Advertisement
০৭ মে ২০২৪
পুস্তক পরিচয় ২

‘লোকসংগীত আমাদের আটপৌরে মা’

বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস রচনায় একাধিক বিশিষ্ট জন ব্রতী হলেও উন্মেষ লগ্নে সাহিত্য-ঐতিহাসিক হিসেবে দীনেশচন্দ্র সেনের অবদানকে স্মৃতিধার্য করে রাখতেই যেন তাঁর সার্ধশতবর্ষে বেরল আচার্য দীনেশচন্দ্র সেন: সার্ধশতবর্ষের শ্রদ্ধাঞ্জলি (সম্পা: তপন বর। অক্ষর, ২৫০.০০)।

শেষ আপডেট: ২৪ ডিসেম্বর ২০১৬ ০০:০০
Share: Save:

বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস রচনায় একাধিক বিশিষ্ট জন ব্রতী হলেও উন্মেষ লগ্নে সাহিত্য-ঐতিহাসিক হিসেবে দীনেশচন্দ্র সেনের অবদানকে স্মৃতিধার্য করে রাখতেই যেন তাঁর সার্ধশতবর্ষে বেরল আচার্য দীনেশচন্দ্র সেন: সার্ধশতবর্ষের শ্রদ্ধাঞ্জলি (সম্পা: তপন বর। অক্ষর, ২৫০.০০)। তাঁর রচিত সাহিত্যের ইতিহাসের মৌলিকতা, অভিনবত্ব, এমনকী সীমাবদ্ধতাও সযত্নে আলোচিত হয়েছে এ-বইয়ের বিভিন্ন নিবন্ধে। বইটির শুরুতেই বরুণকুমার চক্রবর্তী-কৃত যে লেখাটি, তাতে সাহিত্যের ইতিহাস রচনার শর্তাবলির প্রেক্ষিতে দীনেশচন্দ্রের কাজের মূল্যায়ন। এ ছাড়াও ইতিহাসতত্ত্ব, ভাবাদর্শ, যুগ বিভাজন, সংস্কৃতি, লোকসাহিত্য, নারীশিক্ষা, বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি ইত্যাদি নানান আলোকে তাঁর যাবতীয় লেখালেখি নিয়ে আলোচনা বইটি জুড়ে। সঙ্গে তাঁর রচনাপঞ্জিও। হাওড়ার রামসদয় কলেজ ও আন্তর্জাতিক বঙ্গবিদ্যা পরিষদ-এর যৌথ উদ্যোগে একটি জাতীয় স্তরের আলোচনাচক্রে ‘ড. দীনেশচন্দ্র সেনের অবদান নিয়ে মনোজ্ঞ আলোচনা হয়। এই গ্রন্থ তারই ফলশ্রুতি।’ জানিয়েছেন সম্পাদক।

এদেশে তালাক প্রথা যেমন আদালত অবধি এগিয়েছে, তেমনই ইউরোপ-আমেরিকায় হিজাব বিতর্ক। এ রকমই বিভিন্ন প্রেক্ষিতে মুসলিম নারীর অবস্থান নিয়ে আলোচনা জাহিরুল হাসানের কলমে: মুসলিম নারী/ রোকেয়া এবং তাঁর আগে ও পরে (পূর্বা, ২৫০.০০)। ‘বাংলার মুসলমান সমাজে প্রথম আলোকপ্রাপ্ত তথা আলোকদাতা নারী হিসেবে আমরা রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনকেই বুঝি।... আদি বিশ শতকে অনগ্রসর মুসলমান সমাজে স্ত্রীশিক্ষা বিস্তারের জন্য নানা বাধা-বিপত্তি সয়ে এক অসম্ভব জেদে পথপ্রদর্শকের মতো যে মহান কাজ করেছিলেন তিনি একহাতে কলম ধরে এবং অন্যহাতে ধৈর্যশীল সাংগঠনিক দক্ষতায় বিদ্যালয় স্থাপন ও পরিচালনা করে, তাঁর সেই বিরাট অবদান ভোলার নয়।... সেই বৃহৎ আখ্যানকে পাশে রেখে আমরা একটু অন্যভাবে পর্যবেক্ষণ করতে চেয়েছি গত দুই শতাব্দীর বাংলার মুসলমান সমাজকে... নারী সম্পর্কে ইসলামের বিধান এবং বিশ্বের অন্যান্য দেশে মুসলিম নারীর অবস্থান।’ প্রাক্‌কথনেই প্রাঞ্জল ভাবে বুঝিয়ে দিয়েছেন লেখক তাঁর এ-গ্রন্থ রচনার অভিপ্রায়। তথ্যে, পরিসংখ্যানে, তাত্ত্বিক সূত্রের আরোপে নিজের অভিপ্রায়কে প্রামাণিক করে তুলতে চেয়েছেন তিনি।

বেগম রোকেয়ার মতোই স্বর্ণকুমারী দেবী, অনুরূপা দেবী, নিরুপমা দেবী, শান্তা দেবী, সীতা দেবী, গিরিবালা দেবী, শৈলবালা ঘোষজায়া, জ্যোতির্ময়ী দেবী, প্রভাবতী দেবী সরস্বতী প্রমুখ কথাসাহিত্যিক যা রচনা করেছেন ১৯১৪ থেকে ১৯৩৯ পর্বে, তাঁদের সৃষ্টির সঙ্গে আশালতা সিংহের সাহিত্যের তুলনামূলক আলোচনা কাননবিহারী ঘোষের দুই বিশ্বযুদ্ধ মধ্যকালীন মহিলা রচিত বাংলা কথাসাহিত্য: আশালতা সিংহ-এ (অক্ষর, ১৮০.০০)। ‘সেকালের সংসার তথা শ্বশুরালয় গারদে আবদ্ধা পর্দানশীনা জমিদার বাড়ির গৃহবধূ আশালতা সিংহের’ রচনা প্রসঙ্গে লেখক জানিয়েছেন ‘বহুলাংশে নারীবাদী, মডার্ন এবং মেয়েদের পক্ষে ঐ রকম বৈশ্লেষণী দৃষ্টি সত্যই নূতন। কারণ তাঁর মানসিক ভিত্তিভূমি রচিত হয়েছিল— পাশ্চাত্য সাহিত্য পাঠ করে।’ আশালতার জন্মশতবর্ষ পেরিয়ে গেলেও এ-বই তাঁকে ও নারীর কলমের শক্তিকে ফিরে দেখতে সাহায্য করবে বাঙালিকে।

অমৃতলোক সাহিত্যপত্রের তুখোড় ও আপসহীন সম্পাদক সমীরণ মজুমদারের অকালপ্রয়াণ সম্পর্কে তপোধীর ভট্টাচার্য লিখেছেন ‘কোনো কোনো মৃত্যু এমন যে মৃত্যু শব্দটাই বড়ো বেমানান।’ পূর্ব-তে (সম্পা: রণজিৎ অধিকারী। ১৫০.০০) সমীরণকে নিয়ে স্মরণের পাশাপাশি শুভেন্দু মাইতিকে নিয়ে ক্রোড়পত্র। তাঁকে নিয়ে বিশিষ্ট জনের রচনাদির পাশাপাশি তাঁর কবিতা-গান-নাটক, আত্মকথা ও সাক্ষাৎকার— সেখানে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য: ‘লোকসংগীত আমাদের আটপৌরে মা’। সঙ্গে তাঁকে নিয়েও কথোপকথন আর তাঁর জীবনপঞ্জি।

‘তাঁর একটা এমন কবিতাও আছে— একজন, একঝুড়ি ঢ্যাঁড়শ নিয়ে বাজারে এসেছে। মাথা থেকে ঝুড়িটা নামাচ্ছে। ঝুড়িতে তার মাথার জল, বৃষ্টির জল। ঝুড়িতে ঢ্যাঁড়শগুলো ভিজে আছে বৃষ্টিতে। তার উপর সেই সবজি বিক্রেতার মাথার জল পড়ছে। এমন বর্ণনাও তাঁর কবিতার মধ্যে পাওয়া যায়। ফলে, তিনি সত্যিই, সর্ব অর্থে অত্যন্ত নিরাভরণ, এবং সহজ পথের কবি। তিনি বাংলা কবিতার চিরউজ্জ্বল এক অভিযাত্রী।’ জয় গোস্বামী লিখেছেন নির্মল হালদার প্রসঙ্গে। কবি নির্মল হালদারকে নিয়ে একটি বিশেষ সংকলন তবু কিছু মায়া রহিয়া গেল-তে (সম্পা: পৃথ্বী বসু রূপময় ভট্টাচার্য। দশমিক, ১৫০.০০) জয় ছাড়াও লিখেছেন একরাম আলি দুর্গা দত্ত সুতপা সেনগুপ্ত গৌতম মণ্ডল শ্যামলকান্তি দাশ প্রমুখ। বিভিন্ন কবি ও বিশিষ্ট জনের সঙ্গে নির্মলের বেশ কিছু চিঠিপত্রের বিনিময় তাঁর কবিমনটিকে চিনিয়ে দেয়। আর আছে তাঁর সাক্ষাৎকার।

গল্পসরণি-র (সম্পা: অমর দে। ৩০০.০০) প্রফুল্ল রায় বিশেষ সংখ্যা-য় বড় আকর্ষণ তাঁকে নিয়ে প্রকাশকদের রচনা। সবিতেন্দ্রনাথ রায় লিখেছেন ‘আমরা প্রফুল্ল রায়ের ‘পূর্বপার্বতী’ উপন্যাসেই প্রথম নাগাল্যান্ডের বিস্তৃত বর্ণনা পেলাম। ওই উপন্যাসে প্রফুল্ল রায় নাগা-সমাজকে আমাদের চোখের সামনে এনে দিলেন।’ এ ছাড়াও লিখেছেন সুধাংশুশেখর দে ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায় প্রবীরকুমার মজুমদার বামাচরণ মুখোপাধ্যায়ের মতো প্রকাশক। তাঁকে নিয়ে ‘চর্চা’-য় প্রচুর রচনা বিবিধ জনের। লিখেছেন বিশিষ্ট সাহিত্যিকেরাও ‘ঘনিষ্ঠ দৃষ্টিতে’। আছে তাঁর সাক্ষাৎকার এবং নিজের কথা-ও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE