Advertisement
১১ মে ২০২৪

গরুর রচনা

গ রু খুবই উপকারী প্রাণী। চারটি পা ও একটি লেজ থাকলেও গরু পশু নয়, সম্মাননীয় ব্যক্তি। এ জন্য অনেকে আবার গরুকে ‘মাতা’ বলে ডাকে। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও লিখেছেন, ‘মা-গো আমায় ছুটি দিতে বল।’ কিন্তু গুরুদেব বললেও কথাটা সম্পূর্ণ ঠিক নয়, গরু আসলে মায়ের চেয়েও বড়। গরুর গোবর হয়, মায়ের হয় না। মায়ের দুধে ছানা হয় না, গরুর দুধে হয়।

সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০১৫ ০০:০৩
Share: Save:

গ রু খুবই উপকারী প্রাণী। চারটি পা ও একটি লেজ থাকলেও গরু পশু নয়, সম্মাননীয় ব্যক্তি। এ জন্য অনেকে আবার গরুকে ‘মাতা’ বলে ডাকে। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও লিখেছেন, ‘মা-গো আমায় ছুটি দিতে বল।’ কিন্তু গুরুদেব বললেও কথাটা সম্পূর্ণ ঠিক নয়, গরু আসলে মায়ের চেয়েও বড়। গরুর গোবর হয়, মায়ের হয় না। মায়ের দুধে ছানা হয় না, গরুর দুধে হয়। মায়ের হাগু কোনও কাজে লাগে না, কিন্তু গোবর খুব উপকারী খাবার। প্রায়শ্চিত্তের সময় কাঁচা খেলে শরীরের উপকার হয়। রান্নার সময় ঘুঁটে বানিয়ে এবং চাষবাসে সার হিসেবে দিয়ে খাদ্যসমস্যার সমাধান হয়। মাটিতে গোবর দিলে তা থেকে ধান আমড়া রজনীগন্ধা ইত্যাদি নানা ফল ও ফুল ফলে। এই কারণে ফলের রাজার অন্য নাম ম্যাং-গো এবং ফুলের রানিকে গো-লাপ বলে।
গরু গোবর ছড়িয়ে এবং শিং দিয়ে গুঁতিয়ে পৃথিবীকে ফুলে ফলে ভর্তি করে রাখে। এখান থেকেই সংস্কৃতে ‘জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গো-রিয়সী’ কথাটি এসেছে। এর অর্থ হল, জননীরা জন্মভূমিতে থাকে, আর গরুরা স্বর্গে দাপাদাপি করে। এই জন্য ভগবানের অন্য নাম গো-বিন্দ। এ নিয়ে বাংলায় হাজার হাজার গান-কবিতা লেখা হয়েছে। তাদের একটির নাম গীত-গো-বিন্দ। গরুর স্ত্রীলিঙ্গ ‘গাই’। একটি বিখ্যাত বাংলা ভক্তিগীতির প্রথম লাইন ‘আমি বাংলায় গান গাই।’
পুজোকে ভক্তিমার-গো বলে, তাই গরুকে আমরা বিশেষ সম্মান দিই। ভাল লোকেদের আমরা বং-গো-ভূষণ বলে থাকি। ফর্সা মেয়েদের গো-রি বলা হয়, তাদের ভাল ভাল পাত্রের সঙ্গে বিয়ে হয়। পছন্দের জিনিস হারানোকে ‘গরু হারানো’ এবং প্রাণপণ খোঁজাকে ‘গরু খোঁজা’ বলা হয়।
আমাদের জন্মভূমিকে প্রায়ই কেটেকুটে পিস পিস করা হয়, একে দেশভাগ বলে। পাহাড়-জঙ্গল নরখাদকে ভর্তি, তারা মানুষ পেলেই কেটে খায়। জিম করবেট এই নিয়ে তাঁর বিখ্যাত গা-ছমছমে বই ‘ম্যানইটার্স অব কুমায়ুন’ লিখেছেন। নিজের মাতাকেও অনেকেই আহার করে, জাপানি ভাষায় এদের ‘মাতাহারি’ বলা হয়। কিন্তু মা এবং জন্মভূমির চেয়েও বড় বলে, উত্তর প্রদেশ ও মহারাষ্ট্র সহ পৃথিবীর কোথাও কোথাও গরুকে হত্যা করা এবং খাওয়া হয় না। এই ধরনের ভয়ানক খারাপ কাজকে গো-খুরি বলা হয়। আইন এই বাজে লোকেদের কঠোর শাস্তি দেয়।

আগে এদেরকে পাহাড়ে জঙ্গলে নির্বাসন দেওয়া হত, যে জন্য সুদূর উত্তরবঙ্গের এক গভীর জঙ্গলের নাম হল ‘গরুমারা’। এখন অবশ্য শাস্তির নতুন পদ্ধতি বেরিয়েছে, ধরা পড়লেই বেধড়ক পিটিয়ে একেবারে মেরে ফেলা হয়, কারণ গরুর চেয়ে মানুষের দাম অনেক কম।

এই জন্য সব মানুষই গরু হতে চেষ্টা করে। কেউ এঁড়ে হয়, আর কেউ বকনা। কেউ বলদ হয়, কেউ ষাঁড়। কবি বলেছেন, ‘সবার উপর মানুষ সত্য, তাহার উপরে গাই।’ এ কারণে ভূ-ভারতকে অং-গো, বং-গো, কলিং-গো, আর পৃথিবীভর্তি ভালমানুষকে গো-বেচারা বলা হয়।

bsaikat@gmail.com

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE