অকালে মারা গিয়েছে মণি। শোকে কাতর আকিউর।
পোষ্যের মৃত্যুতে ভেঙে পড়বেন মনিব, সে আর নতুন কী। কিন্তু পোষা ঘোড়ার মৃত্যুতে বিচার চেয়ে থানা-পুলিশ করতে শুরু করেছেন আকিউর। তাতেই গোল বেধেছে।
বুধবার ভরদুপুরে সবে একটু বিশ্রাম নিতে যাচ্ছিলেন ক্যানিং থানার ওসি সতীনাথ চট্টোরাজ। আচমকাই সেখানে হাজির আকিউর মোল্লা। কাঁদো কাঁদো দশা। লুঙ্গির খুঁট দিয়ে মাথার ঘাম আর চোখের জল মুছে বললেন, ‘‘হুজুর, আমার ঘোড়াকে মেরে ফেলেছে আর একটা পাগলা ঘোড়া। তার শাস্তি চাই। আর আমার চাই ক্ষতিপূরণ।’’
‘‘আগে একটু জিরিয়ে নাও, বাকি কথা শুনছি পরে’’— আকিউরের জন্য চা-বিস্কুটের অর্ডার করে ওসিও ভাবতে বসেন, কী করণীয়। একটু ধাতস্থ হয়ে আকিউর জানান, তাঁর বাড়ি ভাঙড়ের নাংলা গ্রামে। মণি তাঁর আদরের ঘোড়া। বছর পাঁচেকের টগবগে মণি মাঠে দৌড়ে বহু পুরস্কার এনে দিয়েছে মনিবকে। সেই ঘোড়াই মারা গিয়েছে দিন তিনেক আগে।
কী ভাবে? আকিউর পুলিশকে জানান, সোনারপুরে আড্ডিরাবাদে ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতায় ছুটতে নেমেছিল মণি। অন্য একটি পাগলা ঘোড়া তাকে ল্যাং মেরে ফেলে দেয়। মাঠেই মারা যায় মণি। মলিন ব্যাগ থেকে তার ডেথ সার্টিফিকেটও সঙ্গে করে এনেছিলেন সদ্য ঘোড়া-হারা মনিব। পুলিশকে দেখান সে সব। মঙ্গলবারই স্থানীয় পঞ্চায়েতকে জানিয়ে মণিকে গোর দিয়েছেন আকিউর। পুলিশকে তিনি জানান, ‘খুনি’ ঘোড়া থাকে ক্যানিংয়ের ট্যাংরাখালির এক আস্তাবলে। সেখানেই তার মনিবের বাড়ি। এ বার পুলিশ এর একটা বিহিত করুক।
পুলিশ কর্তারা আমতা আমতা করে বলেন, আকিউরের যন্ত্রণাটা তাঁরা বিলক্ষণ বুঝতে পারছেন। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তাঁদের বিশেষ কিছু করার নেই। সে সব কথা আকিউর কানে উঠলে তো হয়! শেষমেশ একটি সাধারণ ডায়েরি নেওয়া হয়েছে।
পাগলা ঘোড়া না তার মনিব— কার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করতে হবে, তা ভেবে আপাতত পাগল পাগল দশা পুলিশেরও। সে সব নিয়ে অবশ্য ভাবছেন না আকিউর। লুঙ্গির খুঁট দিয়ে ঘাম মুছতে মুছতে থানা থেকে বেরোনোর সময়ে বলে গেলেন, ‘‘মণিটা এমন অকালে মারা গেল, দেশে কী আইন-আদালত বলে কিছু নেই!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy