শূন্য থেকে শুরু করেছিলেন। সেখান থেকেই ফের শুরু করতে চান।
গরাদঘরে বসে একান্তে তারই হিসেব কষে চলেছেন শ্যামলা, রোগাটে চেহারাটা। কুণাল ঘোষ যেমন তাঁর জেলজীবনের দিনলিপি লিখে রেখেছেন ডায়েরির পাতায়, সেই প্রেসিডেন্সি জেলে বসেই রোজ ভ্যালি কর্তা গৌতম কুণ্ডুও প্রতিদিন ভরে চলেছেন ডায়েরির পাতা। সেখানে অবশ্য যতটা না দিনযাপনের ইতিবৃত্ত লেখা, তার চেয়েও বেশি রয়েছে অঙ্ক।
সম্প্রতি ঘনিষ্ঠ মহলে এমনটাই জানিয়েছেন গৌতম। বলেছেন, তিনি আইনের চোখে দোষী হলেও খুন তো করেননি। তাই, আর কত দিন সাজা খাটতে হতে পারে তাঁকে? বড়জোর আরও কয়েক বছর। তার পর? সেই হিসেব কষার কাজ এখন থেকেই শুরু করে দিয়েছেন রোজ ভ্যালির কর্ণধার। খাতায়-কলমে এখনও যিনি প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা সম্পত্তির মালিক।
কলকাতা হাইকোর্টে গৌতম আর্জি জানিয়েছেন, তাঁর বিভিন্ন সংস্থায় যাঁরা বিনিয়োগ করেছেন— তাঁদের সকলের টাকা তিনি ফিরিয়ে দিতে চান। আমানতকারীদের পাই-পয়সা ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য আদালত তাঁকে সম্পত্তি বিক্রি করার অনুমতি দিক। ঘনিষ্ঠ মহলে অঙ্ক কষে গৌতম দেখিয়েছেন, তাঁর রিয়েল এস্টেট ব্যবসায় বাজারে দেনা রয়েছে ১৬৩ কোটি টাকা। এই দেনা মানে আমানতকারীদের বিনিয়োগ করা অর্থ। আর এই রিয়েল এস্টেট সংস্থার অধীনে রয়েছে ৪ হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি। ফলে, আদালত নির্দেশ দিলে এই সম্পত্তির কিছুটা বিক্রি করেই অনায়াসে ১৬৩ কোটি টাকার দেনা শোধ করে দেওয়া যায়। তা ছাড়া, তাঁর হোটেল ব্যবসা রয়েছে। এখানে দেনা ও সম্পদ— দু’টির পরিমাণই সমান, ৪ হাজার কোটি টাকা। আদালতের নির্দেশ পেলে সম্পত্তি বিক্রি করা যাবতীয় দেনা মিটিয়ে দেওয়া যায়।
এই হোটেল-বাড়ি-অফিস-জমি বিক্রি করবেন কী করে, তারও হিসেবও সেরে রেখেছেন রোজ ভ্যালি কর্তা। ঘনিষ্ঠ মহলে জানিয়েছেন, তিনি গ্রেফতার হওয়ার আগেই রোজ ভ্যালির হোটেল কেনার জন্য লোক ঘুরঘুর করত। সেই সব হোটেল এখন নিয়মিত চলছে। ফলে, চালু বিলাসবহুল হোটেল বেচতে বেগ পেতে হবে না। লোকে টাকা নিয়ে বসে রয়েছে। শুধু কলকাতা নয়, হোটেল রয়েছে গোয়া, রাজস্থান, পোর্ট ব্লেয়ার-সহ দেশের অন্যত্রও।
এই হোটেলগুলি এখন সাময়িক ভাবে বাজেয়াপ্ত করেছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। গৌতমবাবুর আশা প্রকাশ করেছেন, আদালত নির্দেশ দিলে সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে হবে ইডি-কে। তখন তিনি অনায়াসে সম্পত্তি বিক্রি করতে পারবেন।
কিন্তু এ সবই তাঁর ভাবনার কথা। বরং রোজভ্যালি নিয়ে তদন্তের গতিপ্রকৃতি যা, তাতে তিনি দোষী সাব্যস্ত হলে তাঁর বাজেয়াপ্ত করা সমস্ত সম্পত্তি নিলামের নির্দেশ দিতে পারে সর্বোচ্চ আদালত। সম্পত্তি বিক্রি করে সেই টাকা আমানতকারীদের ফেরত দেওয়া হবে বলে ইডি অফিসারেরা জানিয়েছেন। যাবতীয় দেনা মেটানোর পর কিছু টাকা বাঁচলে তা কি ফেরত পাবেন গৌতম? ইডি অফিসারদের কথায়, ‘‘সেটা আদালতের নির্দেশের উপরে নির্ভর করবে। তিনি পেতে পারেন, না-ও পেতে পারেন।’’
আর যদি কপর্দকশূন্য হয়ে ফিরতে হয়? কী করবেন কারাবাসের পরে?
ঘনিষ্ঠ মহলে বলেছেন, দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করে চান। ব্যবসাই করবেন। তবে হোটেল নয়, অর্থলগ্নি সংস্থা তো নয়ই। অন্য ব্যবসা। এখন, গারদের ও পারে বসে তারই হিসেব-নিকেশ চলছে অহরাত্র।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy