হাসপাতালে অনুষ্ঠান। নিজস্ব চিত্র
সকাল থেকেই রং-বেরঙের বেলুনে সাজিয়ে দেওয়া হয়েছিল আসানসোল জেলা হাসপাতালের এসএনসিইউ বিভাগ। একবিন্দুও দম নেওয়ার সময় ছিল এই বিভাগের ১২ জন নার্সের। কারণ, তাঁদের কাছেই বেড়ে ওঠা গোগোলের অন্নপ্রাশন বলে কথা!
আদর করে ওই শিশুকে শুধু গোগোল নামে ডাকা হতো তা নয়। তোলতোল, বাবু নামেও তাকে ডাকা হয়। শুক্রবার হাসাপতাল সুপার নিখিলচন্দ দাস নিজে চামচ দিয়ে তাকে ভাত খাওয়ালেন। এসএনসিইউ-এর নার্সিং ইনচার্জ সোমা দাস জানান, মা মানসিক ভারসাম্যহীন। এপ্রিল মাসে স্বেচ্ছাসেবী সেজে কেউ ৬ মাসের অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় পরিচয়হীন ওই মহিলাকে এখানে ভর্তি করে দিয়ে যায়। তারপর ৯ জুন তিনি এক শিশুপুত্রের জন্ম দেন। জন্মের সময় ওজন ছিল ৩ কেজি ২০০। সব রকমভাবেই সুস্থ। শিশুর জন্মের পর থেকে নার্সরাই লালন-পালন করছেন। মায়ের কাছে রাখা হয় না তাকে। মাঝে মাঝে মা শিশুকে নিলেও বেশিক্ষণ ভরসা করে তাঁর কাছে রাখা হয় না। এসএনসিইউ- এর নার্স মানসী রায়, স্বাগতা বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রিয়ঙ্কা চট্টোপাধ্যায়, সীমা মুখোপাধ্যায়, অপর্ণা মল্লিকেরা বলেন, ‘‘মায়ের সঠিক নাম ঠিকানা আজও জানতে পারিনি। তিনি নিজের নাম কখনও জুবিনা, সাবিনা, কখনও রেজিনা বলছেন। মাঝে মাঝে উত্তেজিত হয়ে পড়ে নিজের হাত কাটার চেষ্টা করেন। তাঁকে সহানুভুতির সঙ্গে সামলানো হচ্ছে। তাঁকে মহিলা ওয়ার্ডে ও শিশুকে এসএনসিইউতে রাখা হয়েছে।’’
গোগোল সারাদিন নার্সদের কাছেই দিন কাটায়। ঘুমোয়ও। হাসপাতালের অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপার কঙ্কন রায় বলেন, ‘‘তাকে বর্ধমান চাইল্ড লাইনে পাঠানো হবে। তাদের সঙ্গে মৌখিক আলোচনা হয়েছে।’’ মানসীদেবীদের কথায়, “আমাদের কাছে বেড়ে ওঠা শিশুটির উজ্জ্বল ভবিষ্যতের প্রার্থনা করে অন্নপ্রশানের আয়োজন করলাম।” সুপার বলেন, “নানা নামে তাকে ডাকে সকলে। আমি বাবু নামে ডাকি। ওর প্রতি মায়া পড়ে গিয়েছে। অন্নপ্রাশনের সময় তাকে জুতো, জামা, প্যান্ট, খেলনা উপহার দিয়েছেন অনেকেই। নিজেরা চাঁদা দিয়ে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। প্রতিটি ওয়ার্ডের ইনচার্জদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। ৫০ জন এসেছিলেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy