উদ্যোগ: কুরিয়রের মাধ্যমে বাড়িতে পৌঁছল গঙ্গাসাগরের জল (বাঁ দিকে)। জলের বাক্স মাথায় ঠেকিয়ে প্রণাম করছেন এষাদেবী (ডান দিকে)। শনিবার, ট্যাংরা থানা এলাকায়। নিজস্ব চিত্র
করোনা সংক্রমণের প্রতিরোধে এ বছর গঙ্গাসাগর মেলায় ‘ই-স্নান’ জনপ্রিয় করা হোক। কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টি বি রাধাকৃষ্ণন বৃহস্পতিবারই রাজ্য সরকারকে এমন নির্দেশ দিয়েছেন। যদিও ই-স্নানের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে ওই নির্দেশের অনেক আগেই। যার পরীক্ষামূলক শুরুটা হয়েছিল গত বছর মকর সংক্রান্তির প্রাক্কালে।
দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, গত বছর থেকেই সাগরের ‘পবিত্র জল’ বাক্সবন্দি করে ওয়েবসাইটে করা আবেদন অনুযায়ী কুরিয়র সংস্থা মারফত রাজ্যে, ভিন্ রাজ্যে, এমনকি বিদেশেও পাঠানোর ব্যবস্থা হয়েছিল। আর এ বছর থেকে পরিকল্পিত ভাবে ওই জল সংগ্রহ করে দেশ-বিদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা হয়েছে। তবে এ বার আবেদনের সংখ্যা আগের তুলনায় বেশি। কারণ, বহু পুণ্যার্থী সংক্রমণ এড়াতে বাড়ি থেকেই পুণ্যস্নান সারতে চাইছেন।
তেমনই এক জন, ট্যাংরা থানা এলাকার ক্রিস্টোফার রোডের বাসিন্দা সত্তরোর্ধ্ব এষা গুপ্ত। শুক্রবার বেলায় বেল বাজতেই তিনি দরজা খুলে দেখেন, নীল রঙের চৌকো বাক্স নিয়ে দু’জন ব্যক্তি দাঁিড়য়ে। বৃদ্ধা খবর পেয়েছিলেন আগেই। তাই বুঝতে অসুবিধা হয়নি, সপ্তাহখানেক আগে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসনের ওয়েবসাইটে তাঁরই করা আবেদনের উত্তর এসেছে বাক্সে করে। পরম ভক্তিতে ওই বাক্স মাথায় ঠেকিয়ে নমস্কার জানালেন দুই আগন্তুককে। তাঁর আবেদন করার কয়েক দিনের মধ্যেই বাড়িতে ওই ‘পবিত্র জল’ পৌঁছে দেয় জেলা প্রশাসন নিয়োজিত কুরিয়র সংস্থা।
আরও পড়ুন: গত ২৪ ঘণ্টায় ২০ করোনা আক্রান্তের মৃত্যু, নতুন করে সংক্রমিত ৭৮৭
আরও পড়ুন: দুয়ারে সরকারে নাম নথিভুক্তি পৌঁছে গেল ২ কোটিতে, শুভেচ্ছা মুখ্যমন্ত্রীর
ওই জল পেয়ে শিশুর মতোই উৎফুল্ল এষাদেবী। তিনি বলেন, “মকর সংক্রান্তিতে গঙ্গাসাগরে স্নান করার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু নানা কারণে সম্ভব হয়নি। তাই এ বছর পবিত্র জল নিয়ে আসার জন্য ওয়েবসাইটে বুক করেছিলাম। ভাবতে পারিনি তা এত তাড়াতাড়ি আমার হাতে আসবে।”
ওই জল দিয়ে কী করবেন এষাদেবী? তিনি বলেন, “মকর সংক্রান্তির দিন ওই বাক্সে থাকা পিতলের কমণ্ডলুর পবিত্র জল নিজের মাথায় দেব। বাড়ির সকলের মাথায় দেব। কার্যত সংক্রান্তির দিন বাড়িতে থেকেই এ বার পুণ্যস্নান সারব।”
দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাশাসক পি উলগানাথন বলেন, “এ বছর এখনও পর্যন্ত পাঁচ থেকে সাত হাজার মানুষের হাতে ওই পবিত্র জল পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হয়েছে। ওয়েবসাইটে আসা আবেদন অনুযায়ী আরও কয়েক হাজার মানুষের বাড়িতে ওই জল পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তা ছাড়া, উট্রাম ঘাট থেকে গঙ্গাসাগর পর্যন্ত নানা জায়গায় কিয়স্ক করে ই-স্নানের ব্যবস্থা হচ্ছে।” ‘পবিত্র জল’ ও প্রসাদের জন্য কোনও মূল্য ধার্য করেনি প্রশাসন। তবে ডেলিভারি চার্জ হিসেবে দেড়শো টাকা নেওয়া হচ্ছে।
কী ভাবে সংগ্রহ করা হচ্ছে ওই জল?
দক্ষিণ ২৪ পরগনার অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলা পরিষদ) তনভির আফজল বলেন, “গঙ্গাসাগরের পবিত্র জল একটি পিতলের কমণ্ডলুতে ভরা হচ্ছে। পরে তা কপিলমুনির মন্দিরে নিয়ে গিয়ে পুজো করা হচ্ছে। পবিত্রতা বজায় রেখে সেই পুজো করা জল ফের ওই পাত্রে ভরা হচ্ছে। কপিলমুনির মন্দিরের প্রসাদ-সহ কমণ্ডলু বাক্সবন্দি করে কুরিয়র সংস্থার হাতে দেওয়া হচ্ছে।”
দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসন সূত্রের আরও খবর, হাইকোর্টের সাম্প্রতিক নির্দেশের পরে সাগরতট-সহ গঙ্গাসাগরে যাত্রাপথের বিভিন্ন এলাকায় পবিত্র জলের কিয়স্ক তৈরির কাজ জোরকদমে শুরু হয়ে গিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy