Advertisement
১৯ মে ২০২৪
CBI

CBI: ঢাল করোনা, কয়লা পাচার তদন্ত ‘ব্যাহত’, সমস্যায় সিবিআই

সিবিআইয়ের অভিযোগ, করোনার প্রকোপ কিছুটা প্রশমিত হলেও কয়েক মাস ধরে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নোটিস পাঠানোর পরেই তাঁদের আদালতের দ্বারস্থ হতে হচ্ছে।

—ফাইল চিত্র।

শুভাশিস ঘটক
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ জানুয়ারি ২০২২ ০৬:২৭
Share: Save:

একই সঙ্গে নিজেদের সাফল্যের দাবি এবং কাজকর্ম ব্যাহত হওয়ার অভিযোগ। আপাতদৃষ্টিতে স্ববিরোধী মনে হলেও কয়লা ও গরু পাচারের তদন্তে সিবিআইয়ের এমন বক্তব্যই প্রকট হচ্ছে। তাদের দাবি, জাল গোটানোর পালা শুরু হয়ে গিয়েছে। সেই সঙ্গে ওই কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার কর্তাদের অভিযোগ, কয়লা ও গরু পাচার নিয়ে তদন্তের গতি করোনা আবহে কিছুটা হলেও থমকে যাচ্ছে।

তদন্তকারী সংস্থার এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্টে সমস্ত তথ্যপ্রমাণ পেশ করার আর্জি জানানো হয়েছে। কিন্তু করোনার দরুন শীর্ষ আদালতে এখন শুধু গুরুত্বপূর্ণ মামলাগুলিরই শুনানি হচ্ছে। আবেদন করা সত্ত্বেও সময়ের অভাবে এই মামলার শুনানি যাচ্ছে পিছিয়ে।’’

সিবিআইয়ের অভিযোগ, করোনার প্রকোপ কিছুটা প্রশমিত হলেও কয়েক মাস ধরে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নোটিস পাঠানোর পরেই তাঁদের আদালতের দ্বারস্থ হতে হচ্ছে। করোনাকে হাতিয়ার করে অধিকাংশ অভিযুক্ত জিজ্ঞাসাবাদের জায়গায় সশরীরে হাজির হতে চাইছেন না। ভার্চুয়াল জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আবেদন করছেন।

তদন্তের প্রায় শেষ পর্যায়ে এই মামলার গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী হিসাবে উঠে এসেছে রাজ্য পুলিশের তিন ইনস্পেক্টরের নাম। ইতিমধ্যে এক ইনস্পেক্টরকে তলব করা হলেও অসুস্থতার কারণে তিনি গরহাজির থেকেছেন। ভার্চুয়াল জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আর্জি জানান তিনিও। সেই আবেদন নাকচ করেছে সিবিআই।

এক পদস্থ সিবিআই-কর্তা বলেন, ‘‘এই ধরনের মামলায় কোনও ভাবেই ভার্চুয়াল জিজ্ঞাসাবাদ করা যায় না। কারণ, নানা নথিপত্র দেখানোর পরে পারস্পরিক তথ্যের ভিত্তিতে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। ভার্চুয়াল জিজ্ঞাসাবাদে তদন্তকারী সংস্থার গোপন নথিপত্র প্রকাশ্যে এসে যেতে পারে। সে-ক্ষেত্রে অভিযুক্ত, তাঁর বিরুদ্ধে মামলায় লড়াইয়ের জন্য আইনি অস্ত্র তৈরি করে ফেলবেন। সেই কারণেই সশরীরে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। সে-ক্ষেত্রে নথিপত্র প্রকাশ্যে আসার কোনও আশঙ্কা নেই। ওই সব নথিপত্র মামলার গুরুত্বপূর্ণ তথ্যপ্রমাণ।’’

তদন্তকারী সংস্থার অভিযোগ, শুধু যে অভিযুক্তেরা করোনা পরিস্থিতিকে হাতিয়ার করে এখনও আইনি যুক্তির মাধ্যমে আদালতের দ্বারস্থ হয়ে জিজ্ঞাসাবাদ এড়ানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তা-ই নয়। জিজ্ঞাসাবাদ এড়াতে চাইছেন অনেক সাক্ষীও।

সিবিআই-কর্তাদের বক্তব্য, অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে গরু ও কয়লা পাচারের তদন্ত চালানো হচ্ছে। পাচারের লভ্যাংশের কয়েক হাজার কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। বিদেশে টাকা পাচার

করা হয়েছে এবং পুরো বিষয়টিতে বহু প্রভাবশালী ব্যক্তির যোগাযোগের তথ্যপ্রমাণ হাতে এসেছে। কয়েক দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে বিভিন্ন প্রভাবশালী ব্যক্তি ও পুলিশকর্তাকে। কয়লা ও গরু পাচার কাণ্ডের মূল পান্ডা এনামুল হক, অনুপ মাজি ওরফে লালাকে জেরা করা হয়েছে। ওই দু’জনের ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী ও হিসেব রক্ষকদের জিজ্ঞাসাবাদ করে মিলেছে বহু নথিপত্র। লভ্যাংশের হাজার হাজার কোটি টাকা কী ভাবে, কোথায়, কার কাছে পাচার করা হয়েছে, তার হদিস মিলেছে সেই সব নথিপত্রেই।

সিবিআইয়ের দাবি, রাজ্য পুলিশের তিন ইনস্পেক্টর ২০১৫ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত মূলত আসানসোল-দুর্গাপুর ও মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন থানার দায়িত্বে ছিলেন। এখন এক জন পুরুলিয়ার একটি থানার ইনস্পেক্টর ইনচার্জ। দ্বিতীয় ইনস্পেক্টর রাজ্য গোয়েন্দা পুলিশে কর্মরত। ডায়মন্ড হারবার পুলিশের একটি থানায় রয়েছেন তৃতীয় ইনস্পেক্টর। তদন্তকারীদের দাবি, লভ্যাংশের টাকা পুলিশের মাধ্যমেই প্রভাবশালী ব্যক্তিদের কাছে পৌঁছত। সেই টাকা পৌঁছে দেওয়ার অভিযোগে বাঁকুড়া থানার আইসি অশোক মিশ্রকে গ্রেফতার করা হয়। তাঁকে জেরা করে প্রভাবশালীদের কাছে কী ভাবে টাকা পৌঁছে দেওয়া হত, সেই বিষয়ে বহু তথ্য হাতে এসেছে বলে দাবি তদন্তকারীদের। তদন্তকারীদের আরও দাবি, টাকা পৌঁছে দেওয়া হত মূলত পাচার কাণ্ডের অন্যতম পান্ডা, পলাতক বিনয় মিশ্র এবং তাঁর ভাই বিকাশের কাছে। কী ভাবে পুলিশ মারফত সেই টাকা পৌঁছত, তা অনেক তথ্যপ্রমাণ ও নথিপত্র মিলেছে। বিনয় ও বিকাশের মাধ্যমে টাকা পৌঁছত প্রভাবশালীদের কাছে। কয়লা ও গরু পাচারে রাজ্য পুলিশের কর্তাদের একাংশেরও যোগসাজশ স্পষ্ট হয়েছে বলেও দাবি সিবিআইয়ের। তারা জানাচ্ছে, বিভিন্ন পুলিশকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে নানান তথ্য হাতে এসেছে। এর মধ্যে বিকাশকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। ধৃত এনামুল সুপ্রিম কোর্টে জামিন পেয়েছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

CBI corona Coronavirus COVID-19 Coal Smuggling
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE