আগাছা পোড়ানোয় ধোয়ায় ঢাকল পাতিহাল। — ফাইল চিত্র।
কয়েক কাঠা জমির আগাছা জুড়ে জ্বলছে ধিকিধিকি আগুন। উঠছে ঘন কালো ধোঁয়া। সোমবার দুপুরে এমন ঘটনারই সাক্ষী রইল জগৎবল্লভপুরের পাতিহাল এলাকা। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এ দিন চাষিরা প্রায় ২৫ কাঠা জমিতে আগুন ধরিয়ে দেওয়ায় ধোঁয়ায় ঢেকে যায় এলাকা। শ্বাসকষ্ট শুরু হয় অনেকের। ব্লক কৃষি দফতরের দাবি, বারবার চাষিদের আগাছায় আগুন দেওয়া বন্ধের জন্য বোঝানো হয়েছে। এর ক্ষতিকারক দিক নিয়ে আলোচনা হয়েছে বহুবার। কিন্তু সেই উদ্যোগেও যে ফল মেলেনি, তার প্রমাণ মিলল এ দিন।
এ দিনের ঘটনা প্রসঙ্গে জগৎবল্লভপুর ব্লকের সহ-কৃষি অধিকর্তা সৌমেশ সাহা বলেন, ‘‘গত বছরের নভেম্বরেও চাষিদের বিষয়টির ক্ষতিকারক দিক নিয়ে বোঝানো হয়েছে। তারপরও তাঁরা একই কাজ করে চলেছেন। চাষিদের সচেতনতাই এই প্রবণতা থামাতে পারে।’’
জগৎল্লভপুরের পাতিহাল পঞ্চায়েতের মণ্ডলার ধারে রয়েছে ৩০০ বিঘারও বেশি একফসলি কৃষি জমি। এই জমিগুলিতে এক বার চাষ হয়। ফলে বছরের বাকি সময় তা আগাছায় ভরে থাকে। প্রতি বছরই শীতের শেষে এই আগাছা পরিষ্কার করতে আগুন লাগানো হয় বলে জানান জমির চাষিরা। তাঁরা জানান, এ দিন চাষ শুরুর জন্য জমির একাংশে ট্রাক্টর নামানো হয়েছিল। কিন্তু জঙ্গলের জন্য সেখানে কাজ করা যায়নি। তারপরই জমিতে আগুন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা।
কিন্তু এ ভাবে আগুন লাগালে তো পরিবেশের ক্ষতি। ফসলের অংশ তো বটেই, মাঠে পড়ে থাকা আবর্জনা, আগাছায় আগুন লাগানোও আইন-বিরোধী। তা হলে কেন বারবার একই কাজ করেন তাঁরা? এক চাষির দাবি, ‘‘হয়তো ধোঁয়ায় পরিবেশের ক্ষতি হয়। কিন্তু লোক দিয়ে ওই জমির আগাছা সাফ করতে যা খরচ, তাতে আর আমরা লাভের মুখে দেখতে পারব না। তাই এমন করা হয়।’’
এই ধোঁয়ার চোটে দুর্ভোগে পড়েন এলাকার বাসিন্দারা। এক প্রৌঢ় বলেন, ‘‘এমনিতেই আমার শ্বাসকষ্ট রয়েছে। তার উপরে এমন ধোঁয়ায় দমবন্ধ হয়ে যাওয়ার জোগাড়।’’ অন্য এক গৃহস্থের ক্ষোভ, ‘‘প্রথমে বুঝতে পারিনি। হঠাৎ দেখি, সব ঘরে ধোঁয়া ঢুকছে। আর ছাইও উড়ছে। দরজা-জানলা বন্ধ করেও পরিস্থিতি সামাল দিতে পারিনি।’’
বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন পরিবেশবিদ সুভাষ দত্ত। তিনি বলেন, ‘‘নাড়া (ধানের গোড়া) বা মাঠে পড়ে থাকা আবর্জনা, আগাছায় এ ভাবে আগুন ধরিয়ে দূষণ ছড়ানো শাস্তিযোগ্য অপরাধ। চাষিরা যদি এই আগাছা পচিয়ে নেন, তাহলে সেটা জৈব সারে রূপান্তরিত হবে। আর সেটা চাষের জন্য সহায়ক। চাষিদের লাগাতার বিষয়টি বোঝাতে হবে। সচেতনতা বাড়লে এই প্রবণতা কমবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy