অর্চিষ্মান। নিজস্ব চিত্র
আর্থিক অনটন তো ছিলই। তার মধ্যেই পড়াশোনা করে ভাল ফল করেছে ছেলেটা। স্বপ্ন, বিজ্ঞান নিয়ে পড়বে। অভাবের সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরায় দশা। সেই ছেলেকে কী করে যে পড়াবেন, ভেবে পাচ্ছেন না দিনমজুর বাবা। তবে মাধ্যমিকের ফল বেরনোর পরে আনন্দে চোখের জল ধরে রাখতে পারছিলেন না কেউই।
উত্তর ২৪ পরগনার দত্তপুকুর থানার নিবাদুই উচ্চ বিদ্যালয়ের হয়ে মাধ্যমিক পরীক্ষা দেয় শুভ পাল। শুভর বাবা শ্রীকৃষ্ণ পাল স্থানীয় একটি কাপড়ের দোকানে কর্মচারীর কাজ করেন। ঠাকুমা-সহ সংসারে পাঁচ জনের পরিবার। দশ বাই দশ ভাড়া ঘরে শুভ সব সময়ে পড়াশোনা নিয়েই কাটাত। এ বারে মাধ্যমিকে ৬৬৯ নম্বর পেয়েছে সে। শুভর বাবার কথায়, ‘‘জানি না, কী ভাবে ওর স্বপ্নপূরণ করব।’’ স্থানীয় বাসিন্দা সুভাষচন্দ্র দাস বলেন, ‘‘অভাবনীয় প্রতিভা আছে ছেলেটার মধ্যে। আমরা ওর পাশে আছি।’’ শুভ ইঞ্জিনিয়ার হতে চায়। স্কুলের শিক্ষকেরা তাকে বিনা বেতনে পড়াতেন। আগামী দিনেও সকলে পাশে থেকে সহযোগিতা করবেন বলে আশাবাদী ছেলেটা।
কাঠফাটা রোদে বাবাকে জমিতে চাষ করতে দেখেছে সে। প্রতিমাসে মাত্র ৫ হাজার টাকায় পরিবারের খরচ বহন করা কতটা দুঃসাধ্য, সেটাও দেখেছে বছর পনেরোর অর্চিষ্মান গিরি। সেই থেকেই বাবা-মার মুখে হাসি ফোঁটানোর জন্য শুরু করেছিল পরিশ্রম। শনিবার সেই পরিশ্রমের ফল পেল দক্ষিণ ২৪ পরগনার নামখানার অক্ষয়নগর কুমোর নারায়ণ হাইস্কুলের ছাত্র অর্চিষ্মান। এ বছর মাধ্যমিক পরীক্ষায় ৬৫৪ নম্বর পেয়েছে সে। ধরা গলায় ছেলেটি বলে, ‘‘আমাকে পড়ানোর জন্য বাবা-মা অনেক কষ্ট করেছেন। আজ তাঁদের খুশি দেখে আমার সব থেকে ভাল লাগছে।’’ মা ঝুমুর গিরি বলেন, ‘‘অঙ্ক ছাড়া আর কোনও বিষয়ে প্রাইভেট টিউটর ছিল না ওর। স্কুল এবং পাড়ার শিক্ষকেরা বিনা পয়সায় পড়িয়েছেন। সকলকে ধন্যবাদ।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy