কলাবতী। নিজস্ব নিত্র
নিরুদ্দেশ সম্পর্কে কোনও ঘোষণা হয়নি। বিহারের ভোজপুরের আরা শহর। আরও প্রত্যন্ত জগদীশপুর গ্রামে বাড়ি। মেয়েরা নিখোঁজ হয়ে গেলেও শোরগোল পড়েনি। দু’বেলা খাবার জোগাড়ের চিন্তাই পরিবারে সব চেয়ে বড় সত্যি। ‘মাথাপাগল’ মেয়েরা কোথায় দিল ছুট, ভাবেওনি কেউ।
এক জনের এখনও নিখোঁজ। অন্য জন বছর খানেকের মেয়ে কোলে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন বারাসতের রাস্তায়। গত বছর জুলাই মাসে। পুলিশ তাঁকে পৌঁছে দেয় পাভলভ মানসিক হাসপাতালে। বাচ্চাটির ঠাঁই হয় হোমে। মানসিক ভারসাম্যহীন মা তাকে সামলাবেন কী করে? হাসপাতালে শুরু হয় মায়ের চিকিৎসা। কিন্তু ২৭-২৮ বছরের সেই তরুণী না বলছেন নাম, না বলছেন ঠিকানা। চিকিৎসকরা ওষুধ দিয়ে ভাল করে তোলার চেষ্টা করছিলেন। আর কলকাতার স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার উদ্যোগে চলছিল কাউন্সেলিং।
এক বছরের অক্লান্ত চেষ্টায় গত ২৩ মে ঘরে ফিরেছেন সেই তরুণী, কলাবতী। তাঁর শিশুকন্যা এখনও হোমে। কলাবতীকে একটু-আধটু কাজ করতে দিয়ে আত্মবিশ্বাস ফেরানোর চেষ্টা করা হয়। তাঁর দেশোয়ালি কথার টান বুঝতে প্রথমে অসুবিধেই হত স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মী শুক্লা দাস বড়ুয়া আর অনিন্দিতা চক্রবর্তীর। কিন্তু তাঁদের জেদেই কাজ হাসিল হয়। মনের দরজা খোলে কলাবতীর। হঠাৎ একদিন বলেন, আরা শহরের কথা। মনে পড়ে দুর্ঘটনায় পা-কাটা স্বামীকে। আরও এক মেয়েকে।
কেন বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন? স্পষ্ট মনে নেই। জগদীশপুরে প্রতিবেশীর ফোন থেকে বলেন, ‘‘মাথা পাগল দিদি। কোথায় চলে গেলাম!’’ কাউন্সেলিং থেকে শুক্লার অভিজ্ঞতা, ‘‘দারিদ্র্য আর সঙ্কট এত ভয়ঙ্কর হতে পারে, ওঁদের পরিবার না দেখলে বোঝা যায় না। মানসিক ভারসাম্য হারানো খুব অস্বাভাবিক নয়।’’ কলাবতীর ঠিকানা জেনে তাঁরা যোগাযোগ করেন বিহারের স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে। কথা হয় পঞ্চায়েত স্তরেও। সুস্থ বোঝার পরে চিকিৎসক শ্রীজিত ঘোষ ছাড়পত্র দেন। শুরু হয় কলাবতীর যাত্রা। বাচ্চাকে ফেলে যেতে রাজি হলেন মা?
সে ফিরে গ্রামে কি খেতে পেতো! খুদেটার এ শহরে খাওয়া-পরার অভাব হবে না। শুক্লা-অনিন্দিতা বুঝিয়েছিলেন সেটাই। ফিরে গিয়ে মন কেমন করে না? কলাবতী বলেন, ‘‘জানি ও ভাল আছে।’’ আর এক মেয়ের ভার নিয়েছেন তাঁরই ননদ। তবে কলাবতীকে ওষুধ খেতে হবে রোজ। তাঁর মায়েরও মানসিক সমস্যা রয়েছে। তাই ভরসা, প্রতিবেশী দম্পতি মুন্নি দেবী, শোভারাম। তিন মাসের ওষুধের ব্যবস্থা করেছে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাই। এর পরে রাঁচীতে চেক আপ। ‘‘অনেকে সুস্থ হয়েও তো ফিরতে পারেন না,’’ বলছিলেন পাভলভের চিকিৎসক শ্রীজিতবাবু। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে সাধুবাদ দিয়ে তাঁর মন্তব্য, ‘‘৫০-৬০ রোগী এখনও হাসপাতালে বন্দি। সে দিক থেকে কলাবতী লাকি।’’
মেয়ে ঘরে ফিরেছে। পরিবার কি খুশি? শুক্লার দাবি, ‘‘খাওয়ার লোক আবার বাড়ল, মুখে না বললেও ওঁদের বাস্তব এটাই।’’ কলাবতী বুঝেছেন, কাজ করতে হবে। প্রতিবেশী, প্রশাসন ভরসা দিচ্ছে। এগোতে চান মেয়ে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy