মঞ্জুলা চেল্লুর
সাম্প্রতিক কালের বিভিন্ন মামলায় রাজ্য প্রশাসনকে তুলোধোনা করেছে কলকাতা হাইকোর্ট। বেআইনি লগ্নি সংস্থার ক্ষেত্রে রাজ্যের ভূমিকা নিয়ে এ বার কটাক্ষ করলেন হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি মঞ্জুলা চেল্লুর স্বয়ং। বৃহস্পতিবার তিনি মন্তব্য করেন, লগ্নি সংস্থা এমপিএসের আমানতকারীদের টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য গঠিত কমিটিতে নোডাল অফিসার নিয়োগ নিয়ে রাজ্য সরকার ‘নাটক’ করছে।
কেন এমন মন্তব্য?
এমপিএস নিয়ে জনস্বার্থ মামলার আবেদনকারীদের আইনজীবী শুভাশিস চক্রবর্তী জানান, ওই সংস্থায় লগ্নিকারীদের টাকা ফেরতের জন্য প্রাক্তন বিচারপতি শৈলেন্দ্রপ্রসাদ তালুকদারকে দিয়ে এক সদস্যের কমিটি গড়ে দিয়েছে প্রধান বিচারপতি মঞ্জুলা চেল্লুর ও বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর ডিভিশন বেঞ্চ। কিন্তু নোডাল অফিসার না-পাওয়ায় সেই কমিটি এখনও কাজ শুরু করতে পারেনি।
ওই কমিটিতে এক জন নোডাল অফিসার এবং এক জন অ্যাডমিনিস্ট্রেটর নিয়োগ করার জন্য হাইকোর্ট আগেই নির্দেশ দিয়েছিল রাজ্য সরকারকে। সেই নিয়োগে দেরি হতে থাকায় রাজ্যের অর্থসচিবকে গত ৪ অগস্ট আদালতে ডেকে পাঠায় ডিভিশন বেঞ্চ। রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল (এজি) জয়ন্ত মিত্র সে-দিন আদালতে জানান, নোডাল অফিসার নিয়োগের বিষয়ে তিনি বিচারপতি তালুকদারের সঙ্গে কথা বলবেন।
এমপিএসের আইনজীবী শ্রীজীব চক্রবর্তী জানান, গত ১২ অগস্টের শুনানিতে নোডাল অফিসার নিয়োগের জন্য ডিভিশন বেঞ্চের কাছে আরও সাত দিন সময় চাওয়া হয়েছিল। সেই অনুযায়ী বৃহস্পতিবার পরবর্তী শুনানির দিন ঠিক হয়।
এজি এ দিন আদালতে জানান, বিভিন্ন অর্থ লগ্নি সংস্থার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য রাজ্য সরকার ইতিমধ্যেই আইন তৈরি করেছে। রাষ্ট্রপতির অনুমোদন পাওয়ার পরে তা কার্যকর হয়েছে চলতি বছরের ১৪ মে। ওই আইন অনুযায়ী জেলায় জেলায় এক জন অতিরিক্ত জেলা জজ বিভিন্ন বেআইনি অর্থ লগ্নি সংস্থার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবেন। এজি আরও জানান, ওই আইনের কথা তিনি বুধবার রাতেই জেনেছেন। তাঁর মনে হয়েছে, বিষয়টি ডিভিশন বে়ঞ্চের নজরে আনা উচিত।
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘‘ওই আইনের কথা আমার জানা আছে। কিন্তু নোডাল অফিসার নিয়োগের নির্দেশ তো ১৪ মে অর্থাৎ আইনটি বলবৎ হওয়ার আগেই দেওয়া হয়েছিল। সরকার এখন ওই আইনের কথা বলে নাটক করছে! এটা গ্রহণযোগ্য নয়। কমিটিতে নোডাল অফিসার নিয়োগের বিষয়টি নিয়ে অবস্থান বদলাচ্ছে রাজ্য।’’
অর্থ লগ্নি সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা ছাড়া রাজ্য আর কী করেছে, জানতে চান প্রধান বিচারপতি। তাঁর কথায়, ‘‘জেলায় জেলায় যে-সব বিশেষ আদালত খোলা হয়েছে, সেখানেই অর্থ লগ্নি সংস্থার বেআইনি কাজকারবারের বিচার হবে। আর ডিভিশন বেঞ্চ কমিটি গড়ে দিয়েছে লগ্নিকারীদের টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য।’’
এজি বলেন, ‘‘আমি ওই আইনের কথা আর তুলছি না। আমার বক্তব্য প্রত্যাহার করে নিচ্ছি। আদালত যা নির্দেশ দিয়েছে, তা-ই হবে।’’
ডিভিশন বেঞ্চ জানায়, তারা নতুন নির্দেশ দেবে না। জনস্বার্থ মামলাগুলির শুনানির জন্য বিচারপতি অনিরুদ্ধ বসু ও বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীকে নিয়ে যে-বিশেষ আদালত তৈরি হয়েছে, নোডাল অফিসারের ব্যাপারে তারাই পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy