Advertisement
০৪ মে ২০২৪
Shahjahan Sheikh

শাহজাহানের মেজাজ বদল ৫৩ দিনে, আত্মবিশ্বাস নেই, শিথিল শরীরীভাষা, কুঁকড়ে যাচ্ছেন ‘সন্দেশখালির বাঘ’?

গ্রেফতারের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে উদ্ধত আঙুল নেড়েছিলেন শাহজাহান। ফিরেও তাকাননি। তাঁর পিছনে হাঁটতে থাকা পুলিশকর্মীদেরও সে দিন বশংবদ দেখিয়েছিল।

Basirhat Court Premises saw different moods of Shahjahan Sheikh in a span of 53 days

(বাঁ দিকে) ১ মার্চ, গ্রেফতারের দিন শেখ শাহজাহান। ২৩ এপ্রিল, বসিরহাট আদালত চত্বরে শেখ শাহজাহান (ডান দিকে)। ছবি: সংগৃহীত।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ২২:০৭
Share: Save:

গত ১ মার্চ সকাল। বসিরহাট আদালতের বারান্দায় তাঁর পদচারণা ছিল আক্ষরিক অর্থেই ব্যাঘ্রসুলভ। ২৩ এপ্রিল বিকেল। সেই বসিরহাট আদালত চত্বর। কান্নায় ভেঙে পড়লেন তিনি।

ব্যবধান ৫৩ দিন। সম্পূর্ণ বিপরীত দুই শেখ শাহজাহানকে দেখা গেল। তিনি আর ‘সন্দেশখালির বাঘ’ নেই।

আপাতদৃষ্টিতে কি ৫৩ দিন অনেক সময়? অনেকে বলবেন, বহু দিন। প্রায় দু’মাস। আবার অনেকে বলবেন, দু’মাস আর এমন কী? মাত্র আটটা রবিবার। চোখের পলক ফেলার আগে কেটে যায়। কিন্তু জেলবন্দিদের কাছে ৫৩ দিন সত্যিই অনেক দিন। বিশেষত, শেখ শাহজাহানের মতো মানুষের কাছে। একদা যিনি ছিলেন সন্দেশখালির দণ্ড এবং মুণ্ডের কর্তা।

শাহজাহানের একাধিক হাজিরায় উপস্থিত থাকা এক পেশাদার আইনজীবীর কথায়, ‘‘সময় যত এগিয়েছে, তত শাহজাহানের হাঁটাচলা, কথা বলা বদলে গিয়েছে। পুলিশি হেফাজত থেকে সিবিআই, সিবিআই থেকে ইডি হেফাজতে যাওয়ার পর থেকেই ক্রমশ তাঁকে দেখে বোঝা যাচ্ছিল, আগের তিনি আর নেই। তবে মাঝে মাঝে মেজাজ দেখিয়েও ফেলেছেন। কিন্তু এখন পরিস্থিতি আরও জটিল। তাঁর এক ভাইকে গ্রেফতার করেছে ইডি। আর এক ভাইয়ের নামে লুক-আউট নোটিস জারি করা হয়েছে। স্ত্রীকে মাঝেমধ্যেই ডেকে জেরা করা হচ্ছে। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি ক্রমশ প্রতিকূল হচ্ছে তাঁর জন্য।’’

মঙ্গলবার বসিরহাট আদালত চত্বরে ভেঙে-পড়া শাহজাহানকে দেখে অনেকেই মনে করতে শুরু করেছেন, তিনি কারান্তরালে ভেঙে পড়তে শুরু করেছেন। নইলে তাঁর মেজাজের এতটা পরিবর্তন হত না। কয়েক দিন আগেও তাঁর গলায় শোনা যেত, ‘‘সব মিথ্যে! সব চক্রান্ত!’’ মঙ্গলবার সে সব কিছু শোনা যায়নি।

গত ২৯ ফেব্রুয়ারি গভীর রাতে শাহজাহানকে গ্রেফতার করেছিল ন্যাজাট থানা। তার আগে ৫৫ দিন গা ঢাকা দিয়েছিলেন তৃণমূলের দাপুটে নেতা। রেশন দুর্নীতির তদন্ত করতে গিয়ে যাঁর মহল্লায় ইডি অফিসারদের বেধড়ক মার খেয়ে, রক্ত ঝরিয়ে দ্বীপভূমি ছাড়তে হয়েছিল। গ্রেফতারেরে পরেও শাহাজাহানকে দেখা গিয়েছিল বাদশাহি মেজাজে। সাদা ট্রাউজার্স, সাদা ফুলস্লিভ শার্ট, তার উপর চেক্‌স হাফস্লিভ জ্যাকেট, পায়ে সাদা স্নিকার্স। শাহজাহানের পদক্ষেপ সে দিন বুঝিয়ে দিয়েছিল তখনও তাঁর দাপট। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে কেবল আঙুল নেড়েছিলেন। ফিরেও তাকাননি। তাঁর পিছনে হাঁটতে থাকা পুলিশকর্মীদেরও সে দিন বশংবদ দেখিয়েছিল।

মঙ্গলবার সেই শাহজাহানকেই বসিরহাট আদালতে পেশ করেছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। শুনানির শেষে আদালত থেকে বেরিয়ে প্রিজ়ন ভ্যানে যখন তল্লাট ছাড়ছেন তিনি, তখন ৫৩ দিন আগের মেজাজ উধাও। ভ্যানের একচিলতে জানলার কাছে দাঁড়িয়েছিলেন শাহজাহানের স্ত্রী, কন্যা-সহ পরিবারের লোকজন। তাঁরা সকলে শাহজাহানকে বলেন শরীরের যত্ন নিতে। স্ত্রীর চোখে জল। স্ত্রীর কান্না দেখে নিজেকে ধরে রাখতে পারেননি শাহজাহান। প্রিজ়ন ভ্যানের জানালার জাল দিয়ে স্ত্রীর আঙুল জড়িয়ে বলেন, ‘‘আল্লার কাছে দোয়া কোরো।’’ সেটুকু বলেই মুখ ঘুরিয়ে নেন। মুছে নেন চোখের জল। গ্রেফতার হওয়ার পরে ১ মার্চ শাহজাহানের চেহারা দেখে অনেকে বলেছিলেন, ধরা পড়ার আগের ৫৫ দিন তিনি ‘রসেবশে’ই ছিলেন। পরিপাটি করে আঁচড়ানো চুল, ক্লিন শেভ্‌ন গাল দেখেই তেমন ধারণা জন্মেছিল। কিন্তু মঙ্গলবার শাহজাহানের সেই ‘জেল্লা’ দেখা গেল না। পরনে সাধারণ টি-শার্ট। থুতনির কাছে খোঁচা খোঁচা কাঁচা-পাকা দাড়ি।

ইদের কয়েক দিন আগে শাহজাহানের একদা ঘনিষ্ঠ এক নেতা কলকাতার একটি ঘরোয়া আড্ডায় বলছিলেন পরবে ঢাকা থেকে শাহজাহানের বিশেষ আতর আনানোর গল্প। বলছিলেন শাহজাহানের নিজের হাতে সিমাই বানানোর গল্প। শুধু ইদ নয়, দুর্গাপুজোতেও শাহজাহানের বস্ত্রবিতরণের বহরের কথা। সেই শাহজাহানের এ বার ইদ কেটেছে গরাদের ওপারে। কুঁকড়ে গিয়েছে ‘সন্দেশখালির বাঘ’!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE