রাস্তার দু’ধারে বাজি ফাটানোর জন্য তৈরি হয়েছে ‘বোমের গাছ’। ইনসেটে, শুভজিৎ পুরকাইত। নিজস্ব চিত্র
লোহার নলে শব্দবাজি নিয়ে মাথায় রেখে ফাটানোর সময়ে দুর্ঘটনায় মৃত্যু হল এক যুবকের। শনিবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে ডায়মন্ড হারবারের রামনগরের মাথুর গ্রামে। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতের নাম শুভজিৎ পুরকাইত (২২)।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রাতে গ্রামে রক্ষাকালী পুজো ছিল। প্রতিমা আনার সময়ে শোভাযাত্রায় ভারী লোহার পাইপের মধ্যে শব্দবাজি নিয়ে মাথায় রেখে ফাটানোর চেষ্টা করেন ওই যুবক। শব্দবাজির বিস্ফোরণে বুকে ও মাথায় আঘাত লাগে। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বহু বছর ধরে গ্রামে রক্ষাকালী পুজোর আয়োজন হয়। পুজো উপলক্ষে দেদার শব্দবাজি ও আতসবাজি পোড়ানো হয়। আশেপাশের ঝাউদাড়ি, গোবিন্দপুর, কুশবেড়িয়া, রেখা, মানকণ্ড, মুকুন্দপুর-সহ বহু গ্রামের মানুষ ভিড় করেন। রীতি অনুযায়ী, প্রতিমা তৈরি হয় মাথুর পূর্বপাড়ায় একটি দালানে। পুজোর দিন ওই দালান থেকে বাদ্যযন্ত্র সহকারে শোভাযাত্রা করে প্রতিমা নিয়ে যাওয়া হয় পশ্চিমপাড়ায় কৃষ্ণকালী মন্দিরে। প্রতিমা মন্দিরে নিয়ে যাওয়ার পথে শোভাযাত্রায় দেদার শব্দবাজি ফাটানো হয়। পোড়ানো হয় আতসবাজি। প্রতিমা মন্দিরে পৌঁছনোর পরেও সারারাত ধরে বাজি ফাটে। এমনকী, কৃত্রিম গাছ তৈরি করে সেই গাছে বাজি বেঁধেও ফাটানো হয়।
শনিবার রাতে ১০টা নাগাদ প্রতিমা শোভাযাত্রা করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল মন্দিরের দিকে। ওই শোভাযাত্রার দলে ছিলেন শুভজিৎ। গ্রামের মানুষ জানান, লোহার নল মাথায় নিয়ে বাকি ফাটানোর চেষ্টা করেন তিনি। তখনই ঘটে বিপত্তি।
এলাকার লোকজন জানান, শুভজিতের বাবা নেই। মা ও বোনের সঙ্গে থাকতেন। উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে গ্রামেই মাছ চাষ করতেন তিনি। সেই সঙ্গে সরকারি চাকরির প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। ছেলের মৃত্যুর খবরে অসুস্থ হয়ে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি হয়েছেন তাঁর মা।
দুর্ঘটনার খবর পেয়ে রাতেই ঘটনাস্থলে পৌঁছয় পুলিশ। আদালত থেকে শব্দবাজি নিষিদ্ধ হওয়ার পরেও কী ভাবে এই পুজোয় বাজি ফাটানো হত?
পুলিশ জানিয়েছে, এটা ওই গ্রামের প্রাচীন পুজো। বহু বছর ধরে বাজি পোড়ানোর পাশাপাশি আতসবাজির ব্যবস্থা থাকে। বিস্তারিত তদন্ত করে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মানবাধিকার সংগঠন এপিডিআরের জেলা সম্পাদক আলতাফ আহমেদ বলেন, "শব্দবাজি নিয়ে আরও সতর্ক হওয়া উচিত। প্রশাসনের উচিত সচেতনতার প্রচারে আরও জোর দেওয়া।"
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy