষ্টি মেখে সে আসবে। এই মুহূর্তটাই যথেষ্ট...
সে কে?
যৌবনের জিনাত আমন (প্রচণ্ড হাসি)।
বেশ! এই আবেগ নিয়ে গানের জগতে কুড়ি বছর পার করে দিলেন রূপঙ্কর?
কুড়ি বছর তো পার হল। কিন্তু প্রথম দিনের স্ট্রাগলটা আজও আছে। এতটা পথ পেরিয়ে মনে হয় একটা ভাল চাকরি করে তার সঙ্গে গানটা রাখলে বোধ হয় ভাল হত।
একজন জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত শিল্পীর থেকে এই মন্তব্যটা শুনে অবাক লাগছে।
গানের বাজারটা নষ্ট করে দিয়েছে টেকনোলজি। মানুষ সব কিছুই বিনা পয়সায় চায়। ২০১০য়ের পর রেডিয়োয় প্রাইভেট অ্যালবামের গান বাজে না। শুধু সিনেমার গান বাজে। (প্রচণ্ড রেগে) এখন তো সিনেমায় গান রেকর্ড করে সেটা যে আমার গলাতেই শোনা যাবে তারও কোনও নিশ্চয়তা নেই!
হঠাৎ এত রেগে গেলেন?
সম্প্রতি একটি ছবিতে একজন বিখ্যাত সুরকার আমার একটি গান রেকর্ড করেছিলেন। পোস্টার দেখে ফোন করলাম সঙ্গীত পরিচালকের সহকারীকে। তিনি বললেন, ‘‘ওই গানটা আপনার গলায় আর নেই। ওটা সঙ্গীত পরিচালক গেয়ে দিয়েছেন।’’ এখন কেউ যদি জিজ্ঞেস করে, সামনে কোন বাংলা ছবিতে গান গাইছি? উত্তর দিতে পারি না। বলা যায় না গানটা তো বাদ হয়ে যেতে পারে। তবে ‘শেষের কবিতা’ আর ‘অ্যাবিসেন’য়ে আমার গান আছে।
মিউজিক কোম্পানিগুলো এখনও সিডি করছে। কেন?
সাগরিকা, সারেগামা একের পর এক সিডি তো বের করছে বাজারে। লাভটা কী হচ্ছে? আমরা শিল্পীরা আজও জানি না আমাদের গান রিংটোনে বা রেডিয়োতে বাজলে সেখান থেকে আমরা কত টাকা রয়্যালটি পাব। ডিজিটাল রাইটস, রয়্যালটি, এসব সম্পর্কে অধিকাংশ শিল্পীর কোনও ধারণাই নেই। আমাদের মধ্যে দু’একজন এসব নিয়ে মিউজিক কোম্পানিগুলোকে প্রশ্ন করেছিল। তার পর থেকে তাদের দিয়ে আর গান রেকর্ড করানো হয় না। আমরাও আর প্রশ্ন করি না। ভয় পাচ্ছি...
কীসের ভয়?
অনুষ্ঠানও তো কমে গিয়েছে। ঠিকমতো পারিশ্রমিকও জোটে না।
লোপামুদ্রা মিত্র নিজের বুটিক খুলেছেন। শ্রাবণী সেন, রাঘব চট্টোপাধ্যায় গানের স্কুল খুলছেন...
আমিও ভাবছি তেলেভাজার দোকান দেব। তবে প্যাকেজিংটা অন্যরকম হবে। এ ছাড়া আমার গতি নেই।
তেলেভাজার প্যাকেজিং না হয় হল। কিন্তু ‘পনেরোয় বিশ’টা কী ব্যাপার?
বেহালা সাংস্কৃতিক সম্মিলনী-র আয়োজনে রবীন্দ্র সদনে ২৬ জুলাই একক অনুষ্ঠান করছি। ২০১৫-য় আমার গান গাওয়ার কুড়ি বছর হল। সেই কথা মাথায় রেখে অনুষ্ঠানের নাম দেওয়া হয়েছে ‘পনেরোয় বিশ’।
আর নতুন অ্যালবাম?
আমার গলায় একটা বিষণ্ণতা আছে। শান্তনুদা(মৈত্র) বলে, ‘‘দুঃখের গানে তুই আবেগ দিস না। তা হলে আমরা প্রচণ্ড কাঁদব।’’ এই বিষণ্ণতা আমি জগজিৎ সিংহের কাছ থেকে পেয়েছি। জগজিৎ সিংহের গান গাইব। ওঁর গান শুনেই এত প্রতিকূলতার মধ্যেও আমি প্রাণ খুলে বাঁচার স্বপ্ন দেখি। মনে হয় জীবনে যা পেয়েছি সেটাই যথেষ্ট।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy