অন্ধকারেই-পথচলা: পাথরপ্রতিমায় ছবিটি তুলেছেন শান্তশ্রী মজুমদার
শ্বশুরবাড়ির লোক অসুস্থ হওয়ায় কয়েক মাস আগে রাতে কাকদ্বীপ আসতে হয়েছিল আঢ্য বাজারের বাসিন্দা তরুণকান্তি শাসমলকে। আসার পথে গঙ্গাধরপুর সেতু পেরোতে হয়। ঘন আঁধারে ঢাকা সেতু পেরোতে গিয়ে দুষ্কৃতীদের হামলার মুখে পড়েন তরুণবাবু। কোনও মতে সাইকেলের গতি বাড়িয়ে নিষ্কৃতি পেয়েছিলেন সে দিন।
পাথরপ্রতিমা এবং কাকদ্বীপ ব্লকের মানুষের যোগাযোগের জন্য তৈরি হয়েছিল গঙ্গাধরপুর-আঢ্যবাজার সেতু। অনেক সমস্যার সমাধান হয়েছিল গোবদিয়া নদীর উপরে কংক্রিটের এই সেতু তৈরির পরে। কিন্তু ইদানীং সেতু পারাপার ভয়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে অনেকের কাছে।
সেতুর আলো প্রায়ই চুরি যাচ্ছে। তার জেরে সেতুর উপরে বাড়ছে দুষ্কৃতীদের গতিবিধি। যা নিয়ন্ত্রণ আনার সে রকম কোনও তাগিদ চোখে পড়ছে না পুলিশের, অভিযোগ এমনটাই।
আঢ্যবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক তথা এলাকার গ্রামীণ ডাক্তার তুষাল শাসমল বলেন, ‘‘আমার মেয়ে ও পারের স্কুলে পড়ে। স্কুল সেরে মামার বাড়ি ঘুরে যে দিনই ফিরতে দেরি হয়, ভয়ে ভয়ে থাকি। সেতুর উপরে দুষ্কৃতীদের আনাগোনাটা বন্ধ হওয়া খুব দরকার।’’ কামদেব নগরের গুরুপদ সামন্ত এবং আঢ্য বাজারের তাপস দলুইদেরও একই অভিযোগ। রাত হলেই অন্ধকারে ডুবে যায় সেতু এবং দু’ধারের অ্যাপ্রোচ মিলিয়ে প্রায় ৪০০ মিটার এলাকা। সেখানেই নিয়মিত ভাবে ঠেক জমাচ্ছে ছিনতাইবাজ, পাতাখোরেরা। এলাকাবাসীর অভিযোগ, পুলিশি নজরদারি জোরদার নয় বলেই বার বার আলো চুরি হচ্ছে। যে কোনও দিন আঁধারের সুযোগ নিয়ে বড়সড় বিপদ না ঘটিয়ে বসে দুষ্কৃতীরা, আতঙ্ক তা নিয়ে।
বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ কাকদ্বীপের মন্ত্রী মন্টুরাম পাখিরাও। তিনি জানান, ২০১১-১২ সালে প্রায় ২৪ কোটি টাকা খরচ করে সেতুটি সম্পূর্ণ হয়। তখনই সৌরবিদ্যুতে জ্বলা পথবাতির ব্যবস্থা হয়েছিল। কিন্তু কিছু দিনের মধ্যেই তা চুরি যায়। সুন্দরবন উন্নয়ন পর্ষদের তরফে গত পাঁচ বছরে অন্তত তিনবার আলো এবং সৌর বিদ্যুতের ব্যাটারি লাগানো হয়েছিল কয়েক লক্ষ টাকা খরচ করে। সবই চুরি গিয়েছে।
সেতুতে গিয়ে দেখা গেল, ২০টি খুঁটির কোনওটিতেই আলো নেই। বেশিরভাগ সৌর প্যানেল, ব্যাটারি উধাও। দু’টি খুঁটিও উপড়ে নিয়েছে দুষ্কৃতীরা। মন্টুরামবাবু অবশ্য চাইছেন, আলো চুরি যাওয়া আটকানোর দায়িত্ব নিন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। তাঁর কথায়, ‘‘আমি নিজেও বিরক্ত। আলো চুরির জন্য অসামাজিক কাজকর্ম বাড়ছে ওই সেতুতে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা একটু দায়িত্ব নিলে আলোগুলি থাকে।’’ ব্যবসাসীরা আবার সৌর প্যানেল বাদ দিয়ে বিদ্যুতের তার জুড়ে আলো লাগানোর দাবি তুলছেন। তা হলে অন্তত চুরি বন্ধ হবে। বাড়বে নিরাপত্তা।
সুন্দরবন জেলা পুলিশ সুপার তথাগত বসু জানিয়েছেন, সেতুর পাশে নজরদারি চালায় পুলিশ। মোতায়েন থাকে সিভিক পুলিশও। তিনি বলেন, ‘‘বিষয়টি জানা ছিল না। আমি খতিয়ে দেখছি, কী ব্যবস্থা করা যায়।’’ তবে সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, রাত হলেই গা ছাড়া দেন নজরদারেরা। আর তখনই ভয়ের পরিবেশ ঘনায় গঙ্গাধরপুর সেতুতে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy