‘প্রতীচী’ বাড়িতে গিয়ে অমর্ত্যের সঙ্গে ‘চা-চক্রে’ যোগ দেন মমতা। নিজস্ব ছবি।
নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের নিরাপত্তা এক লাফে অনেকটা বেড়ে গেল। ঘোষণা করলেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
জমি দখলের অভিযোগ নিয়ে অমর্ত্য সেন এবং বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের মধ্যে সংঘাত চরমে উঠেছে। তার মধ্যেই শান্তিনিকেতনে অধ্যাপক সেনের ‘প্রতীচী’র ঠিকানায় গেলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জমি বিবাদে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদের পাশে থাকার বার্তা দিয়ে তাঁর নিরাপত্তাও বাড়িয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর নির্দেশ, অমর্ত্যকে এখন থেকে রাজ্যের তরফে জেড প্লাস নিরাপত্তা দিতে হবে। সেই মতো পুলিশ প্রশাসনকে শীঘ্র পদক্ষেপ করতেও বলেন মমতা। ঘটনাচক্রে, মুখ্যমন্ত্রীও জেড প্লাস নিরাপত্তা পান। এ বার থেকে তাঁর সমতুল্য নিরাপত্তাই পাবেন অধ্যাপক সেন।
সোমবার বীরভূম সফরে এসেছেন মুখ্যমন্ত্রী। বিকেলে সোনাঝুড়ির হাট ঘুরে তাঁর প্রথম গন্তব্য ছিল অমর্ত্যের শান্তিনিকেতনের ঠিকানায়। ‘প্রতীচী’ বাড়িতে গিয়ে অমর্ত্যের সঙ্গে ‘চা-চক্রে’ যোগ দেন মমতা। কথা বলেন জমি বিবাদ নিয়ে। আলাপচারিতায় মুখ্যমন্ত্রী জানান, বিশ্বভারতীর জমির সরকারি নথিপত্রও তিনি সঙ্গে করেই এনেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘অনেক দিন ধরে সহ্য করেছি। আজ সব নথি সঙ্গে করেই এনেছি। এর শেষ দেখে ছাড়ব!’’ তখনই পাশে দাঁড়ানো বীরভূমের পুলিশ সুপার নগেন্দ্রনাথ ত্রিপাঠীর কাছে অমর্ত্যের নিরাপত্তার বিষয়েও জানতে চান মমতা। এর পরেই নোবেলজয়ীর জন্য জেড প্লাস নিরাপত্তার ঘোষণা করেন তিনি। পুলিশের সুপারের উদ্দেশে বলেন, ‘‘উনি (অমর্ত্য) যখন বাড়ি থেকে বেরোবেন, জেড প্লাস নিরাপত্তা করে দেবে।’’ পাশাপাশিই, অমর্ত্যের বাড়ির সামনে যাতে পুলিশের ক্যাম্প রাখা হয়, তারও নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী, বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও অন্যান্য মন্ত্রী, বিধায়ক, সাংসদ, হাইকোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি, প্রথম সারির রাজনীতিক এবং শীর্ষ আমলারা সাধারণত বিভিন্ন স্তরের নিরাপত্তা পেয়ে থাকেন— ‘এক্স’, ‘ওয়াই’ এবং ‘জেড’। এর পরেও প্রতিটি ক্ষেত্রের ‘প্লাস’ নিরাপত্তা হয়। সেই হিসাবে সর্বোচ্চ জেড প্লাস। সরকারি নির্দেশে নিরাপত্তা পেয়ে থাকেন শিল্পপতি, তারকা, খেলোয়াড়-সহ বিশিষ্ট নাগরিকেরাও। প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, যাঁর জীবনে ঝুঁকি যতটা বেশি তার উপরে নির্ভর করে তিনি কোন পর্যায়ের নিরাপত্তা পাবেন। বাংলায় রাজ্যের জেড প্লাস নিরাপত্তা দু’জন পান। এক জন হলেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা। দ্বিতীয় জন হলেন রাজ্যের শাসকদল তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এ বার সেই তালিকা যুক্ত হলেন অমর্ত্যও।
অধ্যাপক সেন এত দিন ‘ওয়াই’ স্তরের নিরাপত্তা পেয়ে এসেছেন। প্রশাসনিক সূত্রে জানা যাচ্ছে, এই নিরাপত্তা ব্যবস্থায় এক অফিসার-সহ চার নিরাপত্তারক্ষী থাকেন। রাস্তায় বের হলে গাড়ির আগে পুলিশের তরফে থাকে ‘এসকর্ট কার’। সেই নিরাপত্তা ব্যবস্থা এখন বেড়ে জেড প্লাস হল। যার অর্থ, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির নিরাপত্তায় স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র সহ ২৪ থেকে ৩৬ জন নিরাপত্তা রক্ষী মজুত থাকবেন। থাকবে ‘বুলেটপ্রুফ’ গাড়িও।
বিশ্বভারতীর জমি বিতর্কে রাজনীতির রং আগেই লেগেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি দখল করে রাখার অভিযোগ তুলে অমর্ত্যকে লাগাতার নিশানা করে চলেছে গেরুয়া শিবির। অন্য দিকে, অমর্ত্যের পাশে দাঁড়িয়ে আসরে নেমেছে তৃণমূলও। শনিবার তৃণমূলের সর্বভারতীয় সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও অর্থনীতিবিদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিজেপিকে কটাক্ষ করেছেন। বলেছেন, ‘‘অমর্ত্যবাবু মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশংসা করেছেন বলেই বিজেপির গায়ে এত জ্বালা!’’ ঘটনাচক্রে, দিন কয়েক আগেই একটি সাক্ষাৎকারে অমর্ত্য বলেছিলেন, দেশের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার যোগ্যতা রয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতার। তার পরেই জমি বিতর্কে অমর্ত্যের জড়িয়ে পড়া এবং পর্যায়ক্রমে তাঁর নিরাপত্তা বেড়ে যাওয়া। রাজনৈতিক বৃত্তের একাংশের যুক্তি, জমি বিবাদ নিয়ে টানাপোড়েনে নোবেলজয়ীর পাশে দাঁড়িয়ে, তাঁর নিরাপত্তা বাড়িয়ে রাজ্যের তরফে এক প্রকার সম্মান দিলেন মুখ্যমন্ত্রী।
অমর্ত্য অবশ্য এ নিয়ে বিশেষ কিছু বলতে চাননি। ‘জেড প্লাস’ নিরাপত্তা সম্পর্কেও তাঁর কোনও ধারণা নেই বলেও জানান। অমর্ত্যের কথায়, ‘‘জেড প্লাস নিরাপত্তা কী, আমি জানিই না। উনি নিশ্চয়ই ভাল কিছু মনে করেছেন। তাই দিয়েছেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy