Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
ছোটগল্প

পরিষেবা সীমার বাইরে

মিলনবাবুর মেয়ে সুজাতার গলা। দু’টো সেরিব্রাল সামলে কোনও রকমে নিজেকে টিকিয়ে রেখেছেন। বছর খানেক আগেও বোয়াল মাছের ঝোল তেল-মশলা দিয়ে রান্না করে মিলনবাবুকে খাইয়েছেন।

ছবি: প্রত্যয়ভাস্বর জানা

ছবি: প্রত্যয়ভাস্বর জানা

শঙ্খদীপ ভট্টাচার্য
শেষ আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০১৭ ০৮:১০
Share: Save:

মিলনবাবুর একটা বিছানা আছে। বিছানার লাগোয়া একটা জানলা। জানলার ঠিক বাইরেই পাঁচিল ঘেঁষা পুকুরটায় কচুরিপানা জোট বেঁধেছে মনের সুখে। পুকুরের ও পারে বিস্তৃত মাঠ। সেখানে একটা মাটির ঘরকে ঘিরে কিছু নারকেল গাছ বেড়ে উঠেছে। সেই ঘরে কে থাকে, তার বাজারে কত টাকার ধার, মিলনবাবু এ সব কিছুই জানেন না। এই কচুরিপানা, মাটির ঘর, গাছগুলোকে ছাড়িয়ে আরও অনেক দূরে, যেখানে আর কিছুই চোখে পড়ে না, মিলনবাবুর চোখ এখন ঠিক সে দিকেই। বাগানে রক্তকরবী গাছে কয়েকটা ছাতারে গায়ের জল ঝাড়ছে। মিলনবাবু প্রায়ই ওদের দেখেন। তবে আজ দেখছেন না। কাছের জিনিসগুলিকে ছাড়িয়ে হয়তো অনেক দূরের কিছু দেখতে চাইছেন।

‘‘এখন স্নান করবে, না মা’কে করিয়ে দেব?’’

মিলনবাবুর মেয়ে সুজাতার গলা। দু’টো সেরিব্রাল সামলে কোনও রকমে নিজেকে টিকিয়ে রেখেছেন। বছর খানেক আগেও বোয়াল মাছের ঝোল তেল-মশলা দিয়ে রান্না করে মিলনবাবুকে খাইয়েছেন। এখন তিনি একেবারেই স্থবির। মাঝে মাঝে তো মিলনবাবুকেই চিনতে পারেন না। চুল পর্যন্ত আঁচড়ে দিতে হয়। ওপরতলায় সুজাতার গোছানো নিরিবিলি সংসার। তা সামলে প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে সিঁড়ি ভেঙে বাবা-মায়ের কাছে আসতে হয় ।

সুজাতার প্রশ্নে মিলনবাবু হাতের ইশারায় উত্তর দিলেন। তিনি স্নান করতে চান না। চার দেওয়ালের মধ্যে অনেক দিনের নানা ওঠাপড়ায় গড়ে ওঠা এ সব টুকটাক ইশারা কে না বোঝে! সুজাতা মা’কে গিয়ে বলল, ‘‘ওঠো।’’ তার পর আবার ইশারা। মিলনবাবুর স্ত্রী বুঝে নিলেন।

ল্যান্ডলাইনে ফোন বেজে উঠল। মিলনবাবু জানলার থেকে মুখ ঘোরালেন। মেয়েকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘‘কার ফোন? কুট্টুসের ফোন?’’ চোখে আশার আলো।

‘‘না। তোমার এ বছরের মেডিকেলের প্রিমিয়ামটা এখনও জমা পড়েনি?’’

‘‘না, কেন?’’

‘‘ওটা জমা দেওয়ার শেষ দিন এই সপ্তাহে। খেয়াল রেখ।’’

মিলনবাবুর হার্ট দুর্বল। যখন-তখন অবস্থা। পেসমেকার বসবে কি বসবে না এই নিয়ে তুমুল ঝুটঝামেলা এখন দত্তবাড়ির ইতিহাস। লাস্ট ডেট শব্দ দু’টো শুনে মিলনবাবু ঢোক গিললেন। হার্টটা বুঝি আর একটু দুর্বল হয়ে পড়ল। আবার জানলার দিকে মুখ ঘোরালেন।

মিলনবাবু রোগা মানুষ। লম্বা সাদা দাড়ি। বয়স আশি পেরিয়ে আরও চার। হাতের মুঠোয় মোবাইলটা শক্ত করে ধরা। ক’দিন হল কিছুতেই ওটা হাতছাড়া করছেন না। একটা নম্বর সযত্নে সংরক্ষিত। কুট্টুস। না চাইতেই কত ফোন আসে। ক্রেডিট কার্ড। পার্সোনাল লোন। আর আসে অজস্র বাণিজ্যিক সংস্থার মেসেজ। সবাই পরিষেবা দিতে চায়। মিলনবাবু ও সব বোঝেন না। বুঝতেও চান না। কুট্টুসের ফোন আসার কথা। সকাল থেকে অপেক্ষা করছেন। এক বার ফোনটা ধরতে না পারলে আবার ক’দিনের জন্য অপেক্ষা কে জানে! এই কচুরিপানা, মাটির ঘর আর ওই গাছগুলিকে ছাড়িয়ে আরও অনেক দূরে, যেখানে আর কিছুই চোখে পড়ে না, তারও ও পারে কলকাতা শহর। ওখানেই কুট্টুস থাকে।

কুট্টুস বলত, ডিমপট্টা খাব। মামার বাড়িতে এক বার এলে আর ফিরতে চাইত না। টানাটানি সত্ত্বেও মিলনবাবু কত খেলনাই না কিনে দিয়েছেন মাসের শেষে! স্ত্রীর হুঁশিয়ার বার্তায় কান দেননি। একমাত্র ভাগ্নে। বোনকে বলতেন, ওকে এখানে রেখে যা। ব্যাটাকে মানুষ করি। গাধা হয়ে পিঠে চড়াব। গঙ্গা গঙ্গা বলে স্নান করব তার পর মামা-ভাগ্নে নাকে তেল দিয়ে ঘুমাব। সেই ছোট্ট কুট্টুস এখন কত্ত বড় কোম্পানির কত্ত বড় ম্যানেজার।

মোবাইলটা বেজে উঠল। কুট্টুসের ফোন। মিলনবাবু ফোন কানে চেপে ধরলেন। না চেপে ধরলে শুনতে পান না। কানটাও যে বুড়িয়েছে। আজ কথাগুলো শোনা ভীষণ জরুরি।

‘‘কুট্টুস...’’

‘‘হ্যাঁ মামা। শরীর ভাল? মামি কেমন আছে?’’

‘‘মামি ভাল নেই। তোর ফোনের জন্যই তো... তোর মনে আছে...’’

‘‘হ্যাঁ। প্রিমিয়ামটা তো?’’

‘‘ওটা এই মাসে না দিলে এবার আমাদের বিনা চিকিৎসায় মরতে হবে। তোর দিদির কাছে টাকা চাইতে পারব না। তুই তো জানিস।’’

‘‘শোনো না, মানে এ মাসে আমার একটু ...’’

‘‘ওর নিজের সংসার আছে। জামাইও একগাদা ধার করে বসে আছে। ও আমাদের জন্য এমনি অনেক খরচা...’’

‘‘উফফ। আমার কথাটা শোনো। শুনতে পাচ্ছ? বলছি এ মাসে একটু সমস্যা আছে...’’

‘‘হ্যাঁ, কী?’’

‘‘বলছি... একটু সমস্যা চলছে।’’

‘‘পাঠাতে পারবি না? কী বললি? পারবি না বাবা?’’

কুট্টুস ফোনের ও পারে একদম চুপ। কী অস্বস্তিকর এই নিস্তব্ধতা! মিলনবাবু ভাঙার সাহস পেলেন না।

‘‘আমি তোমাকে বিকেলে ফোন করে জানাচ্ছি। বুঝলে?’’

‘‘তোরা ভাল আছিস তো?’’

‘‘মামা, অফিসে একটা মিটিং আছে। পরে ফোন করছি। বিকেলের দিকে। ঠিক আছে?’’

‘‘অ্যাঁ, কী? শুনতে পেলাম না। হ্যালো, হ্যালো?’’

কোনও সাড়া নেই। লাইন কেটে গিয়েছে। মিলনবাবু সেটা না বুঝেই ‘হ্যালো হ্যালো’ করলেন বেশ কয়েক বার। কুট্টুসের শেষ কথায় ওর গলার ঝাঁঝে চাপা বিরক্তি ধরা পড়েছে।

সুজাতা মায়ের চুল মোছাতে মোছাতে বলল, ‘‘লাইনটা কেটে গিয়েছে মনে হয়। ছেড়ে দাও।’’

কুট্টুস প্রতি মাসে দু’হাজার টাকা পাঠায় মামাকে। মিলনবাবু এ কথা সুজাতাকে বলেননি। কুট্টুস নিজের মা’কেও এ কথা বলতে পারেনি ইচ্ছে থাকলেও। মামাকে কথা দিয়েছে কাউকে সে জানাবে না। গত দু’মাস কুট্টুস টাকা পাঠাতে পারেনি। এই দুশ্চিন্তা মেয়ের কাছে লুকিয়ে রাখার যথাসাধ্য চেষ্টা চালাচ্ছেন মিলনবাবু। সুজাতা বাবার পাসবই আপডেট করাতে গিয়ে মাস দুয়েক আগেই ব্যাপারটা জানতে পেরেছে। সুজাতার স্বামীও ব্যাপারটা আঁচ করেছে কিন্তু সুজাতাকে সে নিয়ে কোনও কথা বলেনি। পাছে সুজাতার আত্মসম্মানে লাগে। সবাই সব কিছু জানে। সবাই সব কিছু বোঝে।

মিলনবাবু মোবাইলের দিকে তাকিয়ে ছিলেন। মোবাইলটা কুট্টুসেরই দেওয়া। এই বিছানা থেকে নেমে ল্যান্ডলাইন অবধি পৌঁছে ক্ষতিগ্রস্ত হাঁটুর ওপর জোর দিয়ে দাঁড়িয়ে কথা বলার যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্যই এই উপহার। সে প্রায় বছর পাঁচেক আগে। তখন কুট্টুস প্রায়ই আসত। মামি যত্ন
করে খাওয়াতেন। মিলনবাবু ভাগ্নের সঙ্গে মামিমার মিঠে রসায়ন রসিয়ে রসিয়ে দেখতেন।

এমনই এক দিন হঠাৎ এই মোবাইল। মামা আরও বেশি করে আপন করে নিয়েছিলেন ভাগ্নেকে। বুঝেছিলেন ভাগ্নের এই ভালবাসা তার ভালবাসার মতোই নিঃশর্ত, চিরস্থায়ী। আবেগে পড়ে অ্যাদ্দিনের জমে-থাকা কষ্টের কথা অকাতরে স্বীকার করেছিলেন ভাগ্নের কাছে। দু’হাজার টাকা চেয়েছিলেন। কুট্টুস আপত্তি করেনি। রসিকতা করে বলেছিল, ‘‘যদ্দিন কুট্টুস বেঁচে থাকবে মামা, তোমার এই মোবাইলের দিব্যি, পরিষেবার কোনও ত্রুটি হবে না।’’ যুবক মনের রসিকতায় ভরসা পেয়ে মিলনবাবু হেসেছিলেন মাত্র।

সুজাতা বলল, ‘‘আপ্পা তুমি স্নান করে নাও। আমি খাবার দিয়ে যাচ্ছি। আর ফোনটা ও ভাবে জড়িয়ে ধরে বসে থাকার কিছু হয়নি। কুট্টুস ফোন করেছিল?’’

‘‘হ্যাঁ।’’

‘‘কী বলছে? সব ঠিক আছে তো?’’

‘‘হ্যাঁ, ওই ওর একটু অফিসের সমস্যা চলছে। তাই এখন মনে হয় আসতে পারবে না।’’

সুজাতা কথা বাড়াতে চাইল না। প্রিমিয়ামের টাকাটা কী ভাবে জোগাড় করবে সেটা ভাবতে ভাবতেই রান্নাঘরের দিকে এগোল।

কুট্টুস এখন আক্ষরিক অর্থে ধরাছোঁয়ার বাইরে। গত দু’মাস ধরেই কুট্টুস বলতে পারছে না ওর টাকা পাঠানোর অসুবিধার কথা। মিলনবাবু তো ওর বাবা নন। ভাগ্নের কাছে মাসোহারা দাবিটা একটু বাড়াবাড়ি তো বটেই। কুট্টুস নিশ্চয়ই তখন ঝোঁকের বশে ‘হ্যাঁ’ বলেছিল। এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে। মামার রাশি রাশি খেলনা কিনে দেওয়ার মতো এটা অত সহজ ব্যাপার নয়। মামার বাড়ির আবদার কুট্টুসকে সত্যিই সংকটে ফেলেছে। কুট্টুস গত কয়েক মাস ধরেই ওর অসুবিধার আভাস দিচ্ছে। সময়মত ফোন করছে না। করলেও কম কথা বলে, টাকার প্রসঙ্গ উঠলে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। ছোটখাটো ফাঁকফোকর থেকে বেরিয়ে এসেছে ক্রমশ বাড়তে থাকা ওর সাংসারিক খরচার কথা। মিলনবাবু সবই বোঝেন। এক বার বলে দিতেই পারেন, ‘‘তোকে আর টাকা পাঠাতে হবে না।’’ কিন্তু কী করে বলবেন! নিজের চিকিৎসা বাদ দিলেও, স্ত্রী যে বিনা চিকিৎসায় মারা পড়বে। সহজ সমাধান থাকতে কী ভাবে সেখান থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবেন। কুট্টুস তো নিজের ভাগ্নে। ও কি এটুকু করতে পারে না মামার জন্য? ও যা মাইনে পায় তার থেকে দু’হাজার টাকা পাঠানো কোনও সমস্যা হওয়ার কথাই নয়। আর তিনিই বা বেঁচে থাকার জন্য এত উদগ্রীব হচ্ছেন কেন!

স্ত্রীকে দেখলেন। পাশের ঘরের বিছানায় ভেজা চুলে শুয়ে ড্যাবড্যাব করে এ দিকেই তাকিয়ে আছে বুড়িটা। কপালে বড় লাল টিপ আর গাঢ় সিঁদুর এখান থেকেই চোখে পড়ে। ভবিষ্যতের কথা ভেবে হঠাৎ শিউরে উঠলেন মিলনবাবু। কুট্টুস ফোন করে আজ না হোক কাল ওর অসুবিধার কথা খোলাখুলি বলবেই। কী তীব্র যন্ত্রণার হবে সেই মুহূর্ত!

কচুরিপানা, মাটির ঘর আর ওই গাছগুলিকে ছাড়িয়ে আরও অনেক দূরে, যেখানে আর কিছুই চোখে পড়ে না, অগত্যা সে দিকেই আবার চোখ ফেরালেন মিলনবাবু।

কুট্টুস লাঞ্চ করতে করতে মামার কথাই ভাবছিল। এখন আর ওখানে যেতে ইচ্ছে করে না ওর। কেমন একটা হসপিটাল হসপিটাল পরিবেশ। সারা ঘরে শুধু ওষুধের গন্ধ, অসুস্থ মামিমার কেমন একটা গা-ছমছমে চাহনি, মামার হতাশা-মার্কা কথাবার্তা। আর পোষাচ্ছে না এ সব। গেলেই কেমন দম বন্ধ হয়ে আসে। নেহাত মা’র চাকরিটা মামার জোরে হয়েছিল, তাই। মামা তখন ইউনিয়ন লিডার। দারুণ দাপট। কারখানার ম্যানেজাররাও নাকি মামাকে যমের মতো ভয় পেত। সে যুগ কি আর আছে! মামা, কাকা, জ্যাঠা সবার কথা ভাবলে তো নিজের সংসারটা বানের জলে ভাসবে। কত দিন ধরে মামাকে ও কথার ফাঁকে বুঝিয়ে দিতে চেয়েছে, এই দায়িত্ব থেকে ও সিধে কথায় মুক্তি চায়। কিন্তু যতই বোঝাও, মামা কিছুতেই বুঝতে চায় না। আর সব কথা বোঝানো সম্ভবও নয়। এ তো মহা ঝামেলা! তবে আর ভণিতা নয়। মামার চোখে ভিলেন হতে ও প্রস্তুত। এ বার ও সোজাসুজি বলেই দেবে। মোবাইলটা বার করে কুট্টুস। এই গড়ে-ওঠা আচমকা রাগটাকে কাজে লাগাতেই হবে। না হলে আর কোনও দিন বলা হয়ে উঠবে না। গরম লোহা ঠান্ডা হওয়ার আগেই চটপট নম্বর ডায়াল করে কুট্টুস।

‘অনুগ্রহ করে আবার পরে ডায়াল করুন। মোবাইলটি এখন পরিষেবা সীমার বাইরে আছে।’ কুট্টুস আবার ডায়াল করে। সেই একই কথা। পরিষেবা সীমার বাইরে। ডায়াল করতেই থাকে ও। কুট্টুস তো জানেই না, একটু আগেই মিলনবাবু ওর দেওয়া মোবাইলটা সামনের পুকুরে ছুড়ে ফেলেছেন।

‘রবিবাসরীয়’ বিভাগে ছোটগল্প পাঠান, অনধিক ১৫০০ শব্দে।
ইমেল: rabibasariya@abp.in সাবজেক্ট: rabibasariya galpa

ডাকে পাঠানোর ঠিকানা:

‘রবিবাসরীয় গল্প’,

আনন্দবাজার পত্রিকা,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,

কলকাতা ৭০০০০১

যে কোনও একটি মাধ্যমে গল্প পাঠান। একই গল্প ডাকে ও ইমেলে পাঠাবেন না। পাণ্ডুলিপিতে ফোন নম্বর বা ইমেল আইডি জানাবেন। ইউনিকোড ব্যবহার করা বাঞ্ছনীয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Short Story
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE