Advertisement
০৮ মে ২০২৪

কলকাতার কড়চা

ভাল মেয়েরা স্বর্গে যায়, আর খারাপ মেয়েরা, সর্বত্র’— বলেছিলেন এক বিখ্যাত নারী লেখক-অভিনেতা। রাত ফুরোলেই নারী দিবস, দিনভর জোরদার চর্চা হবে নারীর ক্ষমতা ও ক্ষমতায়ন নিয়ে। সেখানে ‘মন্দ’ মেয়েদের স্থান কোথায়, তাদেরও বেঁচে থাকাকে একটু সুন্দর করে তোলা যায় কি না— প্রশ্নগুলো সহজ, উত্তরও জানা। তবে কিছু মানুষ অন্য রকম ভাবেন, ভাবনাগুলো তুলেও ধরেন কাজে।

শেষ আপডেট: ০৬ মার্চ ২০১৬ ২৩:৪১
Share: Save:

আসলে সেই মানুষ-জীবনকেই ছুঁয়ে দেখা

ভাল মেয়েরা স্বর্গে যায়, আর খারাপ মেয়েরা, সর্বত্র’— বলেছিলেন এক বিখ্যাত নারী লেখক-অভিনেতা। রাত ফুরোলেই নারী দিবস, দিনভর জোরদার চর্চা হবে নারীর ক্ষমতা ও ক্ষমতায়ন নিয়ে। সেখানে ‘মন্দ’ মেয়েদের স্থান কোথায়, তাদেরও বেঁচে থাকাকে একটু সুন্দর করে তোলা যায় কি না— প্রশ্নগুলো সহজ, উত্তরও জানা। তবে কিছু মানুষ অন্য রকম ভাবেন, ভাবনাগুলো তুলেও ধরেন কাজে। সুমন মৈত্রের বানানো হিন্দি ছবি ‘দ্য বেস্ট সেলার’ (বাঁ দিকের ছবি) মুক্তি পেয়েছে গত সপ্তাহেই, কলকাতার কুখ্যাত যৌনপল্লি তার পটভূমি। আদতে দুটি মেয়ে, দুই বোনের গল্প। জীবনের ফেরে যৌনকর্মী হয়ে যাওয়া অনু, ছোট বোন আয়েশাকে পাঠিয়ে দেয় অন্য শহরে, যাতে তার জীবনটা সহজ, স্বাভাবিক হয়। শিক্ষিতা, আধুনিকা ছোটবোন বারো বছর পর ফিরে আসে কলকাতায়, দিদিকে অন্ধকার থেকে আলোয় ফেরাতে। কিন্তু চাইলেই তা হয় না, পথ রোধ করে দাঁড়ায় দেহব্যবসা-নারীপাচার-ড্রাগের কারবারে ভরা এই জগতের ঘোরপ্যাঁচ, ব্যক্তিগত নীতিবোধ, লোভ। রক্ত গড়ায়, সময়ও। আর দিদির অন্ধকার জীবন থেকে ছিটকে আসা আলোয় উজ্জ্বল ছোটবোনটি এক দিন লিখতে বসে নিজেদেরই

জীবনকাহিনি, এক অনুপম বেস্টসেলার। অন্য দিকে, কলকাতারই মেয়ে বর্ষালী চট্টোপাধ্যায়ের প্রথম কাহিনিচিত্র ‘জেনানা’ (মাঝের ছবি) মুক্তি পাচ্ছে এ সপ্তাহেই। লাল সিগনালে দাঁড়িয়ে থাকা গাড়ির চালক বা আরোহীদের কাছে ঘুরে ঘুরে টাকা চান এক দল মানুষ— লোকে বলে ‘হিজড়ে’, ‘ছক্কা’, ভাল বাংলায় ‘বৃহন্নলা’। এদের অনেকেই শারীরিক ভাবে সুস্থ সক্ষম পুরুষ, কারও ঘরে স্ত্রী-সন্তানও আছে, কিন্তু পেটের তাগিদে বা ভাগ্যের ফেরে এই বৃত্তি নিয়েছেন। পরিভাষায় এঁরাই ‘জেনানা’। বর্ষালীর ছবিতেও এক নারী চিত্রপরিচালকের সঙ্গে বন্ধুতা হয় ‘সোমু’-র, ট্র্যাফিক সিগনালে যে জেনানা ‘সুমনা’। ‘আমরা তো না চাইতেই প্রিভিলেজ্‌ড, কত ভাল ভাবে বাঁচি, আর ওদের দিক থেকে জীবনকে দেখার চেষ্টাই করি না’, বলছিলেন বর্ষালী। লাল আলোর পাড়ার নারীই হোক বা রেড সিগনালের পুরুষ, আসলে তো ‘মানুষ’। নারী দিবস উদ্‌যাপনের সপ্তাহে সেই মানুষ-জীবনকেই ছুঁয়ে দেখা।

স্মৃতিসুধায়

দেবব্রত বিশ্বাস তাঁর গান শুনে লিখেছিলেন, ‘আপনার গানের ভাব ও ভঙ্গী আমার হৃদয়কে তীব্র নাড়া দিয়েছে। মনে হচ্ছিল যেন আমিই গাইছি— আপনার গানে আমার নিজেকে খুঁজে পেলাম।’ ১৯৫১ সালে কুমারী সুমিত্রা দাশগুপ্ত নামে নজরুলগীতি রেকর্ডিংয়ের মধ্য দিয়ে শিল্পী হিসেবে আত্মপ্রকাশ। এ ছাড়া পল্লিগীতি, আধুনিকেরও রেকর্ড রয়েছে। যদিও অশীতিপর শিল্পী সুমিত্রা সেন মনে করেন, ‘এই গানগুলোর প্রতি জাস্টিস করতে পারিনি।’ পরে রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী হিসেবেই অধিক পরিচিতি। উত্তমকুমারের অনুরোধে ‘শুন বরনারী’ ছবিতে প্রথম প্লে-ব্যাক। কাজ করেছেন বহু বরেণ্য সঙ্গীত পরিচালকের সঙ্গে। দর্শনের অধ্যাপক অতুলচন্দ্র ও অমিয়া দাশগুপ্তর কন্যা সুমিত্রাদেবীর জন্ম ১৯৩৩ সালে। লেডি ব্রেবোর্ন কলেজে দর্শন নিয়ে পড়াশোনা।পঁচিশ বছর রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে রবীন্দ্রসঙ্গীতের অধ্যাপনা করেছেন। প্রকাশ পেল তাঁর সৃজনকথাস্মৃতিসুধায় (দে’জ, সম্পা: ঋতপ্রভ বন্দ্যোপাধ্যায়)। সঙ্গে দুর্লভ ছবি, গানপঞ্জিও।

সাধনা

কলকাতা যখন তাঁকে ঠিক মতো শুনল, তখন তিনি আশি ছুঁই-ছুই। তখনও কণ্ঠে অপার সুষমা। সিলেটি লোকগান, বিশেষ করে মেয়েদের গানের যে কত বড় আকর ছিলেন চন্দ্রাবতী রায় বর্মন, তা হয়তো জানাই যেত না আর এক বঙ্গতনয়ার অক্লান্ত সাধনা ছাড়া। তিনি মৌসুমী ভৌমিক, বাংলা গানের এক নিভৃত উজ্জ্বল স্বর। শব্দশিল্পী সুকান্ত মজুমদারকে সঙ্গী করে এক দশকেরও বেশি জড়ো করে চলেছেন এমন বহু গান, কথা, গায়ন। বিপুল ‘ফিল্ড রেকর্ডিং’ থেকে বাছাই করে দু’টি অ্যালবাম ইতিমধ্যে প্রকাশিত। প্রথমটি, চন্দ্রাবতী রায় বর্মন ও সুষমা দাশ (সঙ্গের ছবি)। অন্যটি সময়ের শব্দে শক্তি চট্টোপাধ্যায়, কবি অ্যালেন গিনসবার্গ থেকে শক্তি— কথায় শব্দে নিঃশব্দে ধরা একটা গোটা সময়। নিজস্ব ওয়েবসাইট thetravellingarchive.org মারফত জানান নিজেদের কাজের কথা। যেমন রবীন্দ্রনাথ বেঁচে থাকতেই শান্তিনিকেতনে ঘাঁটি গেড়ে লোকগান সংগ্রহের যে বিশাল কাজ করেন ওলন্দাজ গবেষক আর্নল্ড বাকে, তাই নিয়ে আজ থেকে বিশ্বভারতীর কলাভবনে নন্দন গ্যালারিতে শুরু হচ্ছে প্রদর্শনী। চলবে ১৫ মার্চ পর্যন্ত।

নারী ও সমাজ

দেশে নারী নির্যাতন ও শিশু সুরক্ষার জন্য আইন আছে, কিন্তু ঠিকঠাক প্রয়োগ নেই। সে কারণেই বেড়ে চলেছে নারী নির্যাতন, ধর্ষণ, পাচার এবং পারিবারিক যৌন নির্যাতনের মতো ঘটনা। এর থেকে বেরোনর পথ খোঁজায় বহু দিনই সক্রিয় চেতলার একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা (ইনস্টিটিউট অব সোস্যাল ওয়ার্ক)। নারীর সুরক্ষার জন্য আছে প্রশিক্ষণ, কারিগরি শিক্ষাকেন্দ্র এবং আইনি সহায়তা কেন্দ্র। ওরা ‘নারী ও সমাজ’ শিরোনামে নারী ও শিশু বিষয়ে প্রকাশিত খবরের প্রতিলিপি সংকলন তৈরি করেন নিয়মিত। নারীদের সংগ্রাম, নারী নির্যাতন/নারী অপরাধ ও আইন, শৈশবের বঞ্চনা ও সাফল্যের এই তথ্যায়ন নারী আন্দোলনে খুবই জরুরি উদ্যোগ, যা ছড়িয়ে দেওয়া হয় সংশ্লিষ্ট নানা সংগঠনে। অন্য দিকে নারী দিবস উপলক্ষে ৮ ফেব্রুয়ারি বাংলা আকাদেমিতে শৃণ্বন্তু সাংস্কৃতিক সংস্থার উদ্যোগে আয়োজিত হয়েছে দুই বাংলা মিলিয়ে অনুষ্ঠান। আলোচনায় খোন্দকার মাহমুদুল হাসান এবং হায়দার আলী চৌধুরী। প্রধান অতিথি কৃষ্ণা বসু। এ দিন ভারতীয় সংগ্রহশালায় সকাল ১১টা থেকে নানা হস্তশিল্প ও কুটিরশিল্পে যুক্ত মহিলারা নিজেদের কথা বলবেন, দেখাবেন কাজের নমুনা। বিকেল ৫-৩০ থেকে আলোচনা ‘প্লেজ ফর প্যারিটি’।

জাদুচর্চা

‘ছিল রুমাল হয়ে গেল বেড়াল’ যখন চোখের সামনে বাস্তবিক রূপ পায়, তখন দর্শকের বিস্ময়ের শেষ থাকে না। এই নিয়ে তৃতীয় বার রবীন্দ্রসদন চত্বরে (৯-১৩ মার্চ, ২টা-৯টা) ‘ফিমা ম্যাজিক ফেয়ার’, আয়োজনে ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান ম্যাজিক অ্যাসোসিয়েটস (ফিমা)। পাঁচ দিনের এই মেলায় ভারতের দশটি রাজ্যের পাঁচশোরও বেশি জাদুকর যোগ দেবেন। এ দিকে বাঙালির জাদুচর্চার পথিকৃৎ গণপতি চক্রবর্তীকে (১৮৫৮-১৯৩৯) গবেষকের নিষ্ঠায় জীবন্ত করে তুলেছেন সমীরকুমার ঘোষ, তাঁর জাদুসম্রাট গণপতি ও বাঙালির জাদুচর্চা (সপ্তর্ষি) বইয়ে। দুর্ভাগ্য, বরানগরে তাঁর বাড়ির আশপাশের মানুষজন গণপতির কথা জানেন না, কাশীনাথ দত্ত রোডে তাঁর দেবোত্তর সম্পত্তি বেদখল হয়ে গিয়েছে। কোথাও তাঁর কোনও স্মারক নেই। গণপতির জীবন সম্পর্কে যথাসম্ভব তথ্য উদ্ধারের সঙ্গে এই বইয়ে আছে বাঙালির জাদুচর্চার সংক্ষিপ্ত বৃত্তান্ত, বহু দুর্লভ ছবি। আছে অনেক বিতর্কিত প্রসঙ্গও, তবে সর্বত্রই সঙ্গে আছে তথ্যপ্রমাণ। নিঃসন্দেহে একটি জরুরি কাজ।

ঢাকা থেকে

ঢাকার পরই আমার প্রিয় শহর কলকাতা। সারা পৃথিবীতেই তো ঘুরেছি, কিন্তু এ শহরে এলে মনে হয় যেন নিজের দেশেই আছি।’ শহর হিসেবে কলকাতার উষ্ণতা, এখানকার মানুষের যে সহৃদয় আন্তরিকতা, তার কথাই মুগ্ধ হয়ে বলছিলেন জয়া আহসান। বাংলাদেশের এই অভিনেত্রীর প্রথম ছবি ‘ডুবসাঁতার’ (২০১০), যদিও তার আগেই অতিথিশিল্পী ‘ব্যাচেলার’-এ (২০০৪), পরিচালক মোস্তফা সারোয়ার ফারুকি-র প্রথম ছবিতে। সাধারণ দর্শক থেকে বিদগ্ধজন, সকলের মনেই ঠাঁই করে নিয়েছেন, দু’বার জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন বাংলাদেশে, ‘গেরিলা’ আর ‘চোরাবালি’তে অভিনয়ের জন্য। একের পর এক ছবিতে অভিনয় করে চলেছেন। বক্স-অফিসেও তুমুল সফল জয়া শুরু করেন মডেলিং দিয়ে, পরে টিভি’র নাটক ও সিরিয়াল-এ অভিনয়। ধ্রুপদী গান আর রবীন্দ্রসঙ্গীতেও তালিমপ্রাপ্ত তিনি। তাঁর অভিনয়ে মুগ্ধ এ-বঙ্গের পরিচালকেরাও, ইতিমধ্যেই অভিনয় করেছেন অরিন্দম শীলের ‘আবর্ত’, ইন্দ্রনীল রায়চৌধুরীর ‘একটি বাঙালি ভূতের গপ্পো’ ও সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ‘রাজকাহিনি’তে। নতুন ছবির কাজেই কলকাতায়, কথাও বলবেন ৮ মার্চ, নারীদিবস উপলক্ষে নন্দনে বিকেল সাড়ে ৪টেয়। বিষয়: ‘উইমেন ইন সিনেমা: ডাইভার্জড ডাইমেনশনস’। উদ্যোক্তা ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটিজ। সহবক্তাদের মধ্যে দুই ছবি-করিয়ে সোহিনী দাশগুপ্ত ও রেশমী মিত্র এবং সাংবাদিক প্রিয়াঙ্কা দাশগুপ্ত। সঞ্চালনায় চলচ্চিত্র-গবেষক ঋতা দত্ত। দেখানো হবে সোহিনীর ছবি ‘ছোটিমোটি বাতেঁ’।

বাইশ বছর

ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্রী, ভেবেছিলেন শিক্ষক হবেন। কিন্তু সেই সময় নান্দীকারের নাটক ‘গোত্রহীন’-এ যিনি হিরোইনের পার্ট করছিলেন তাঁর আকস্মিক অনুপস্থিতিতে রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত বলেন, ‘এই পার্টটা বড় পার্ট, দেখ তুই পারিস কি না।’ ‘সবাই এত ভালবাসা দিয়ে পার্টটা করিয়ে নিয়েছিল, কেমন জানি পেরে যাই পার্টটা...’, স্মৃতিচারণা অভিনেত্রী সোহিনী সেনগুপ্তর। বাইশ বছরে পা দিল তাঁর অভিনয় জীবন। এ বার তাঁরই নির্দেশনায় নান্দীকারের নতুন নাটক ‘আলিফা’। ১৪ মার্চ অ্যাকাডেমিতে, সন্ধে সাড়ে ৬টায়। নাটক: পইলে সেনগুপ্ত, রূপান্তর: রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত, স্বাতীলেখা সেনগুপ্তর সংগীত। অভিনয়ে সুমন্ত গঙ্গোপাধ্যায় ও সোহিনী (সঙ্গের ছবি এই নাটকের)। ইতিমধ্যে দিল্লির সংগীত নাটক অ্যাকাডেমিতে আমন্ত্রিত শো হয়ে গিয়েছে, জানালেন সোহিনী। নাটকটিতে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা ও রাজনৈতিক পরিকাঠামোর বিপন্নতার ছবি ধরা পড়েছে।

বোষ্টমী

সংস্কারের ভারে ন্যুব্জ মানবচেতনার বিপর়ীতে মুক্তিকামী নারীমনের উড়ান খুঁজতেই ‘বোষ্টমী’ মঞ্চস্থ করছেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। রবীন্দ্রনাথের ছোটগল্পটির নাট্যরূপ দেওয়ার অনুষঙ্গে নির্দেশক সৌমিত্রর মনে হয়েছে ‘এই গল্পে এক নারীর জীবনস্রোত প্রবাহিত হয়ে চলেছে অপরিণত বয়সে পুত্র হারানোর মর্মন্তুদ কাহিনির মধ্যে দিয়ে অপেক্ষাকৃত পরিণত বয়সের মানসিকতায় ভক্তি ও বিশ্বাস হারানোর করুণ উপাখ্যানের মধ্যে।’ তাঁর ভাবনার রূপায়ণে তাঁরই কন্যা পৌলমী (সঙ্গে দু’জনের ছবি, নাটকের একটি দৃশ্যে)। মুখোমুখি-র প্রযোজনায় অ্যাকাডেমি’তে ১৩ মার্চ সন্ধে ৭টায়।

হাজার কণ্ঠে

বসন্তে এ বার হাজার কণ্ঠে সম্মেলক রবীন্দ্রসঙ্গীত, তবে এ শহরে নয়, দিল্লিতে। আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘আর্ট অব লিভিং’-এর উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হতে চলেছে ‘ওয়ার্ল্ড কালচার ফেস্টিভ্যাল’। ময়ূরবিহারের কাছে এক ময়দানে, ৭ একর আয়তনের বিপুল মঞ্চে, ১১-১৩ মার্চ। ‘ওয়ান ওয়ার্ল্ড ওয়ান ফ্যামিলি’, এই ভাবনাকে কেন্দ্র করে বিশ্বব্যাপী এ-উৎসবে সমবেত হচ্ছেন বিভিন্ন দেশের শিল্পীরা, সাংস্কৃতিক আদানপ্রদানে ঋদ্ধ হয়ে উঠবে উৎসবটি। সেখানে হাজার কণ্ঠে রবীন্দ্রগান গাওয়ার আমন্ত্রণ পেয়েছে ‘সঙ্গীত ভারতী মুক্তধারা’, জানালেন কর্ণধার অরুন্ধতী দেব। তাঁর তত্ত্বাবধানে কলকাতা-সহ জেলায় জেলায় মহড়া চলছে শিল্পীদের (সঙ্গের ছবি)। পশ্চিমবঙ্গের প্রতিনিধিত্ব করছেন এই শিল্পীরা, রাজধানীতে উৎসবের শেষ দিনে তাঁরা গাইবেন সেই বসন্তের গান, মানবমিলন আর বিশ্বসমন্বয়ের উদ্ভাস যেখানে।

প্রয়াণ

১৯৬৩ সালে গ্রামোফোন কোম্পানির প্রচারপুস্তিকায় বেরিয়েছিল ‘গ্রেটেস্ট এক্সপোনেন্টস’দের তালিকা। সেখানে সুচিত্রা মিত্র, কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের পাশে ছিল মধ্য-তিরিশের আলপনা রায় মিত্রের ছবিও। বিয়ে হয়েছিল রবীন্দ্রকৃষ্ণ মিত্রের সঙ্গে— সংগীতপ্রাণ ছিলেন তিনিও। সুচিত্রা মিত্রের সঙ্গে অসংখ্য স্মরণীয় আসর তো ছিলই, আলপনা অনুষ্ঠানও করেছেন নিয়মিত। প্রথম রেকর্ড সন্তোষ সেনগুপ্তর অভিভাবকত্বে— ‘নিবিড় ঘন আঁধারে’, অন্য পিঠে ‘দু’জনে দেখা হল’। পাবনার মেয়েটি উজ্জ্বল হয়ে আছেন গীতিনাট্য ‘শ্যামা’, ‘চিত্রাঙ্গদা’ ও ‘তাসের দেশ’-এ। আলপনা সংগীতের শিক্ষিকা ছিলেন গোখেল ও কমলা গার্লস স্কুলে। ৮২ বছর বয়সে চলে গেলেন সম্প্রতি, সামান্য রোগভোগের পর।

কবি

নামানুষ, পাখিও না, শুধু এক বিষাদ বিজন/ বুকভর্তি পরবাস, তুই আর আমার এ মন।/ আমার কি ঘর নেই, আমাকে হবে না ফিরতে বাড়ি/ কে আমাকে নষ্ট করে দিস?— মনু বলেছেন, নারী।’ এমন কবিতা যাঁর কলমে, তিনি বেড়ে উঠেছিলেন উনিশ শতকীয় পরিবেশে— যেখানে চারদিকে ‘শুধু নিষেধের নিরেট সবুজ ভেলভেট’। তাঁর অন্তশ্চক্ষু দিয়ে বাইরের পৃথিবী ও মানুষকে, তাদের সুখ দুঃখ, ক্ষোভ, জেহাদকে অসীম মমত্বে দেখলেন, জানলেন। সেই অনুভূতির জগৎই আজীবন তাঁর কবিতায়। কবি গীতা চট্টোপাধ্যায় (জন্ম ১৬ অগস্ট ১৯৪১), কয়েক মাস পরেই পঁচাত্তর পূর্ণ হবে তাঁর। উল্লেখিত লাইনগুলি যে কবিতার সেটি তাঁর বঙ্কিমচন্দ্রের হাতে বঙ্গইতিহাস কাব্যগ্রন্থের, যা বাংলা কবিতায় একটি মাইল ফলক। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের স্নাতকোত্তর পাঠ অবধি কখনও দ্বিতীয় হননি, ভাগবত ও বাংলা সাহিত্য নিয়ে গবেষণার পর পিএইচ ডি। সারস্বত দীক্ষা তাঁর আচার্য জগদীশ ভট্টাচার্যের কাছে, তিনি বলেন ‘তুমি কবিতা লেখো না কেন? তোমার মধ্যে তো কবিতা রয়েছে দেখছি।’ তাঁর অন্যান্য কাব্যগ্রন্থ গৌরীচাঁপা নদী, চন্দরা; সপ্ত দিবানিশি কলকাতা; জলেহস্মিন্‌ সন্নিধিং কুরু। ১৯৬৫-২০১৫ পর্বের কাব্যগ্রন্থ এবং অগ্রন্থিত কবিতা নিয়ে আদম থেকে সদ্য প্রকাশ পেল তাঁর কবিতাসংগ্রহ। আরম্ভেই গীতা লিখেছেন ‘যা পেলে আর কিছুই পাবার নেই আমার কাছে তা কবিতা।’ আদম থেকেই প্রকাশ পেতে চলেছে তাঁর গদ্যসংগ্রহ-ও। তাঁকে এ বছরই জ্ঞাপন করা হবে ‘আদম সম্মাননা ২০১৫’।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE