বাঁ দিক থেকে, জাকির হোসেন গাজি, পৌষালী দাস ও শুভঙ্কর দাস। —নিজস্ব চিত্র।
আর্থিক অনটনের মধ্যেও ওরা কেউ হতে চায় শিক্ষক। সরকারি আমলা হওয়ার স্বপ্ন দেখে। কিন্তু কী ভাবে ওদের স্বপ্নপূরণ হবে, জানা নেই কারও।
তালদি মোহনচাঁদ হাইস্কুল থেকে ৩৮৩ নম্বর পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে জাকির হোসেন গাজি। বাবা নিয়ামত গাজি দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ। মা সাহিদা গাজি পরিচারিকার কাজ করেন। ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া, স্বামীর চিকিৎসার খরচ চালাতে একপ্রকার হিমসিম খেতে হয় তাঁকে। তালদির পূর্ব শিবনগরে মাটির বাড়িতে কোনও রকমে মাথা গুঁজে থাকেন ওরা। বাড়িতে বিদ্যুৎ নেই। ফলে দিনেরবেলাতেই বেশির ভাগ পড়াটা এগিয়ে রাখতে হয়েছে জাকিরকে। কোনও গৃহশিক্ষক ছিল না। পরীক্ষার আগে অজয় মণ্ডল নামে পাড়ার এক দাদা ইংরেজি দেখিয়ে দিতেন। অজিতেশ বৈদ্য নামে একজনও পড়াশোনায় কিছুটা সাহায্য করেছিলেন। জাকির চায় কলকাতার কোনও ভাল কলেজে ইংরেজি অনার্স নিয়ে পড়ে শিক্ষক হতে। সাহিদা গাজি বলেন, ‘‘ছেলে চায় আরও পড়তে। এই রোজগারে ওর বাবার চিকিৎসার পরে পড়ার খরচ কী ভাবে জোগাড় করব বুঝতে পারছি না।’’
তালদি মোহনচাঁদ হাইস্কুলেরই আরও এক ছাত্র শুভঙ্কর দাস। ৩৭৬ নম্বর পেয়েছে। বাবা হেমন্ত দাস রাজমিস্ত্রি। মা পরিচারিকার কাজ করেন। বাড়িতে চার ভাইবোন। তালদির বয়ারসিং গ্রামে তাদের মাটির বাড়িতে বাস। বাবার সঙ্গে রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের কাজ করে এবং টিউশন পড়িয়ে নিজের পড়ার খরচ চালায় শুভঙ্কর। এখন তার ইচ্ছে কলকাতার কোনও কলেজে ভর্তি হওয়ার। পরীক্ষার আগে তার কোনও গৃহশিক্ষক ছিল না। শুভঙ্করের কথায়, ‘‘শিক্ষক হতে চাই। দুঃস্থ পড়ুয়াদের বিনা টাকায় পড়াতে চাই।’’ কিন্তু তার এই স্বপ্ন পূরণ হবে কিনা, তা নিয়ে এখন চিন্তায় দাস পরিবার।
অন্য দিকে, তালদি মোহনচাঁদ হাইস্কুল থেকে এ বার উচ্চ মাধ্যমিকে ৪৩৪ নম্বর পেয়েছে পৌষালী দাস। বাবা বিমলকৃষ্ণবাবু রেললাইনের ধারে সব্জি বিক্রি করেন। তালদির মধ্য রাজাপুরে মাটির এক চিলতে বাড়িতে স্ত্রী, দুই ছেলেমেয়েকে নিয়ে সংসার চালাতে নাকানিচোবানি খেতে হয় বিমলকৃষ্ণবাবুকে। অভাবের কারণে পৌষালীর প্রথম থেকে কোনও গৃহশিক্ষক ছিল না। কিন্তু অনুপম রায় নামে এক শিক্ষক তাকে বিনা টাকায় পড়িয়েছেন। পৌষালী চায়, কলকাতার কোনও ভাল কলেজে ভর্তি হতে। ভবিষ্যতে ডব্লিউবিসিএস পড়তে চায় সে। মা সংযুক্তা দাস বলেন, ‘‘মেয়ের ছোট থেকে কোনও চাহিদা ছিল না। হয় তো আমাদের অভাবের কথা জেনেই কখনও কিছু বলতে পারেনি। এখন ওর স্বপ্ন কী ভাবে পূরণ করব জানি না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy