Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

কলকাতার কড়চা

.....

শেষ আপডেট: ১৮ অগস্ট ২০১৪ ০০:০০
Share: Save:

শতবর্ষে শম্ভু মিত্র

শম্ভু মিত্র তাঁর জীবনেই কিংবদন্তি হয়ে উঠেছিলেন। আধুনিক বাংলা থিয়েটারের অন্যতম পুরোধা এই মানুষটি আমাদের নাটকের মৌল শিল্পরূপ নিয়ে ছিলেন সদাচিন্তক: ‘সংস্কৃত বা ইউরোপীয় নাটকের অনুকরণে নয়, আমাদের নিজেদের রূপে নিজেদের কথা। মানুষের চিরন্তন কথার সঙ্গে আমাদের আজকের কথা, ও আজকের কথার সঙ্গে আমাদের আগামী দিনের কথা। এই তিনটে যতো ভাল করে মিলবে, রূপটাও ততো বিশিষ্ট হয়ে ফুটতে থাকবে।’

জন্ম ১৯১৫-র ২২ অগস্ট। এ বছর ২২ অগস্ট তাঁর জন্মশতবর্ষের সূচনা। ১৯৪৮-এ প্রতিষ্ঠা করেন ‘বহুরূপী’, স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলা থিয়েটার জেগে উঠল নতুন ভাষ্যে। পেশাদারি মঞ্চের পাশাপাশি এক শক্তিশালী সমান্তরাল নাট্যপ্রবাহ। ১৯৪৮-৭১ ‘বহুরূপী’র প্রযোজনায় একটির পর একটি নাট্যনির্মাণে তিনি নিজেই যেন নিজেকে অতিক্রম করে গিয়েছেন। তাঁর পরিচালিত সেই সমস্ত নাট্যপ্রযোজনার কিছু কিছু অংশ উপস্থাপিত করে ‘বহুরূপী’ তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করবে তাঁরই জন্মদিনে, দিল্লির হ্যাবিট্যাট সেন্টারে ‘তোমারে স্মরণ করি রূপকার’ (সঙ্গে তারই মহড়ার ছবি)। ‘বহুরূপী’ও আজ ৬৬ পেরিয়ে ৬৭-তে। ‘নবান্ন’, ‘রাজা’, ‘রক্তকরবী’, ‘পুতুলখেলা’ নাটকের অংশবিশেষের অভিনয়ে, আই পি টি এ-র গানে দেবেশ রায়চৌধুরীর সঙ্গে অংশ নেবেন ‘বহুরূপী’র বর্তমান প্রজন্মের একঝাঁক কুশীলব। শম্ভু মিত্রের কণ্ঠস্বরে, আলোকচিত্রের প্রদর্শনে নির্মিত এই নাট্যকোলাজ। বিন্যাসে সুকৃতি লহরী, নির্মাণে তুলিকা দাস। সে সময়ের বহু শ্রোতার স্মৃতিতে আজও উজ্জ্বল বেতারে শম্ভু মিত্রের অনবদ্য প্রযোজনার নাটক। শতবর্ষে সেই কিংবদন্তি কণ্ঠ ফিরিয়ে আনছে আকাশবাণী। ‘রক্তকরবী’, ‘ঘাতক’, ‘বিসর্জন’, ‘স্বীকারোক্তি’, ‘তাহার নামটি রঞ্জনা’, ‘বিরাজ বৌ’, ‘কাক’, ‘ছেড়া তাঁর’ ও ‘এবং ইন্দ্রজিত্‌’... শোনা যাবে কলকাতা ‘ক’ ও এফ এম রেনবো প্রচার তরঙ্গে ২২-২৮ অগস্ট। এই ক’দিন কুমার রায় থেকে শাঁওলী মিত্র প্রমুখের নেওয়া সাক্ষাত্‌কারও শোনা যাবে রাত ন’টায় এফ এম রেনবো প্রচার তরঙ্গে। অন্য দিকে ২৪ অগস্ট বিকেল সাড়ে চারটেয় উত্তম মঞ্চে ‘শম্ভু মিত্র স্মারক বক্তৃতা’ দেবেন রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত। দেখানো হবে ল্যাডলী মুখোপাধ্যায় পরিচালিত তথ্যচিত্র ‘দ্য অনেস্ট থিয়েটার’। আয়োজনে বালিগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র সংসদ।

অশ্রুত দেবব্রত

‘দিল্লির যে মানসিক মরুভূমির মধ্যে আমায় সময় সময় থাকতে হয়, সেখানে ফিতেয় তোলা আপনার কণ্ঠে গীত একগুচ্ছ গান আছে। সেগুলো এই মরুভূমির মরূদ্যান। হাজারবার শুনেও তৃপ্তি হয় না।’ দেবব্রত বিশ্বাসকে লিখেছিলেন প্রমথনাথ বিশী। গানগুলি শিল্পী ১৯৭৮-এ রেকর্ড করে দেন প্রমথনাথ বিশীকে। সেই ৩৬টি গান এ বার সুলভ হচ্ছে এমপিথ্রি-তে। প্রকাশ করছে দেবব্রত বিশ্বাস স্মরণ কমিটি। প্রকাশিত হচ্ছে ১৯৬১-তে আকাশবাণীতে গাওয়া তাঁর গানগুলিও। দুটিরই প্রকাশ তাঁর ১০৩ তম জন্মবার্ষিকীতে, ২১ অগস্ট শিশির মঞ্চে। খালেদ চৌধুরী থেকে নবারুণ ভট্টাচার্য বহু জনের স্মৃতিচারণ ও গোলাম মুরশিদ, শিবাজি পাল প্রমুখকে লেখা অপ্রকাশিত চিঠি-সহ একটি স্মারকগ্রন্থ দূরে যাব সরে তখন চিনিবে মোরে (সম্পাদনা অজয় গুপ্ত, দে’জ) প্রকাশ করবেন শমীক বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘দেবতাদের কথাবার্তা: দেবব্রত ও ঋত্বিক’ শীর্ষক একটি শ্রুতি-দৃশ্য উপস্থাপন করবেন সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়। গাইবেন স্বপন গুপ্ত ও শ্রেয়া গুহঠাকুরতা। ছবি: বরুণকান্তি চট্টোপাধ্যায়।

বিস্মৃত বই

‘দেড়শ বছরের বিস্মৃত বাংলা বই’ নিয়ে ‘কোরক’-এর (সম্পা: তাপস ভৌমিক) নতুন সংখ্যা। ‘পুরনো কালের লেখা কখনও পুনঃ-মর্যাদায় ফিরে আসে, সেই জন্যেই বারে বারে অতীতের দিকে ফিরে দেখা,’ ভূমিকায় লিখেছেন অলোক রায়। সম্পাদক জানিয়েছেন: ‘অঙ্গুরীয় বিনিময় (১৮৫৭) থেকে ব্যান্ডমাস্টার (১৯৬৯) পর্যন্ত সময়সীমায় প্রকাশিত বাংলা বই, যেগুলি তার বিষয়বৈচিত্র্য এবং লেখকের উপস্থাপন কুশলতায় একসময় পাঠকমহলে যথেষ্ট আলোড়ন ফেলেছিল, অথচ আজ তা একেবারে বিস্মৃত, সেই দুষ্প্রাপ্য গ্রন্থসম্ভারকে আমরা আলোচনায় আনতে চেয়েছি।’ দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্বপ্ন-প্রয়াণ, জ্যোতিরিন্দ্রনাথের অলীকবাবু, মণীন্দ্রলাল বসুর রমলা, প্রেমাঙ্কুর আতর্থীর মহাস্থবির জাতক, যুবনাশ্ব’র পটলডাঙার পাঁচালী থেকে শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের কুয়োতলা অবধি বহু বইয়ের আলোচনা। সুনন্দ অধিকারী এমনতর বাংলা বইয়ের একটি তালিকাও করে দিয়েছেন।

নতুন কৃত্তিবাস

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় নেই, কিন্তু ‘কৃত্তিবাস’ আছে। স্বাতী গঙ্গোপাধ্যায়ের সম্পাদনায় নিয়মিত প্রকাশ পাচ্ছে পত্রিকা। ষাট বছর পূর্তির পরেই যেন আবার সেটি নতুন করে তরুণ হয়ে উঠতে চাইছে। স্বাতী গঙ্গোপাধ্যায়ের কথায়, নবপর্যায় ৫১তম সংখ্যা থেকে বদল আসছে বিষয়ে, আঙ্গিকে। ফিরে আসছে কৃত্তিবাসের একেবারে প্রথম দিকের মজা। কবিতার পাশাপাশি থাকবে গল্পও। এ সংখ্যায় প্রকাশ পাচ্ছে এমন ১৪ জন কবির গুচ্ছ কবিতা, যাঁদের অনেকেই আগে কৃত্তিবাস-এ লেখেননি। ‘বাংলা গানের লিরিকে কবিতা’ নিয়ে লিখেছেন শ্রীকান্ত আচার্য। কাশ্মীরের খানাপিনার আস্বাদ দিচ্ছেন কবি রজতেন্দ্র মুখোপাধ্যায়। গল্প লিখেছেন রবিশঙ্কর বল। আর ‘চৌমাথা’ নামে একটি নতুন বিভাগে ‘প্রসঙ্গ সত্তর’ নিয়ে কথা বলেছেন সত্তর দশকের চার কবি রণজিত দাশ, শ্যামলকান্তি দাশ, মৃদুল দাশগুপ্ত ও সুবোধ সরকার। নতুন কৃত্তিবাস ২২ অগস্ট বাংলা আকাদেমি সভাগৃহে সন্ধে সাড়ে ৬টায় প্রকাশ করবেন নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী। থাকবেন ‘কৃত্তিবাস’-সুহৃদ শীর্ষক মুখোপাধ্যায়।

স্মৃতিরক্ষা

সিস্টার নিবেদিতার বাগবাজারের বাড়িটি বহু দিন ছিল অবহেলিত। ১৯৯১-এ সেই বাড়িটি চিহ্নিত করে সেখানে নিবেদিতার মূর্তি-সহ স্মৃতিফলক স্থাপন করে ‘সিস্টার নিবেদিতা ইনস্টিটিউট অব কালচার’। সংস্থা গড়ে তোলা আর তার নানা কর্মোদ্যোগের পিছনে ছিলেন প্রয়াত কৃষ্ণদাস পালিত। এর পাশাপাশি নিবেদিতার পূর্ণাবয়ব মূর্তি প্রতিষ্ঠা এবং স্থানীয় পার্কটিকে তাঁর নামাঙ্কিত করার বিষয়ে সক্রিয় ভূমিকা নেয় এই সংস্থা। বর্তমানে রাজ্য সরকার বাড়িটি অধিগ্রহণ করে রামকৃষ্ণ সারদা মিশনকে দান করেছে, সংস্কারের কাজও চলছে। এ বছর সংস্থার রজতজয়ন্তী বর্ষ উপলক্ষে ২৪ অগস্ট সন্ধে ছ’টায় রামমোহন হলে অনুষ্ঠান। উপস্থিত থাকবেন সোমপ্রাণা মাতাজি, বিচারপতি শ্যামলকুমার সেন, মন্ত্রী সাধন পাণ্ডে।

অনুবাদ

‘আমার গানগুলো নিয়ে তোমার যা ইচ্ছে তাই তুমি করতে পারো; শুধু আমাকে অসম্ভব সম্ভব করতে বোলো না। বাংলা কবিতার মূল ছন্দ বজায় রেখে ইংরেজিতে পদ্যানুবাদ করা যাতে শব্দগুলি সুরের সঙ্গে মিলে যায় এই চেষ্টা করা আমার পক্ষে বোকামি হবে।... আর সুরগুলোও তুমি নিজেই দিও। তোমার উপরে আমার বিশ্বাস আছে...।’ এতটা স্বাধীনতা দিয়ে যাঁকে রবীন্দ্রনাথ এ চিঠি লিখছেন তিনি আর্থার গেডেস, স্যার প্যাট্রিক গেডেসের পুত্র। শ্রীনিকেতনে থাকার সময় রবীন্দ্রনাথের কিছু গান আর্থার অনুবাদ করেন, নিজেই সুর দেন। একটি সংকলনের কথাও ভেবেছিলেন, যার ভূমিকা লেখেন বিশ্বভারতী-র তখনকার আচার্য তথা প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু। নানা কারণে তা প্রকাশ পায়নি। পরে আর্থারের দুই কন্যা ম্যারিয়ন ও ক্লেয়ার-এর উদ্যোগে এটি প্রকাশ করে রিসার্জেন্স ট্রাস্ট। এ বার তারই ভারতীয় সংস্করণ, ফোর্টিন সংস প্রকাশ করল বিশ্বভারতী গ্রন্থনবিভাগ। বাইশে শ্রাবণ রবীন্দ্রভবনে বইটি প্রকাশ করেন বিশ্বভারতীর উপাচার্য সুশান্ত দত্তগুপ্ত।

স্বাবলম্বী

দুঃস্থ মানুষদের স্বাবলম্বী করতে কাজ করে ‘শ্রীরামকৃষ্ণ প্রেম বিহার’। জেলার পাশাপাশি কাজ চলছে কলকাতার মানিকতলায়। পুরুষদের হাতের কাজ শেখানো, মহিলাদের কাটিং-জ্যাম-আচার-রান্নার মশলা-বড়ি তৈরির প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। শিশুদের জন্য রয়েছে প্রাথমিক বিদ্যালয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগেও সংস্থা থাকে অসহায় মানুষের পাশে। এ ব্যাপারে উদ্যোগী হয়েছেন হৈমন্তী শুক্লও। নিজের উদ্যোগে হরিনামের মাহাত্ম্যের সাতটি গানের একটি সিডি ‘মন এক বার হরি বল’ প্রকাশ করছেন ১৭ অগস্ট। বিক্রির অর্থ আশ্রমের উন্নতিকল্পে ব্যয় হবে।

সঙ্গীতস্রষ্টা

সেই সত্তর দশক থেকে দর্শকের শ্রুতিতে স্মরণীয় হয়ে আছেন খৈয়ম। কভি কভি, উমরাও জান, বাজার, নুরি থেকে কিছু কাল আগে গৌতম ঘোষের যাত্রা-য় তাঁর সুরসৃষ্টি আজও বুঁদ করে রাখে। হিন্দি ছবির বাইরেও মনোমুগ্ধকর তাঁর গজল। ‘সঙ্গীত নাটক অ্যাকাডেমি’ সম্মান পেয়েছেন তিনি। তাঁর এই সৃষ্টিময়তা নিয়ে ছবি করেছেন সুরেশ শর্মা: ‘খৈয়ম কি সঙ্গীত যাত্রা’। এ ছবিটির সঙ্গে রাজেশ ভাটিয়ার ‘দ্য ভয়েস অব সিনেমা’ দেখানো হবে নন্দনে ১৮ অগস্ট সন্ধে ৬টায়। আয়োজনে ফিল্মস ডিভিশন ও নন্দন। নন্দনেই ২০-২২ অগস্ট ডেনমার্কের ছবির উত্‌সব, অন্যান্য ছবির সঙ্গে থাকছে সুজান বিয়ের-এর অস্কার-পাওয়া ‘ইন আ বেটার ওয়ার্ল্ড’। উদ্যোগে ফোরাম ফর ফিল্ম স্টাডিজ অ্যান্ড অ্যালায়েড আর্টস।

পঞ্চম বৈদিক

রেজিনাল্ড রোজের ‘টুয়েলভ অ্যাংরি মেন’ এ বার শহরের মঞ্চে। পঞ্চাশের দশকে আমেরিকান ফিল্মে এবং পরে বলিউডেও এই নাটক থেকে সিনেমা হয়েছে। এ বার নাটকটির অনুবাদ করেছেন অনীক ঘোষ।

তাঁরই নির্দেশনায় নাটকটি প্রযোজনা করেছে পঞ্চম বৈদিক। প্রথম অভিনয় পঞ্চম বৈদিকের নাট্যোত্‌সবে, ২৪ অগস্ট। ২২-২৪ অগস্ট অ্যাকাডেমিতে এই উত্‌সবে থাকছে ‘নাথবতী অনাথবত্‌’, ‘পশুখামার’, ‘খড়ির তীর’ ছাড়াও ‘আপাতত এইভাবে দুজনের দেখা হয়ে থাকে’ এবং ‘কন্যাদান’। শেষ দুটি সংসৃতি ও বালিগঞ্জ স্বপ্নসূচনার প্রযোজনা। ‘এই প্রথম পঞ্চম বৈদিকের উত্‌সবে বাইরের দলকেও আমন্ত্রণ করেছি, এটাও এ বারের নতুনত্ব,’ জানালেন অর্পিতা ঘোষ।

শিকড় সন্ধান

বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ্‌ সুশোভনচন্দ্র সরকারের স্মৃতিতে ১৯৯৬ সালে একটি স্মারক বক্তৃতার সূচনা করেছিল পশ্চিমবঙ্গ ইতিহাস সংসদ। প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের সঙ্গে তাদের যৌথ উদ্যোগে প্রেসিডেন্সির আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু সভাগৃহে ১৯ অগস্ট দুপুর তিনটেয় এ বারের স্মারক বক্তৃতা, রামকৃষ্ণ ভট্টাচার্য বলবেন ‘ইতিহাস: দর্শন: দর্শনের ইতিহাস’ বিষয়ে। অন্য দিকে আঠেরো বছর আগে বিরাটি কলেজের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থীরা তরুণ অধ্যাপক সুব্রত রায়চৌধুরীকে কেন্দ্র করে সাহিত্য-সংস্কৃতি চর্চার যে বৃত্ত গড়ে তুলেছিল, কলেজের গণ্ডি ছাড়িয়ে তার শিকড় আজ অনেক গভীরে। তারই উদ্‌যাপন ১৮ অগস্ট সাড়ে ৫টায় জীবনানন্দ সভাঘরে, ‘অহর্নিশ’ পত্রিকার উদ্যোগে।

সত্যি কথা

চোখ রাঙালে না হয়/ গ্যালিলেও লিখে দিলেন/ ‘পৃথিবী ঘুরছে না’/ তবু পৃথিবী ঘুরছে, ঘুরবেও/ যতই তাকে চোখ রাঙাও না —বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের কবিতার লাইনগুলি বলছিলেন বিপ্লব বন্দ্যোপাধ্যায়। স্বাধীনতা দিবসে মঞ্চস্থ হল তাঁর নতুন নাটক ‘গ্যালিলেও গ্যালিলেই’ (নিভা আর্টস-এর নিবেদন)। ‘এই সময় দাঁড়িয়ে ব্রেখটের এ নাটকটা (অনুবাদ: রতন দাস) মঞ্চস্থ করা জরুরি মনে হয়েছিল। শুধু এ রাজ্য বা এ দেশ নয়, সারা দুনিয়ায় তো শাসকরা আমাদের চোখ রাঙাচ্ছে। ব্যক্তিমানুষ হিসেবে আমরা এতটাই অসহায় বোধ করছি যে চুপ করে যাচ্ছি, ভয় ছড়িয়ে পড়ছে আমাদের শরীরে-মনে।’ বিপ্লব নির্দেশনায় এসেছেন কিছু কাল, আদতে তিনি অভিনেতা। বেলা-অবেলার গল্প, পোকা, অন্ধযুগের মানুষ-এ তাঁর অভিনয়ের কথা উঠতেই জানালেন ‘অশোক মুখোপাধ্যায় আমার প্রথম শিক্ষক। পরে অরুণ মুখোপাধ্যায় ও সুমন মুখোপাধ্যায়ের তত্ত্বাবধানেও অভিনয় করেছি পুতুলনাচের ইতিকথা আর মেফিস্টো।’ এ ছাড়াও আঁধারে একেলা, বাবলি, বা রক্তগাথা-সহ আরও অনেক নাটক তাঁর অভিনয়ের ঝুলিতে। রামকিঙ্করকে নিয়ে ‘নীল মাটি লাল কাঁকর’-এ তাঁর প্রথম নির্দেশনা। তারপর প্রাচ্য-র প্রযোজনায় সুপারি কিলার, রোমি ও জুলি, ক্যালিগুলা (আগামী অভিনয় অ্যাকাডেমিতে ১৯ অগস্ট, সন্ধে সাড়ে ৬টায়)। গ্যালিলেও-তে নামচরিত্রে পীযূষ গঙ্গোপাধ্যায়, অভিনয় করেছেন বিপ্লবও: ‘ব্রেখট বলতেন, সত্যকে কখনও বলা যায়, আবার আড়ালও করা যায়, শিল্পী স্থির করবেন কোনটা তাঁর করা উচিত। আমার মনে হচ্ছে, সত্যটা বলা উচিত। তাই এই নাটক করছি।’ ২৩ অগস্ট সন্ধে সাড়ে ৬টায় তপন থিয়েটারে গ্যালিলেও-র আগামী অভিনয়।

সুপ্রীতি-স্মরণ

জ্যাঠামশাই নৃপেন্দ্রকৃষ্ণ মজুমদার ছিলেন আকাশবাণীর উচ্চপদস্থ আধিকারিক। বাড়িতে তাই আঙুরবালা, ইন্দুবালা, কমলা ঝরিয়া, রাইচাঁদ বড়ালের মতো ব্যক্তিত্বের আনাগোনা। বাড়ির ভিতর থেকে কিশোরী মেয়েটি ওঁদের শুনিয়ে শুনিয়ে গান গাইত। এক দিন সত্যি সত্যিই নজরে পড়ল। এল রেডিয়োতে গাওয়ার সুযোগ। প্রথম গান রবিবাবুর ‘সন্ধে হল গো মা’। শুরুটা এ ভাবেই। শিল্পী সুপ্রীতি ঘোষের জন্ম ১৯২২-এ হরিপালে। সে সময় রবীন্দ্রনাথের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে তাঁর গান রেকর্ড করাতে হত। ১৯৪১-এ পায়োনিয়ার থেকে বেরোয় সুপ্রীতি ঘোষের রেকর্ড। দু’টি গান ‘চাঁদের হাসি বাঁধ ভেঙেছে,’ ‘কে বলে যাও যাও’। গান শুনে রবীন্দ্রনাথ সম্মতি দিয়েছিলেন। তবে সুপ্রীতি ঘোষ বললেই প্রথমে ভেসে আসে, ‘বাজলো তোমার আলোর বেণু’। শিল্পী কন্যা চৈতী চট্টোপাধ্যায় জানালেন, ‘রাত আড়াইটে নাগাদ জোসেফ ড্রাইভার গাড়ি নিয়ে আসতেন। মা ততক্ষণে স্নান সেরে তৈরি। পরে যখন বাড়িতে শুনতেন, মা বলতেন, রেকর্ডে আমেজটাই যেন হারিয়ে গেছে।’ স্বাধীনতার দিন মাঝ রাতে বেতারে গান গেয়েছিলেন তিনি। গাঁধীজি মারা যাওয়ার পর দিল্লি যান স্মরণসভায় গাইতে। অনেক সিনেমায় গান গেয়েছেন। ‘নষ্টনীড়’, ‘দত্তা’, ‘সাহেব বিবি গোলাম’, ‘বরযাত্রী’, ‘অভয়ের বিয়ে’ উল্লেখযোগ্য। শিল্পী প্রয়াত হন ২০০৯। শিল্পী কন্যার উদ্যোগে সুপ্রীতি ঘোষের স্মরণে ২১ অগস্ট বিড়লা অ্যাকাডেমিতে সন্ধে সাড়ে ছ’টায় অনুষ্ঠান ‘বাজলো তোমার আলোর বেণু’। সংবর্ধনা জানানো হবে দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়কে। গানে শ্রীরাধা বন্দ্যোপাধ্যায়, সৈকত মিত্র, শকুন্তলা বড়ুয়া প্রমুখ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

kolkatar karcha
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE