Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ শুধু ছুটির ঢল

অর্ধেক ঢাকা থাক, অর্ধেক খোলা। দোল এমন একটা ছুটির দিন যেখানে ছোট ছোট দুষ্টুমি বৈধ হয়ে ওঠে আবিরের স্নানে। লিখছেন সুবোধ সরকার।সেবার বসন্তে শান্তিনিকেতনে এসেছেন পাবলো নেরুদা, নিকোলাস গিয়েন, স্টিফেন স্পেন্ডার, মিরোস্লাভ হলুব, নিকানোর পাররা, সুনীলদার বাড়িতে। সবার নোবেল প্রাইজ পাওয়ার কথা, কিন্তু পেয়েছেন শুধু একজন।

শেষ আপডেট: ২৩ মার্চ ২০১৬ ০১:১৮
Share: Save:

এন্ট্রি ১

ডিমের ভেতরে যেমন কুসুম শুয়ে থাকে, তেমনি প্রতিটি মানুষের মধ্যে আবির।

সেবার বসন্তে শান্তিনিকেতনে এসেছেন পাবলো নেরুদা, নিকোলাস গিয়েন, স্টিফেন স্পেন্ডার, মিরোস্লাভ হলুব, নিকানোর পাররা, সুনীলদার বাড়িতে। সবার নোবেল প্রাইজ পাওয়ার কথা, কিন্তু পেয়েছেন শুধু একজন। তাই হয়ে থাকে। প্রত্যেকের চুলে আবির, হাতে পলাশ। সুনীলদাকে চেনা যাচ্ছে না। একেবারে ভূত ও ভোলানাথ হয়ে বসে আছেন, যেমন থাকতেন। বসন্তের মেয়েরা আসছেন, আবির মাখাচ্ছেন। সুনীলদা বলছেন, ‘‘আর কোথায় মাখবে? আমার আর জায়গা নেই।’’

স্পেন্ডার স্প্যানিশ গৃহযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন, নেরুদা ট্রটস্কির খুনিকে মেক্সিকোর বর্ডার পার করিয়ে দিয়েছেন। হলুব কবি ও বিজ্ঞানী, কুখ্যাত হয়েছেন এ কথা বলে যে, ‘তাঁরাই বেশি প্রেমের কবিতা লেখেন যাদের প্যাশন মরে গেছে।’ নিকানোর পাররা তত দিনে আমেরিকার গালে সবচেয়ে বড় হাসির থাপ্পড়টি বসিয়েছেন— ‘ইউ.এস.এ/হয়্যার/ লিবার্টি ইজ আ স্ট্যাচু’। এই সব রথী-মহারথীর মাঝখানে নেরুদা উঠে দাঁড়িয়ে সুনীলদাকে জড়িয়ে ধরলেন। যাকে বলে হাগিং। সুনীলদা নেরুদাকে ছাড়িয়ে দিয়ে বললেন, ‘‘পাবলো! আমি পুরুষের আলিঙ্গন নিতে পারি না। এসো করমর্দন করি।’’ সবাই হো হো করে হেসে উঠলেন। এক ঝাঁক সুন্দরী কলহাস্য করে উঠল। স্বাতীদি অতিথি আপ্যায়নে ব্যস্ত ছিলেন, তার মধ্যেও হেসে ফেললেন। কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায় গেয়ে উঠলেন—‘দূরে কোথায় দূরে।’ গলিত সোনা যেন ফিনকি দিয়ে বেরিয়ে আসছে মোহরদির গলা থেকে। সেই গান শুনে কিউবার কবি নিকোলাস গিয়েন, যাঁর সঙ্গে নেরুদার ঝগড়া, কেঁদে ফেললেন। বললেন, ফিদেল কাস্ত্রো কোনও দিন আমাকে কাঁদাতে পারেনি, আজ এই অজ গাঁয়ে এসে আমি কাঁদতে পারলাম। ধন্য হলাম। কিউবাতে কাঁদতে পারিনি এত দিন। এত রেভলিউশন দেখলাম। কিন্তু আবির যা করতে পারে, সুর যা করতে পারে, বসন্ত যা করতে পারে, একটা রেভলিউশন তা করতে পারেনি, কাঁদাতে পারেনি।

এন্ট্রি ২

শোক আর হানিমুন দুটোই সমান। ক্ষণস্থায়ী

বাঙালির একটা ফাল্গুনী সিনড্রম আছে। অর্ধেক ঢাকা থাক, অর্ধেক খোলা। দোল এমন একটা ছুটির দিন যেটার পেছনে একটা আইন আছে। ছোট ছোট শ্লীলতাহানি বৈধ হয়ে ওঠে আবিরের স্নানে। যে-আবির অন্য দিন লাগাতে গেলে এফআইআর হতে পারে, এমনকী ফাইভ হানড্রেড মাইনাস টু হয়ে যেতে পারে। তোমার চোখে দেখেছিলেম আমার সর্বনাশ। অর্থাৎ ভারতীয় আইনে সেটা ৪৯৮ হতে পারে। ভয়াবহ গরম চৈত্রমাস। চিল বসে না চালে। তাও বাঙালির বসন্ত চাই। বসন্তের সিনড্রম চাই। চৈত্রমাস আর সর্বনাশ-এ মিল দিতে হবে। পো.ক বুড়োখোকাগুলো (যাদবপুরে এবং হার্ভার্ডে পোস্ট কলোনিয়ালকে সংক্ষেপে পো.ক নামে ডাকা হয়।) এখনও সেই মিল দিয়ে চলেছে। দোল আসলে বাঙালির ঐতিহ্যের ঢাল বেয়ে গড়িয়ে নেমে আসা একটি লাইসেন্স। একদিনের লাইসেন্স। প্যাশনের লাইসেন্স। আবেগের লাইসেন্স। নির্জনতার লাইসেন্স। নিজের অবদমনকে ডিকোড করার লাইসেন্স। আলেকজান্দ্রিয়ার আভিজাত্য, রোমান শঠতা ও যৌনতার প্রতীক ক্লিওপেট্রার ঠোঁট সম্পর্কে বলা হয়েছিল, ‘ইটারনিটি সিটস অন ইয়োর লিপস।’ আমাদের বাগবাজার হোক আর বালিগঞ্জ হোক, পাড়ায় পাড়ায় এত ক্লিওপেট্রা, তাদের ঠোঁটের কাছে, থুড়ি তাদের ইটারনিটির কাছে একটু আবির পৌঁছে দিতে পারব না? ঠোঁটের কাছে আবির-সহ আঙুল যখন পৌঁছল, সিজারের মতো সম্রাটেরও হাঁটু কেঁপেছিল। কাঁপবে না? প্যাশনের কাছে, আবিরের কাছে, ইটারনিটির কাছে কে সম্রাট, কে ভিখিরি! দু’জনেই অনিবার্য ধুলো। যৌনতার সহোদর হল ঈর্ষা। ঈর্ষাই তৈরি করে নেয় পৃথিবীর যাবতীয় ব্লুপ্রিন্ট। তৈরি করে দেয় বসন্তের ভূমিরক্ষা কমিটি। বাবা ছেলেকে কখনও ঈর্ষা করে না জানতাম। কিন্তু লর্ড কৃষ্ণ করেছিলেন। আটটি মেয়েকে নিয়ে শাম্ব জলকেলি করছিল, একেবারে বিজয় মাল্যর মতো, বাটারফ্লাই স্টাইলে। তাই দেখে কৃষ্ণর হিংসে হয়। যেহেতু শান্তিনিকেতন এখন কলকাতার বাগানবাড়ি, সব বড় শহরের একটা করে বাগানবাড়ি লাগে। সেখানে যশ ও কামনার ডাস্টবিন বসানো থাকে। সেখানে পিকনিক করা যায়, আগ্নেয়গিরির ওপরে উঠে দোলনা লাগানো যায়, চাঁদের আলোয় মেমরি গেম খেলা যায়, কেননা যে রজনী আজ চলে যাবে সে আর ফিরে আসবে না। সমস্ত হানিমুন ক্ষণস্থায়ী। দোলের আগের দিন ছুটি পেলে দু’দিন হানিমুন, পরের দিনও ছুটি হলে হানিমুন তিনদিন হতে পরে। আরে ধ্যাৎ! হানিমুন আটচল্লিশ ঘণ্টার বেশি স্থায়ী হয় না। প্রতিটি হানিমুনের চন্দ্রালোকিত পিঠের জামা তুলে দেখুন, একটা এক্সপায়ারি ডেট লেখা আছে। চুল সরিয়ে সবাই দেখে স্ট্র্যাপ, কেউ কেউ দেখে তারিখ। তেমনই গত বছর যে ছিল ডেডবডির শিয়রে মুহ্যমান, তাকে আজ শান্তিনিকেতনে নতুন বান্ধবী নিয়ে চেক ইন করতে দেখলাম। এর নাম জীবন, এর নাম বসন্ত, এর নাম দোলপূর্ণিমা, মলয় বাতাস।

আরও পড়ুন:
টক অফ দ্য টাউন হবে জানতাম: সোহিনী
ছোট অন্তর্বাস পরতে চাই না

এন্ট্রি ৩

পাম্প চালালেও কিন্তু শরীর চলে না আবিশাগের গল্প। আবিশাগ সেই ইহুদি তরুণী যাকে দেখলে কফিন খুলে উঠে বসবেন সফোক্লিস। তার রূপ এতটাই লেলিহান যে গোটা দেশে আগুন লাগিয়ে দিতে পারে। সেই কুমারী আবিশাগকে নিয়ে আসা হল দায়ুদের কাছে। দায়ুদ রাজা, বৃদ্ধ হয়েছেন। তাঁর এখন একটাই অসুখ। তাঁর খুব শীত করছে। কিছুতেই তাঁর শীত যাচ্ছে না। শত কম্বলেও তিনি কম্পমান। আবিশাগকে রাজার বুকের ওপর শুইয়ে দেওয়া হল। তরুণী আবিশাগ যা যা করার করলেন। সুইচ অন করলেন, পাম্প চালালেন, কিন্তু দায়ুদ গ্রহণ করতে পারলেন না আবিশাগের আগুন। মারা গেলেন।

এই আবিশাগ আমাদের দোল। এই আবিশাগ আমাদের আবির। এই আবিশাগ আমাদের রণ রক্ত সফলতা। এই আবিশাগ আমাদের উঠে বসার লাস্ট সাপার। ইহুদি তরুণীর জন্য লাস্ট সাপার—আশা করি আমার খটমট তুলনার জন্য দামাস্কাসে দাঙ্গা বাঁধবে না।

শান্তিনিকেতনে সুনীলদা যে সারা গায়ে আবির মেখে মহেশ্বরের মতো বসে থাকতেন, সেই আবির আসলে আবিশাগ। বসন্ত আসবে, আবির আসবে, আবিশাগ আসবে না।

এন্ট্রি ৪

আবিরে আমি আবির হয়ে বেঁচেছিলাম

জীবনে প্রথমবার শান্তিনিকেতনে গিয়ে আমি কপালজোরে বেঁচে ফিরেছিলাম। সেদিন কোনও দোল ছিল না। অক্টোবর মাস। আমরা দু’জন মানে আমি, আর বেতসপাতার মতো মল্লিকা। পকেটে পয়সা নেই, কিন্তু সারা গায়ে অদৃশ্য আবির। এই বুঝি কেউ দেখে ফেলল! কী ভয়! টিউশনির টাকা জমিয়ে এসেছি। হোটেলে কী করে চেক ইন করতে হয় জানি না। আমি আমার নাম বললাম জয় সরকার, মল্লিকার নাম হল কবিতা সিংহ। ভাগ্যিস তখনও ফোটো আইডি চালু হয়নি। বাড়ি থেকে পালিয়ে, না বলে, কৃষ্ণনগর থেকে তিনবার ট্রেন পাল্টে আমরা যেন শান্তিনিকেতনে নয়, আলেকজান্দ্রিয়ায় এসে পৌঁছেছিলাম। সারারাত দরজা খুলে জানলা খুলে আবির ছুটে এল। বালিশ ফেটে গেল, কিন্তু কোনও তুলো বেরোল না। শুধু আবির। সারারাত অকাল দোলের শেষে ভোররাতে একটু চোখ বন্ধ করেছিলাম। হঠাৎ দরজায় দমদম আওয়াজ। আমি ধড়ফড় করে উঠে বসলাম, জিজ্ঞাসা করলাম, কে? আবার দমদম করে আওয়াজ। আমি বুঝতে পারলাম আমাকে এরা পুলিশে দেবে। থানা থেকে লোক এসেছে নির্ঘাত। আমি দুরুদুরু বক্ষে দরজা খুলে দেখলাম হোটেলের লোকটা ঘাড়ে গামছা নিয়ে দাঁড়িয়ে। সে হাঁফাচ্ছে আর বলছে, ‘‘এক্ষুনি হোটেল ছেড়ে বেরিয়ে যান। মাইকে ঘোষণা হচ্ছে, শুনতে পাচ্ছেন না? ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে যান। টাকাপয়সা দিতে হবে না। ইন্দিরা গাঁধী খুন হয়ে গেছেন।’’ বলে কী লোকটা? বেরিয়ে এসে শুনতে পেলাম মাইকে ঘোষণা : শান্তিনিকেতন ফাঁকা করে যে যার বাড়িতে ফিরে যান।

মনে হল, শান্তিনিকেতন যেন ‘প্যারিস আন্ডার সিজ’। সবাই ঘর ছেড়ে পালাচ্ছে। আমরাও সেই ‘প্রান্তিকে’র দিকে ধাবমান এক্সোডাসে যোগ দিলাম। রাস্তায় যেন কার্ফু। স্টেশনে মারমুখী জনতা। যাকে তাকে মারছে। যেখানে সেখানে আগুন লাগিয়ে দিচ্ছে। পালাতে পালাতে আমরা বহু কষ্টে কল্যাণী এসেছিলাম মাঝরাতে। কল্যাণী ছিল আমাদের বেসক্যাম্প। মল্লিকা শেষ দিন পর্যন্ত বলেছে, ওই ভয়ঙ্কর রাত্রিটাই ছিল জীবনের শ্রেষ্ঠ দোলরজনী। সাতাশে মার্চ, আবার এসে গেল মল্লিকার জন্মদিন।

এন্ট্রি ৫

মলয় যা করেছিল পলাশের সঙ্গে/ তার চেয়ে বড় নয় ফরাসি বিপ্লব

সীমানার থুতনিতে একটা তিল। জিনস পরা সদ্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াতে আসা, চার্লস ওয়ালেস স্কলার, সীমানা হোহো করে হাসতে লাগল। আমি বললাম, হাসছ কেন? সীমানা বলল, এত ক্ষণ ধরে আপনি আমার থুতনির দিকে তাকিয়ে আছেন কেন? আমি বললাম, আমি তোমার থুতনির দিকে তাকিয়ে নেই, আমি দেখছি তোমার তিল। কী করে এখানে তিলটা এল? সীমানা আরও জোরে জোরে হাসতে হাসতে বলল, আমাকে এটা মল্লিকা আন্টি দিয়েছেন, নিজের থুতনি থেকে খুলে। বিশ্বাস করুন, আজ দোল। আজ আমি কোনও মিথ্যা বলব না। মল্লিকা আন্টির এক বিখ্যাত লাইন আছে—‘মেয়েরা কি বিপ্লবের সেবাদাসী হবে?’ এই লাইনটাই আমার পোস্ট-ডক্টরাল কাজের কোরক। আপনি আমার সঙ্গে চলুন। আমি আপনাকে তিল থেকে সেবাদাসী, মানুষের জীবনের নিটফল— বিন্দু এবং বিসর্গ দুটোই আপনাকে বোঝাব। তার আগে দরকার এক প্যাকেট আবির। আমি বিহ্বল হয়ে বললাম, আবির আমার কী করতে পারে? মলয় বাতাস যা করতে পারে একটি পলাশের সঙ্গে (ঋণ : নেরুদা), তার চেয়ে বেশি দুষ্টুমি মানুষের সঙ্গে করতে পারেনি ফরাসি বিপ্লব। আবির এসে গায়ে ছড়িয়ে পড়ল। হাতে বুকে মাথার চুলে। দিগন্ত থেকে আবির উড়ে এল। পাড়ার দোকান থেকে আবির উড়ে এল। সীমানা আমার হাত ধরে বলল, হাত ধরুন, এবার আমরা স্বর্গে যাব। আমরা কলকাতার ওপর দিয়ে উড়ে যেতে লাগলাম—যাদবপুর গড়িয়াহাট, পার্ক সার্কাস, বাইপাস, সল্ট লেক, রাজারহাট—আমরা উড়ে চলেছি কাকদ্বীপ থেকে কোচবিহারের দিকে, এক আকাশ আবিরের ভেতর দিয়ে। কোচবিহার থেকে আফগানিস্তানের দিকে। আফগানিস্তান থেকে আলেকজান্দ্রিয়ার দিকে। ডেস্টিনেশন ক্লিওপেট্রার বাগান। সেখানে এখন দোল। বহিতেছে মৃদুমন্দ মলয় বাতাস।

কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীকে (এখন বয়েস ৯৩) মোবাইলে ফোন করেছিলাম। দিল্লির সাহিত্য আকাদেমির সবচেয়ে বড় সম্মান ‘ফেলো’ নির্বাচিত হয়েছেন গত সপ্তাহে। আমি বললাম, আপনি দিল্লিতে একটাও ফোন করলেন না কেন? ওঁরা অপেক্ষা করছেন। তার উত্তরে আমাকে বললেন, শোনো বাবা! মোবাইল নিয়ে একটা অশ্লীল কথা বলি, ‘আমি ধরতে পারি, করতে পারি না।’ দোল এমন একটা মোবাইল, এমন একটা তরঙ্গ, যাকে ধরা যায় কিন্তু ধরে রাখা যায় না। আজি যে রজনী যায় তাকে কে ফিরিয়ে আনবে? তাঁর উত্তর একমাত্র কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়।

ছবি: কৌশিক সরকার

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

nostalgia dol festival of colour
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE