Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

কলকাতা কড়চা

পাথুরিয়াঘাটার ঠাকুর পরিবারের শৌরীন্দ্রমোহন ঠাকুরের উৎসাহ ছিল দেশবিদেশের সংগীতযন্ত্রে। তিনি উদ্যোগী হন প্রাচীন সংগীতগ্রন্থের পুনরুদ্ধার এবং সংগীতযন্ত্র সংগ্রহে। তাঁর সেই সংগ্রহ এখন সংরক্ষিত ভারতীয় সংগ্রহশালায়।

শেষ আপডেট: ২২ অগস্ট ২০১৬ ০০:০০
Share: Save:

কলকাতায় নতুন বাদ্যবীথিকা

ঠাকুর পরিবারের শৌরীন্দ্রমোহন ঠাকুরের উৎসাহ ছিল দেশবিদেশের সংগীতযন্ত্রে। তিনি উদ্যোগী হন প্রাচীন সংগীতগ্রন্থের পুনরুদ্ধার এবং সংগীতযন্ত্র সংগ্রহে। তাঁর সেই সংগ্রহ এখন সংরক্ষিত ভারতীয় সংগ্রহশালায়। বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষৎ, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হল, আশুতোষ সংগ্রহশালা, গোলপার্ক রামকৃষ্ণ মিশনের সংগ্রহশালা বা লোকগ্রামেও রয়েছে কিছু বাদ্যযন্ত্র। বিধাননগরে পূর্বাঞ্চল সংস্কৃতি কেন্দ্রে ‘বাংলার কারুশিল্প সংগ্রহশালা’-য় বাংলার নানা শিল্প উপাদানের সঙ্গেই ছিল বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র: বাঁশি, ঢোল, ধামসা, সারেন্দা, ব্যানা, ট্রাম্পেট এবং গায়ে সুচারু নকশা খোদিত শঙ্খ। কিন্তু এ বারে এখানেই একটি পূর্ণাঙ্গ বাদ্যবীথিকা গড়ে তোলা হল। সারা দেশ থেকে প্রায় চারশো ধরনের বাদ্যযন্ত্র সংগৃহীত হয়েছে এখানে, সঙ্গের ছবিতে তারই একটি অংশ। এই সংগ্রহশালার মূল পরিকল্পনা করেছেন কেন্দ্রের অধিকর্তা ওমপ্রকাশ ভারতী। ভারত সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রকের সহায়তায় সম্প্রতি ধামসা বাজিয়ে এটির দ্বারোদঘাটন করেন রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী। তিনি বলেন, ‘সাধারণের জন্যে এই বিপুল ও পরিশ্রমী উদ্যোগ প্রশংসনীয়।’ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পারফর্মিং আর্টে জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত ২০জন শিল্পী।

চারটি বিভাগে এখানে বাদ্যযন্ত্রগুলি সাজানো হয়েছে। যেমন, ঢাক-ঢোল বা ঘনবাদ্য, তারের বাজনা বা ততবাদ্য, হাওয়া দিয়ে বাজাবার যন্ত্র বা সুশিরবাদ্য এবং পারকাসন বা আনদ্ধবাদ্য। ভারতের বিভিন্ন জনজাতির বহু বিচিত্র বাদ্যযন্ত্র স্থান পেয়েছে এই সংগ্রহশালায়। ঝাড়খণ্ডের ভুয়াং এবং ঢাক, ত্রিপুরার রোসেম, মণিপুরের গুসেম এবং তিংতেইল্লা, সাঁওতালদের মাদল, ওড়িশার কেন্দ্রা, অসমের তিওয়া জনজাতির হুটুটু, কেরলের উড্ডাকা এবং ছেন্দা, মেঘালয়ের সিং-নাকড়া, লেপচাদের সাতসং এবং তুংনা, রাজবংশীদের সারিন্দা, ভুটিয়াদের গাইলিং এবং মেফারমা এবং নউমাটি বাজাদের নরশিঙা এই প্রদর্শশালার বিশেষ আকর্ষণ। সেই সঙ্গে এখানে গ্রন্থিত হয়েছে সেই সমস্ত বাদ্যযন্ত্রের ইতিহাস, যন্ত্রীদের ইতিহাস, প্রাপ্তিস্থান এবং সেগুলি তৈরির ইতিহাসও— একটি সংগ্রহশালায় যা সবচেয়ে প্রয়োজনীয়। বাদ্যযন্ত্র নিয়ে তৈরি কিছু তথ্যচিত্র অচিরেই দেখানো হবে এখানে। বাদ্যবীথিকা প্রতি কাজের দিন সকাল ১০-৮ পর্যন্ত খোলা।

তথ্যচিত্র

শ্রীমা সারদা দেবীর জন্ম বাঁকুড়া জেলার জয়রামবাটিতে হলেও জীবনের বেশ কিছু কাল (১৯০৯-১৯২০) কাটান বাগবাজারে, যা ‘মায়ের বাড়ি’ বলে আজও সুবিদিত। এখানেই শ্রীমা সারদা দেবীর মহাসমাধি ঘটে। কতই না বিখ্যাতজনের পদার্পণ ঘটেছে এই বাড়িতে: নটনটী থেকে স্বাধীনতা সংগ্রামী, সন্ন্যাসী থেকে সমাজসংস্কারক পর্যন্ত। শ্রীমা সারদা দেবীর উপর সাত মিনিটের একটি তথ্যচিত্র তৈরি করা হয়েছে। এটিতে ‘মায়ের বাড়ি’-র উপরেও আলোকপাত করা হয়েছে। তথ্যচিত্রটি সম্প্রতি ইউটিউব-এ দেওয়া হয়েছে (‘মা সারদা আ শর্ট ডকুমেন্টারি’)। এতে স্বাধীনতা সংগ্রাম, নারীশিক্ষার প্রসার, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, বাংলার রঙ্গালয় প্রভৃতি ক্ষেত্রে শ্রীমা সারদা দেবীর মহিমা দেখানো হয়েছে। আছে শ্রীমার বেশ কিছু দুষ্প্রাপ্য ছবি। শ্রীমার জীবন ও বাণী নিয়ে এই ধরনের তথ্যচিত্রের প্রয়াস এই প্রথম। এটির নির্মাতা অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় সাহিত্যিক বনফুল-এর ভ্রাতুষ্পুত্র এবং চিত্রপরিচালক অরবিন্দ মুখোপাধ্যায়ের পুত্র। প্রসঙ্গত, অভিজিতের বড়মা লীলাবতী দেবী (বনফুল-এর স্ত্রী) শৈশবে শ্রীমা সারদা দেবীর সান্নিধ্যে ছিলেন মায়ের বাড়িতে। এই তথ্যচিত্রটি সম্পাদনা করেছেন দিব্যেন্দু পোরেল। ভাষ্যপাঠ করেছেন অমিত রায় ও রত্না মিত্র। সঙ্গে ‘মায়ের বাড়ি’তে শ্রীমায়ের ছবি।

সম্মান

রবীন্দ্রনাথের ভারত-ভাবনার সঙ্গে কী ভাবে মিশে গিয়েছিল তাঁর ইউরোপ-ভাবনাও, তা নিয়ে বলবেন সুধীর কাকার। কবির ভাবনার জগৎ ঘিরে মনস্তাত্ত্বিক সুধীরের পুনর্ভাবনা, তিনি আলোচনায় তুলে আনবেন কবির ‘আইডিয়া অব ইন্ডিয়া’র সঙ্গে ‘আইডিয়া অব ইউরোপ’-এর হাত-মেলানো। ‘দ্য কমপ্লিমেনটারিটি অব সিভিলাইজেশনস: রবীন্দ্রনাথ টেগোর রিভিজিটেড’। ম্যাক্সমুলার ভবনে ২৩ অগস্ট সন্ধে ৬টায়, মার্ক ইন্ডিয়া ও গ্যেটে ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে। ভারত ও জার্মানির সাংস্কৃতিক মেলবন্ধনের স্বরূপ হিসেবে সে দিন ‘মার্ক-টেগোর’ সম্মানে ভূষিত হবেন সুধীর। এই উপলক্ষে পর্তুগাল ইতালি ও ভারতের শিল্পীদের নিয়ে জনার্দন ঘোষের নির্দেশনায় পরিবেশিত হবে ‘ওয়াকিং ইন ড্রিম বডিস’, কিউরেটর: সুদীপ্তা দাঁ।

জন্মোৎসব

অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৭১-১৯৫১) পাশ্চাত্য রীতিতে চিত্রশিক্ষা শুরু করলেও এই রীতিতে ছবি এঁকে খুশি হননি। শুরু করেন ভারতীয় রীতি পুনরুদ্ধারের সাধনা। তাঁর এই রীতিতে আঁকা প্রথম চিত্রাবলি কৃষ্ণলীলাবিষয়ক। তাঁরই ১৪৫তম জন্মোৎসবে সর্বভারতীয় চারুকলা মন্দিরের শিল্পী সদস্যদের চিত্রপ্রদর্শনীর আয়োজন ভারতীয় সংগ্রহশালার আশুতোষ শতবার্ষিকী প্রেক্ষাগৃহে (২৫-২৮ অগস্ট, ১২-৭টা)। উদ্বোধন করবেন রামানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায়। অন্য দিকে, কবি-চিত্রশিল্পী শ্যামলবরণ সাহার আঁকা ‘বাঁশগাছ’-এর ছবি নিয়ে ‘সেল্ফ পোর্ট্রেট/সিরিজ ফোর’ শীর্ষক এক অভিনব একক প্রদর্শনী শুরু হয়েছে অ্যাকাডেমি অব ফাইন আর্টস-এ। চলবে ২৬ অগস্ট (৩-৮টা) পর্যন্ত।

ঠাকুরদাদার ঝুলি

দুখু মিঞা থেকে কাজী নজরুল ইসলাম হয়ে ওঠার পথটা মসৃণ ছিল না। ঘাত-প্রতিঘাতে ভরা বিদ্রোহী কবির জীবনে ছিল দারিদ্র, দুঃখ, যন্ত্রণা, অভাব অনটনের পাশাপাশি বিদ্রোহ, প্রেম ও অভিমান। এ রকমই অজানা কিছু গল্প, গান, কবিতা ও সঙ্গে কল্যাণী কাজীর স্মৃতিকথার মধ্য দিয়েই কবিকে খোঁজার চেষ্টা হবে আইসিসিআর-এর ‘অনিন্দিতার ঠাকুরদাদার ঝুলি’ অনুষ্ঠানে (২৬ অগস্ট সন্ধে ৬টায়)। কবির নাতনি অনিন্দিতার কথায়, ‘কিছুটা দায়বদ্ধতা, তবে অনেকটাই দাদুকে ভালবেসে, নতুন প্রজন্ম ও দাদুর অনুরাগীদের কাছে তাঁর জীবনদর্শন, ভাবনাকে পৌঁছে দেওয়ার জন্যই এই অনুষ্ঠান করার ক্ষুদ্র প্রয়াস।’

মনসামঙ্গল

অবলম্বন সেই কেতকাদাস ক্ষেমানন্দরই রচনা, কিন্তু কাহিনির নতুন পাঠ তৈরি করেছেন উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়। তাঁর লেখা নাটক ‘মনসামঙ্গল’ নান্দীপট-এর সাম্প্রতিক প্রযোজনা। সেখানে চাঁদ সওদাগর গায়ক, দোষেগুণে ভরা সাধারণ এক বিপন্ন মানুষ, দেবী মনসার কোপে তার স্বর নষ্ট হয়ে যায়। তবু দৈবশক্তির বিরুদ্ধে থামে না চাঁদের লড়াই। ‘মূঢ় আত্ম-অহংকারের বিরুদ্ধে এ নাটক।’ জানালেন পরিচালক প্রকাশ ভট্টাচার্য। তাঁর নির্দেশনায় ৪০ জন শিল্পীর সমন্বয়ে নাটকটির (সঙ্গে তারই একটি দৃশ্য) আগামী অভিনয় ২৩ অগস্ট সন্ধে সাড়ে ৬টায় অ্যাকাডেমি’তে। অন্য দিকে যথার্থ ভাল নাটক ও নাটককারের সন্ধান গত কয়েক বছর ধরে করে চলেছে সুন্দরম নাট্যগোষ্ঠী, স্বাধীনতা দিবসে প্রতিষ্ঠার দিনটিতে তাঁদের উদ্যোগে সেরা-র শিরোপা পেল ‘কবিকথা’, মলয় ঘোষের নাটক। আর সেরা অভিনেতা কৌশিক কর পেলেন মানব চন্দ্র স্মৃতিসম্মান, ‘দেবী সর্পমস্তা’-সহ নানা নাটকে বিশিষ্ট অভিনয়ের জন্য। ময়ূরী মিত্র ও মনোজ মিত্র নির্দেশিত একাধিক নাটকও মঞ্চস্থ হল সে দিন।

সুনন্দন ২৫

‘সুনন্দন’-এর আত্মপ্রকাশ ১৯৯১-এর ৪ জুন, আচার্য শৈলজারঞ্জন মজুমদারের অনুপ্রেরণা ও প্রশ্রয়ে এবং তাঁর স্নেহধন্য রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী এণাক্ষী চট্টোপাধ্যায়ের তত্ত্বাবধানে। কবি অরুণ মিত্র আমৃত্যু এর সভাপতি ছিলেন, পরে দায়িত্ব নেন সাহিত্যিক দেবেশ রায়। বিশেষ ভাবনা বা তথ্যনির্ভর বহু অনুষ্ঠান করেছে ‘সুনন্দন’। এদের প্রযোজিত সি ডি’র মধ্যে ‘বিলিতি গান ও রবীন্দ্রসঙ্গীত’, এবং ‘তোমার সুরের প্রতিধ্বনি’র জনপ্রিয়তা আজও অটুট। বিশিষ্ট শিল্পীদের অসুস্থতায় অর্থসাহায্যও দিয়েছে সুনন্দন। আজ, আই সি সি আর-এর সত্যজিৎ রায় প্রেক্ষাগৃহে সন্ধ্যা সাড়ে ছ’টায় আচার্যের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপনে সুনন্দন-এর পরিবেশনা: শ্রাবণের গান। বিন্যাস, পরিকল্পনা ও পরিচালনায় সুনন্দন-এর কর্ণধার এণাক্ষী চট্টোপাধ্যায়। ‘সুনন্দন’-এর ২৫তম বর্ষ পালনের এটি প্রথম অনুষ্ঠান। এ দিকে রবীন্দ্রনাথের স্বল্পশ্রুত গানের একটি সংকলন করেছেন বাংলাদেশের শিল্পী সুকান্ত চক্রবর্তী ও কলকাতার শিল্পী অভিজিৎ মজুমদার। ‘আমরা না-গান গাওয়ার দল’ (হিন্দুস্থান রেকর্ড) শীর্ষক সিডি-র প্রকাশ ২৪ অগস্ট সন্ধে ৬টায় আইসিসিআর-এ। অনুষ্ঠানে থাকবে শিল্পীদের কণ্ঠে সংগীত। আয়োজনে আইসিসিআর ও হিন্দুস্থান রেকর্ড। অন্য দিকে, জয়তী আচার্যের পরিচালনায় ‘বিনোদন কলকাতা’ তাদের শিল্পীদের নিয়ে আয়োজন করেছে ‘গহন রাতে শ্রাবণ ধারা’ শীর্ষক এক রবীন্দ্র-গীতিআলেখ্যের অনুষ্ঠান: ‘সুজাতা সদন’-এ ২৫ অগস্ট সন্ধে সাড়ে ৬টায়। সঞ্চালনায় রজত গঙ্গোপাধ্যায়।

একা শম্পা

কুড়ি বছর আগে টিভি চ্যানেলের গানের প্রতিযোগিতার মঞ্চ চিনিয়ে দিয়েছিল তাঁকে। সেই ১৯৯৬ সালেই শম্পা কুণ্ডুর প্রথম অ্যালবাম ‘তোমায় ভেবে’। তার পরে একের পর এক অ্যালবাম, আধুনিক গান, রবীন্দ্রসংগীত, নজরুলগীতি, ভক্তিগীতি পেরিয়ে সিনেমা-সিরিয়ালে প্লে ব্যাক। গানে-খড়ি ছোটবেলাতেই, বাবা সুবীর কুণ্ডু, মা বেলা কুণ্ডুর কাছে। তার পরে রুবি দত্ত, অমলেন্দু পাল, সুকুমার মিত্র, জটিলেশ্বর মুখোপাধ্যায়, শিপ্রা বসুদের কাছে তালিম। পেশাদার সংগীত-জীবন পেরিয়ে গেল দু’দশক। আজ তাঁর গানের অনুষ্ঠান: ‘এক সন্ধ্যায় একা শম্পা’।

সুতানুটি উৎসব

কলকাতার ইতিহাসে সুতানুটির গুরুত্ব সুপরিচিত। জোব চার্নক এখানেই প্রথমবার পা রেখেছিলেন। সেই ‘সুতানুটি’ নামাঙ্কিত উৎসবই এ বছর ২৫ বছর অর্থাৎ রজতজয়ন্তীতে। নানা অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে সুতানুটি পরিষদের ‘সুতানুটি উৎসব’ ২৪ অগস্ট (সন্ধে ৬-সোয়া ৭টা) শোভাবাজার নাটমন্দিরে উদ্বোধন হবে। চলবে ২৮ অগস্ট পর্যন্ত। পাঁচ দিনব্যাপী অনুষ্ঠানে ২৫ অগস্ট ‘সুতানুটির ঐতিহ্য’ বিষয়ে বলবেন জহর সরকার, ২৬ অগস্ট ‘শতবর্ষের আলোয় কানন দেবী’ (রচনা ও উপস্থাপনা শঙ্করলাল ভট্টাচার্য ও ইন্দ্রাণী ভট্টাচার্য)। ২৭ অগস্ট বিতর্কসভা ‘বাঙালি বাঙালিয়ানা হারাচ্ছে’, বলবেন সুমন মুখোপাধ্যায়, তরুণ গোস্বামী, আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়, স্বাতী ভট্টাচার্য প্রমুখ। পাশাপাশি, ৪ সেপ্টেম্বর সন্ধে ৬টায় মদনমোহনতলা ঠাকুরবাড়িতে সুমন ভট্টাচার্যের পালাকীর্তনের আয়োজনও রয়েছে।

সচেতন

নূরলদীন সেই সাধারণ কৃষক, যিনি আঠারো শতকে রঙপুরে কৃষকদের ওপর ভয়াবহ অত্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান। জাতপাত নির্বিশেষে রঙপুরের কাজিরহাট, কাকিনা, ফতেপুর, ডিমলা প্রভৃতি স্থানের গরিব প্রজাদের নিয়ে বিদ্রোহ করেন, পালটা প্রশাসন গড়ে তোলেন, তারপর নিহত হন নূরলদীন। ইতিহাসের এ অধ্যায় অবলম্বনে বাংলাদেশের সৈয়দ শামসুল হক রচনা করেন কাব্যনাট্য ‘নূরলদীনের সারাজীবন’। নির্দেশক কিশোর সেনগুপ্ত, কল্যাণী নাট্যচর্চা কেন্দ্র-র কর্ণধার, মনে করেন ‘এ কাব্যনাট্য চিরায়ত। এর সমকালীনতা আমাকে উত্তেজিত করেছে, তেমনই মুগ্ধ করেছে এর কাব্যগদ্য ও নাট্যগুণ। ঢাকায় গিয়ে বিরাশি-পেরনো বিশিষ্ট নাট্যকার হক সাহেবের সঙ্গে দেখা করে তাঁর কাছ থেকে প্রযোজনার অনুমতি নিয়েছি। সেই সঙ্গে ঘুরে এসেছি রঙপুরের প্রজাবিদ্রোহের জায়গাগুলি।’ প্রথম অভিনয় ২৫ অগস্ট সন্ধে সাড়ে ৬টায় অ্যাকাডেমি’তে। ইংরেজি সাহিত্য ও মাস কমিউনিকেশন-এর ছাত্র, বর্তমানে ইংরেজির শিক্ষক কিশোর বরাবরই রাজনীতি-সচেতন এবং সাহিত্যনির্ভর প্রযোজনায় উৎসাহী। অশ্বচরিত, খোয়াবনামা, হারিয়ে যায় মানুষ, বাবরের প্রার্থনা, মেয়েটি, তৃতীয় আরেকজন, গোড়ায় গলদ— কল্যাণী নাট্যচর্চা’র একের পর এক প্রযোজনা তাঁর নির্দেশনার দিকচিহ্ন। তাঁর মঞ্চাভিনয়ও মুগ্ধ করেছে দর্শককে। নিজস্ব থিয়েটার ভবনে নিত্য ওয়ার্কশপ করানোর ফাঁকে নিজের শিক্ষককে কখনও ভোলেন না কিশোর: ‘অশোক মুখোপাধ্যায়। তিনিই প্রাণিত করেন থিয়েটারে আসতে।’

শিশুসাহিত্যিক

স্কুলের পত্রিকায় শুরু, স্কুল পেরিয়ে তাঁর প্রথম লেখা ‘মাসপয়লা’য়। শিশুসাহিত্যিক শৈলেন ঘোষের জন্ম ৮ ডিসেম্বর ১৯২৮ সালে হাওড়ার সালকিয়ায়। ছেলেবেলায় স্বপ্ন ছিল বড় ফুটবলার হওয়া। বাধ সাধল মাঠের প্রতিনিয়ত চোট-আঘাত। কিন্তু সৃষ্টিশীল মন ও নেতৃত্ব যাঁর সহজাত, তিনি দমে যাননি। শিশুসাহিত্য চর্চা করেছেন অর্ধশতাব্দীরও বেশি। বিমা কোম্পানির চাকরির পাশাপাশি যোগ দেন ‘মণিমেলা’য়। ছোটদের জন্য তিনি তিরিশটিরও বেশি নাটক লিখেছেন। ১৯৭০ সালে তৈরি করেন শিশুদের সাংস্কৃতিক সংস্থা ‘শিশুরঙ্গন’। প্রায় চল্লিশটি নাটক প্রযোজনা করেছে এই সংস্থা। টানা পঁয়তাল্লিশ-ছেচল্লিশ বছর ছিলেন সাধারণ সম্পাদক। তাঁর প্রেরণা ও আদর্শ ছিলেন ‘মৌমাছি’, যাঁর পরিচালিত ‘আনন্দমেলা’য় প্রথম গল্প প্রকাশিত হয় ‘মা’। সাপ্তাহিক আনন্দমেলার সঙ্গে আনন্দবাজার পত্রিকার পূজাবার্ষিকী ও দোল সংখ্যায় সংযোজিত ‘আনন্দমেলা’য় প্রায় প্রতি বছর তাঁর গল্প লেখার সুযোগ ঘটেছে। এই বিভাগেই ১৯৬২-তে প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম ধারাবাহিক উপন্যাস টুই টুই। মিতুল নামে পুতুলটি, বাজনা, হুপ্পোকে নিয়ে গপ্পো, আমার নাম টায়রা, আজব বাঘের আজগুবি, স্বপ্নের জাদুকরী, জাদুর দেশে জগন্নাথ প্রভৃতি উপন্যাসের কোনও কোনওটি যেমন নিটোল রূপকথার আঙ্গিকে, তেমনই কয়েকটি আবার বাস্তব ও কল্পনার মিশেলে রচিত। ’৬৩-তে অরুণ-বরুণ-কিরণমালা-র জন্য পেয়েছেন সংগীত নাটক অকাদেমি পুরস্কার। পেয়েছেন জাতীয় পুরস্কার, বিদ্যাসাগর পুরস্কার, মৌচাক পুরস্কার, নেহরু ফেলোশিপ-সহ একাধিক সম্মাননা। ১৪ অগস্ট, সাতাশি বছর বয়সে প্রয়াত হলেন তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE